রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত ২৫ অক্টোবর এক বেতার ও টিভির সরাসরি সম্প্রচার অনুষ্ঠানে পুনরায় ঘোষণা করেছেন , তিনি তৃতীয়বারের মত আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন না । তিনি বলেছেন , জনসাধারণের আস্থার ওপর নির্ভর করে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার পরও তিনি তাঁর প্রভাব খাটাতে পারবেন যাতে দেশের নিরন্তর বিকাশ নিশ্চিত করা যায় ।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হবে । এখনো আরো এক বছরেরও বেশি সময় বাকী থাকলেও রাশিয়ায় রাজনৈতিক পরিস্থিতির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই যে, পুটিন তৃতীয়বারের মত আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন কি না । গত কয়েক দিন রাশিয়ার রাজনৈতিক মহল ও জনসাধারণ এ সম্পর্কে নানা জল্পনা-কল্পনা করছে । তাদের মধ্যে অনেকেই আশা প্রকাশ করেছেন যে, পুতিন আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবেন । রাশিয়ায় আবার কেউ কেউ রুশ সংবিধানের সংশ্লিষ্ট বিধি সংশোধন করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন যাতে পুটিন তৃতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, রাশিয়ার রাজনৈতিক মহল ও জনসাধারণ তৃতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিনের দাঁড়ানোর ব্যাপারে যে আবেদন জানিয়েছেন , তার পেছনে কারণ রয়েছে । ২০০০ সালে পুতিন রুশ প্রেসিডেন্ট পদে নিযুক্ত হওয়ার পর ৬ বছরের মধ্যে রাশিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে । রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় স্বার্থকে সবার ওপর রাখা এবং একটি বৃহত শক্তি হিসেবে রাশিয়ার মর্যাদা পুনপ্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে পুতিনের অনুসৃত নীতি রাশিয়ার রাজনৈতিক মহল ও জনগণের সম্মতি ও সমর্থন লাভ করেছে । রাশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও স্থিতিশীল রয়েছে । রাশিয়ার সংসদ ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে সংঘাতের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও অবসান ঘটেছে । অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ১৯৯৯ সালের পর রাশিয়ার জি ডি পি একটানা ৭ বছর ধরে বেড়ে চলেছে । রাশিয়ার বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বরাবরই ৭ শতাংশ বজায় রয়েছে । মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলারেরও বেশি হয়েছে । রুশ নাগরিকদের বেতন ও অবসরকালীন ভাতা বেড়েছে । তাছাড়া রাশিয়া মোটামুটিপ্রাক্তন সোভিয়েত ইউয়ন সময়কালের বৈদেশিক ঋণ সহ সমস্ত বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে সক্ষম হয়েছে ।
জনসাধারণের আবেদনের মুখে পুতিন ২৫ অক্টোবর তাদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন , আমি আমার কাজ ভালোবাসলেও সংবিধান আমাকে তৃতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার দেয় নি । এর আগেও পুতিন বেশ কয়েকবার স্পস্ট ভাষায় বলেছেন , রাশিয়ার স্থিতিশীলতা কোনো ব্যক্তি বিশেষের ওপর নয় , সংবিধানের ওপর স্থাপন করা উচিত । তিনি জোর দিয়ে বলেছেন , সংবিধানে লিপিবদ্ধ প্রেসিডেন্টের কার্যমেয়াদ সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর সংশোধন করা উচিত নয় । কেন না , সংবিধানের সংশোধন রাষ্ট্রের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর । তিনি বলেছেন , তাঁর দায়িত্ব হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে ক্রেমলিন প্রাসাদে বসা নয় , বরং দেশের দীর্ঘস্থায়ী বিকাশের জন্যে অনুকুল অবস্থা সৃস্টি করা । তিনি মনে করেন , সুদক্ষ ও বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন তরুণদের দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করা উচিত । তিনি নিজের যথাযথ স্থান খুঁজে বের করতে পারবেন । তার বক্তব্য থেকে বোঝা যায় , পুতিন তৃতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন কি না , সেই প্রশ্নে অনিশ্চয়তার আর কোনো অবকাশ নেই ।
বিশ্লেষকরা বলেছেন , যদিও পুতিন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন , তিনি তৃতীয়বারের মত আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন না , তবুও নিসন্দেহে আগামী কয়েক বছরে , এমন কি আরো দীর্ঘ সময় ধরে তিনি রাশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে থাকবেন । তিনি নিজেও তা অস্বীকার করেন না । এ বেতার ও টিভি সম্প্রচার অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন , প্রেসিডেন্ট পদে বহাল না থাকলেও আমার নিজের স্বার্থের অন্বেষণ না করলে একজন রাজনীতিক হিসেবে আমি সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস - জনসাধারণের আস্থা পেতে সক্ষম হবো ।
|