v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-10-27 19:26:49    
লংমার্চে অংশগ্রহণকারী নারী বীর যোদ্ধার কাহিনী

cri

    ৭০ বছর আগে জাপান আক্রমণকারীদের প্রতিহত করা এবং দেশের অভ্যন্তরের সামরিক শক্তির ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন লালফৌজবাহিনী লংমার্চ করেছে । তারা প্রায় দু বছর ধরে দক্ষিণ-পশ্চিম চীন থেকে উত্তর-পশ্চিম চীন পর্যন্ত খালি পায়ে ১২ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছেন । চীনা জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করার এই দীর্ঘ অভিযানকারী দলের মধ্যে অনেক নারী যোদ্ধা ছিলেন । যাকে মানবজাতির সামরিক আশ্চর্য বলে অভিহিত করা হয় সেই দীর্ঘ অভিযানে এই সব নারী যোদ্ধারা কি ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন ? কি কারণে তারা দৃঢ়মনোবল নিয়ে ভারি গোলাগুলি উপেক্ষা করে তুষার পাহাড় ও কাদা মাটি অতিক্রম করতে এবং শেষ বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত টিকে থাকতে সক্ষম হলেন ?

    সাদা সাদা তুষার আবৃত পাহাড়, নির্জন কাদা মাটি, শীত এবং অনাহার । আমরা লাল ফৌজবাহিনীর যোদ্ধারা ইস্পাতের মতো দৃঢ় । আমরা কিছুই ভয় করি না । তুষার পাহাড়ও নত স্বীকার করে দূর থেকে আগত অতিথিদের স্বাগত জানাবে । এটা এক গানের কিছু কথা । তুষার পাহাড় ও কাদা মাটি অতিক্রম করার সময়ে লালফৌজবাহিনী গানটি প্রায় গাইতেন । তুষার পাহাড় ও কাদামাটি লংমার্চের এক সবচেয়ে দূরূহ ও কষ্টকর পথ । এখনো জীবিত আছেন এমন কয়েকজন প্রবীণ লালফৌজবাহিনীর যোদ্ধা সে সময়ের কথা স্মরণ করে বলেছেন, সে সময় ভোরবেলা থেকে রাত পর্যন্তদিন রাত তাদের প্রায় ৯০ কিলোমিটার পথ হাটতে হত ।

    ৯৩ বছর বয়সী প্রবীণ নারী লালফৌজ যোদ্ধা লিউ থিয়েনইউ বলেছেন, তুষার পাহাড়ে উঠলে ইচ্ছামতো উপত্যকার দিকে তাকাতে হত না । তাকালে নিচে পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকতো । একবার পড়লে আর খুঁজে পাওয়া যেতো না ।

    লংমার্চকালে জীবন ও মরণ সবসময় এক মিনিটের ব্যাপার । সেই অসুবিধা ও জরুরী অবস্থায় পুরুষদের মতোই নারী যোদ্ধারাও হাত-মুখ ধুতে পারতেন না , গোসল করতে পারতেন না এবং কাপড়চোপড় ছেড়ে আরামে ঘুমাতে পারতেন না । ঘরে, খড়ের স্তূপে বা খোলা মাটিতে যে কোনো জায়গায় তাদের ঘুমাতে হতো ।

    প্রবীণ নারী যোদ্ধারা কেন শারিরীক ও মানসিকতার অসুবিধা ও কষ্ট উপেক্ষা করে হাজার হাজার মাইলের লংমার্চে অংশগ্রহণ করেছেন এ সম্পর্কে তারা বলেছেন, যাতে তারা নিজেরা এবং নিজদের পরিবারপরিজন ও আত্মীয়জনরা আর অত্যাচারিত না হয় , চীন গৃহ যুদ্ধে নিমজ্জিত হবে না এবং নিজদের মাতৃভূমি জাপানী আক্রমণের দুঃসপ্ন থেকে জেগে উঠতে পারবে তার জন্যেই তারা এই দুরূহ ও বিপদ্জনক পথ বেছে নিয়েছিলেন ।

    লংমার্চে নারী যোদ্ধারা সাহসী ছিলেন । তারা পুরুষের মতো অভিযান চালাতেন । এমন কি তারা স্বেচ্ছায় প্রধান শক্তির প্রত্যাহারকে সহযোগিতা করার আবেদন করেন । লংমার্চকালে নারী স্বাধীন রেজিমেন্ট দলের নেতা ওয়াং ছুয়েনইউয়ান বলেছেন, শত্রুদের অভিভূত করার জন্যে আমাদের রেজিমেন্টের নারী অফিসার ও সৈনিকরা নিজদের লম্বা লম্বা চুল কেটে পুরুষের ছদ্মবেশে লড়াই করেছেন । গুলি শেষ হলে আমরা পাথর দিয়ে শত্রুদের মারতাম । যখন আমাদের প্রধান শক্তি সাফল্যের সঙ্গে শত্রুদের অবরোধ ভেঙ্গে দেয় তখন ১৩০০ সৈন্য বিশিষ্ট নারী রেজিমেন্টে মাত্র ৩০০ সৈন্য জীবিত ছিলেন । একবার একটি গুলি ওয়াং ছুয়েনইউয়ানের কানের লতির মধ্য দিয়ে গিয়েছিল । কিন্তু তিনি কখনো ভয় করেননি ।

     লাল ফৌজের নারী যোদ্ধারা যেমন গোলাগুলি তেমনি অশেষ অনাহারের সম্মুখীন হতেন । তুষার পাহাড়, কাদা মাটির কোথায়ও খাবার খুঁজে পাওয়া যেতো না , এমনকি সেখানকার পানিও বিষাক্ত ছিল । এই অবস্থায় ঘাস, গাছের পাতা এমনকি চামড়ার বেল্টও খাবারের জিনিস হিসেবে খেয়ে ফেলা হত । প্রবীণ লালফৌজ যোদ্ধা লিউ থিয়েনইউ বলেছেন, সেই সময় "জীবিত থাকতে হবে , অবশ্যই জীবিত থাকতে হবে" কথাটা আমাদের মনের এক সবচেয়ে প্রবল ইচ্ছা ছিল । সবাই মনে মনে ভাবতেন , আমরা অবশ্যই বিজয়ের দিন দেখব ।

    খাবার ও পরার অভাব আমাদের নারী লালফৌজ যোদ্ধাদের অগ্রগতির পদক্ষেপ থামাতে পারেনি । তখন মাত্র ৯ বছর বয়সের প্রবীন যোদ্ধা সু লি স্মরণ করে বলেছেন, তার খাবার শেষ হওয়ার পর অনেক বোন নিজের সিদ্ধ ময়দা তাকে দিয়ে দিতেন । অন্য নারী বোনদের সাহায্য ও সমর্থনে তিনি আজ পর্যন্ত জীবিত থাকতে পেরেছেন ।

    লংমার্চের সময়ে বহু নারী যোদ্ধার বয়স মাত্র বিশের কাছাকাছি ছিল । তারা কঠোর অভিযান ও যুদ্ধের মধ্য দিয়ে নিজদের সুন্দর যৌবন কাটিয়েছেন । প্রবীন লালফৌজ যোদ্ধা ওয়াং তিনকো বলেছেন , লংমার্চ কঠোর ও কষ্টকর , তবে আনন্দেরও ছিল ।

    মাননীয়া বৃদ্ধা ওয়াং তিনকোর বয়স ৯৫ বছর । তার স্বাস্থ্য অত্যন্ত ভাল । তিনি বলেছেন, লংমার্চের প্রক্রিয়ায় আনন্দ ও গানের আওয়াজের অভাব ছিল না । তিনি এখনো সেই সময়ের গান পছন্দ করেন । তিনি বলেছেন , লংমার্চ শুরু হওয়া মাত্র আমাকে লালফৌজের অপেরা দলে পাঠানো হয় । অপেরা দলের অবস্থা ভাল নয় । সরন্জাম ও অপেরার পোশাক ছিল না । কিন্তু স্থানীয় জনসাধারণের সাহায্যে আমাদের অপেরা দল সাফল্যের সঙ্গে অপেরা ,নাচগান , নাটক পরিবেশন করেছে । আমরা যেখানে যাই সেখানে গান ও হাসি বয়ে নিতাম ।

     তিনি বলেছেন, আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে বিপ্লব করি । বিশ্বস্ততার সঙ্গে পার্টিকে অনুসরণ করি । নির্ভয়ের সঙ্গে পাহাড় ও নদী অতিক্রম করি । গান গেয়ে সামনে অগ্রসর হই ।

    লালফৌজবাহিনী দুরূহ লংমার্চকে ভয় করে নি। হাজার হাজার নদী ও শতশত পাহাড় আমাদের অতিক্রমের অপেক্ষায় থাকতো।