চেচিয়াং চীনের দক্ষিণপূর্ব উপকূলের একটি প্রদেশ। চেচিয়াংয়ের ব্যবসায়ীরা প্রাচীন কাল থেকে দেশের সর্বত্র ব্যবসা চালাতেন। এটা তাদের রেওয়াজ । আজ শুধু সারা দেশ নয়, তাঁরা সারা বিশ্বের দিকে নজর রাখছেন।
আংগোলার রাজধানী লুয়ান্ডা হলো আটল্যাণ্টিক মহাসাগরের তীরে এক সুন্দর শহর। স্থানীয় লোকেরা হয়ত ভাবতেই পারেন নি যে, অদূর ভবিষ্যতে তারা চীনাদের তৈরী নতুন বাড়িতে থাকতে পারবেন। এ সব নতুন বাড়ি তৈরি করছে চেচিয়াংয়ের হুয়াফেং নির্মাণ কোম্পানি। এটি চেচিয়াং প্রদেশের নিংপো শহরের এক বেসরকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ২০০৬ সালে হুয়াফেং কোম্পানি আংগোলার একটি রিয়াল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী রাজধানী রুয়ান্ডায় ৫.৩ হেক্টর জমিতে আবাসিক বাড়ি এবং অফিসভবন নির্মাণ করবে। হুয়াফেং কোম্পানির প্রেসিডেণ্টের এসিস্টেণ্ট মাদাম ছিন চুনলি জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে মোট পুঁজিবিনিয়োগ হবে ১২ কোটি মার্কিন ডলার । তিনি বলেছেন,
" আমাদের কোম্পানি সবেমাত্র আংগোলার এই প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আমরা থাইল্যান্ডেও প্রকল্প পেয়েছি। গত বছর থেকে সেখানে কাজ শুরু করেছি এবং প্রকল্পের এক বড় অংশ শেষ করেছি। একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, তা সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যাই হোক না-কেন, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী এক দিকে দেশের বাজার এবং অন্য দিকে আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ করবে।"
আজ চেচিয়াংয়ের অধিক থেকে অধিকতর ব্যবসায়ীরা সারা বিশ্বে ব্যবসা চালাতে যাচ্ছেন। গত বছর চেচিয়াংয়ের কোম্পানিগুলো বিদেশে ৮০ কোটি মার্কিন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। প্রধানত বস্ত্র, পোষাক, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, রসায়ন, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন।
চীন সরকারও তাদের সমর্থন ও উত্সাহ দেয়। চেচিয়াং প্রদেশের ভাইস গভর্নর চোং শান বলেছেন,
"সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চেচিয়াং প্রদেশিক সরকার বিদেশে যাওয়ার নীতি অনুসরণ করে এবং চেচিয়াংয়ের কোম্পানিগুলোকে বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগ করতে উত্সাহ দেয়। অনেকে বিদেশে প্রকল্পের ঠিকা নিয়েছে, শ্রম-সহযোগিতা চালিয়েছে এবং লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বিদেশে চেচিয়াং ব্যবসায়ীদের স্থাপিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং ব্যবসার পরিমাণ চীনের অন্যান্য প্রদেশের চেয়ে বেশি।"
চেচিয়াংয়ের বেসরকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিদেশে যাওয়ার আরেকটি লক্ষ্য হলো বিদেশে তাদের কোম্পানির সুনাম ছড়িয়ে দেয়া। চেচিয়াং প্রদেশের ই'ওয়ান বাণিজ্য কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার লাই ছাংতা মনে করেন, তাঁর কোম্পানি এখনও বড় নয়, তবুও তিনি জার্মানিতে কারখানা স্থাপন করতে চান। তিনি বলেছেন,
"সেখানে কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের সুনাম ছড়িয়ে দিতে পারি, আমাদের ট্রেডমার্ক ইউরোপ মহাদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। আমাদের কোম্পানি নিংপো শহরে খুবই বিখ্যাত, কিন্তু শুধু নিংপো শহরে যথেষ্ট নয় , বরং সারা বিশ্বে যেতে হবে।"
চেচিয়াং প্রদেশের সঙ্গে ব্যবসা চালানোর দায়িত্ব পালনকারী নেদারল্যান্ডের বাণিজ্যক কর্মকর্তা হাকম্যান মনে করেন, চেচিয়াংয়ের কোম্পানিগুলোর উচিত বিদেশের বাজারে পণ্য বিক্রী এবং ট্রেডমার্ক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আরও বেশি মনোযোগ দেয়া, তা'হলেই কেবল অভিজ্ঞতা ও মুনাফা অর্জন করা যাবে। তিনি বলেছেন,
"আসলে চেচিয়াংয়ের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অনেক পণ্য উত্পাদন করেছে, যেমন , নিত্য-ব্যবহার্য জিনিসপত্র,এমনকি মটরগাড়ি। এ সব পণ্যই এখন ইউরোপে রপ্তানী করা হয়। কিন্তু চীনা কোম্পানিগুলো রপ্তানীর পর বাকী কাজ খুব কম করে। ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা বাকি কাজগুলো করে থারেন। চেচিয়াংয়ের ব্যবসায়ীদের উচিত বিদেশে বেশি যাওয়া এবং দেখা, সেখানে কি কি ঘটেছে। নেদারল্যান্ডে তাদের বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে । শুধু পণ্য উত্পাদন এবং রপ্তানী নয়, বরং বাজারে বিক্রয়ের গোটা প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে এবং নিজেদের ট্রেডমার্ক আর পণ্য বিক্রয়ের প্রণালী প্রতিষ্ঠা করতে হবে । "
হাকম্যান মনে করেন, চেচিয়াংই চীনের বেসরকারী অর্থনীতি সবচেয়ে উন্নত প্রদেশগুলোর অন্যতম । নেদারল্যান্ড বরাবরই চেচিয়াং ব্যবসায়ীদেরকে নেদারল্যান্ডে পুঁজিবিনিয়োগ করতে আমন্ত্রণ করতে আগ্রহী।
শুধু শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং ঠিকা নেয়া নয়, চেচিয়াং কোম্পানিগুলো বিদেশে তাদের গবেষণাকেন্দ্রও স্থাপন করছে। চেচিয়াং প্রদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের উপমহাপরিচালক মাদাম লুও ওয়েইহোং বলেছেন,
"আমাদের চেচিয়াং প্রদেশে প্রতিভাবান ব্যক্তির সংখ্যা যথেষ্ট নয়। এটা আমাদের দুর্বলতা। বর্তমান যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার প্রধান শক্তি। এখন আমরা এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পর্বে প্রবেশ করেছি। আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উচিত উন্নত মানের প্রযুক্তি আয়ত্ত করা। আমাদের সরকারের উচিত প্রযুক্তির উন্নয়ন আর উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করতে এবং গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করতে আরও বেশি সমর্থন ও উত্সাহ দেয়া ।"
তবে বিদেশের অবস্থার সঙ্গে সুপরিচিত না হওয়ার কারণে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। চীন থেকে পুঁজি বিনিয়োগ আকর্ষণ বিষয়ক জার্মানি সরকারের পুঁজিবিনিয়োগ ত্বরান্বিতকরণ কমিশনের প্রধান প্রতিনিধি মাদাম থোং হুয়া বলেছেন,
" জার্মানির বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সুপরিচিত হতে হবে,। নইলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বাধা পাবে। আমরা আশা করি, পুঁজি বিনিয়োগের আগে নানা তথ্য জেনে নিতে হবে এবং সমীক্ষা করতে হবে । জার্মানির আইন ব্যবস্থা খুবই উন্নত এবং সম্পূর্ণ, জার্মানির ট্রেড ইউনিয়ন খুবই বলিষ্ঠ। এ সব উপাদান পুরোপুরি বিবেচনা করতে হবে । নইলে সমস্যা ও বাধার সম্মুখীন হতে বাধ্য ।"
চেচিয়াং ব্যবসায়ীদের আশা এই যে, বিদেশে পুঁজিবিনিয়োগে আমাদের এবং বিদেশীদের উভয়ের উপকার হবে।
|