মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো নগর হচ্ছে বিশ্বের জনবহুল মহানগরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফেডারেল অঞ্চল এবং আশেপাশের অঞ্চলসহ মেক্সিকো নগরের জনসংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। ঘন বসতি, অবিস্তীর্ণ সড়ক আর ৬০ লাখ নানা রকম গাড়ি নিয়ে মেক্সিকোর পরিবহন বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে । গাড়ি করে বাইরে গেলে দু'এক ঘন্টা ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু মেক্সিকোর অধিকাংশ শহরবাসীরা পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। কারণ মেক্সিকোয় উন্নত পাতাল রেল নেটওয়ার্ক আছে।
মেক্সিকোর প্রথম পাতাল রেল লাইন ১৯৬৭ সালে নির্মিত হয়। এর পর ৩০ বছরে মেক্সিকোর পাতাল রেল দ্রুত বিকশিত হয়েছে। এখন উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে মেক্সিকোর বিশাল পাতাল রেল নেটওয়ার্ক প্রথম সারিতে আছে। মেক্সিকো শহরে ১১টি পাতাল রেল লাইন এবং ১৭৫টি স্টেশন আছে। এর মোট দৈর্ঘ্য ২০২ কিলোমিটার। প্রতিদিন ৪৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেন। এই সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সের মতো শিল্পোন্নত দেশের বড় শহরের পাতাল রেল ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করলেও পিছিয়ে থাকবে না। এখন মেক্সিকোর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পাতাল রেল স্টেশনের ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত উচু। বিভিন্ন লাইন চার দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। পাতাল রেল পরিচালনা বিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যাত্রীদের সুবিধার জন্য ভবিষ্যতে নতুন পাতাল রেল লাইন নির্মাণের সময় কেন্দ্রীয় অঞ্চল আর অন্যান্য অঞ্চলের পাতাল রেল লাইনের সংযুক্ত সমস্যা সমাধানে প্রাধান্য দেয়া হবে। মেক্সিকোর প্রত্যেক পাতাল রেলগাড়িতে ৬ থেকে ৯টি কামড়া থাকে। প্রত্যেক কামড়ায় ১৭০জন যাত্রীর আসন আছে। ব্যস্ততার সময় প্রতি ১ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড একটি পাতাল রেলগাড়ি আসে। অন্য সময়ে প্রতি ২ মিনিট ২৫ সেকেন্ড একটি পাতাল রেলগাড়ি আসে। এই ব্যবস্থার ফলে রেলগাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী থাকে না এবং স্টেশনেও যাত্রীর ভীড় থাকে না।
মেক্সিকোর পাতাল রেল চালু হওয়া থেকে এ পর্যন্ত টিকিটের দাম সবসময়েই খুব সস্তা। এখন একটি টিকিটের দাম ২ পিস্টার অর্থাত্ ১৭ টাকার সমান। একটি টিকিট কিনে স্টেশনে প্রবেশ করলে বিভিন্ন লাইনের মধ্যে ইচ্ছামতো রেলগাড়ি বদল
করা যায়। পাতাল রেল পরিচালনা বিভাগের সুত্রে জানা গেছে, আসলে মেক্সিকোর পাতাল রেলগাড়িতে প্রত্যেক যাত্রীর জন্য যাতায়াতের গড়পড়তা ব্যয় প্রায় ৫ পিস্টার অর্থাত্ ৩৫ টাকার মতো। টিকিটের অতিরিক্ত অংশ পৌর সরকার বহন করে। মেক্সিকো সরকার পাতাল রেলের জন্য প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি পিস্টার দেয়। এছাড়া, মেক্সিকো পৌর সরকারের নিয়ম অনুযায়ী , সকল ৬০ বছর বয়সের উপর বৃদ্ধবৃদ্ধা ও পাঁচ বছর বয়সের নিচের শিশু এবং আংশিক বিকলাংগ ব্যক্তিবিনা পয়সায় পাতাল রেলে যাতায়াত করতে পারেন। তারা প্রয়োজনীয়সার্টিফিকেট নিয়ে সংশ্লিষ্ট নয়টি কার্যালয়ে গিয়ে আবেদন করতে পারেন। এরপর তারা বিনা পয়সার একটি টিকিট কার্ড পান। আরো বেশি লোক পাতাল রেলের সুবিধা উপভোগ করার জন্য এই ব্যবস্থাগুলো চালু হয়েছে। অন্যান্য দেশের পাতাল রেলের তুলনায় মেক্সিকোর পাতাল রেলের সাজসরঞ্জাম অপেক্ষাকৃত সাদামাঠা। কিন্তু মেক্সিকোর শহরবাসীরা এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। কারণ দ্রুত ও সুবিধাজনক পরিবহন পরিসেবা ও সস্তা দাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং মেক্সিকোর বহু নিজস্ব গাড়ির অধিকারী মধ্যবিত্ত শ্রোণী অফিসে যাতায়াতের জন্যও পাতাল রেল বাছাই করেন।
মেক্সিকোর পাতাল রেলের নানা সুবিধাজনক পরিসেবা সত্যি প্রশংসনীয়। সেখানে প্রত্যেক পাতাল রেল লাইন ভিন্ন রং দিয়ে পৃথক করে। যেমন তিন নং লাইন সবুজ রং, নয় নং লাইন কফি রং, সাত নং লাইন লালচে কমলা রং। প্রত্যেক স্টেশনে একটি বিশেষ প্রতীক আছে। এর মধ্যে প্রাণী ও উদ্ভিদের চিত্র আছে, বিখ্যাত স্থাপত্যের চিত্র আছে, ঐতিহাসিক নামকরা ব্যক্তিদের চিত্র আছে। এই চিত্রগুলোর স্টেশনগূলোর নামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। যাত্রীরা দূর থেকে দেখে জায়গাটি চিনতে পারবেন। এটা বিদেশী যাত্রীদের জন্য ভাল সুবিধা এনে দিয়েছে। সুন্দর চিত্রগুলো স্টেশনের জন্য কিছু চারুশিল্পের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। মেক্সিকো শহরের প্রতিটি পাতাল রেলগাড়িতে নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষ কামরা আছে। সেখানে কেবল নারী ও ১২ বছর বয়সের নিচে শিশুরা বসতে পারেন। প্রতি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বিশেষ কামরা প্রয়োগের ব্যাখ্যা লেখা থাকে। পাতার রেল কোম্পানির কর্মচারীরা বিভিন্ন স্টেশনে পরিভ্রমণ করেন। জানা গেছে, বিশেষ কামরা প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মেক্সিকো শহরের খারাপ নিরাপত্তা অবস্থার মোকাবেলায় নারী ও শিশুদের রক্ষা করা এবং ব্যস্ততার সময় যাত্রী বেশি হলে নারী ও শিশুদের কষ্ট এড়ানো। এই বছরের জুন মাস থেকে মেক্সিকোর পাতাল রেল সকল যাত্রীদের জন্য আগাম পরিসেবা চালু হয়। এই ব্যবস্থা ব্যস্ততার সময় যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেনার সময় কমাবে।
|