ইরান এখনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা বন্ধ করতে অস্বীকার করছে । এখনো অধিকাংশ জনমত মনে করে যে , ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত । অথচ আজও অনেকে মনে করে যে , কূটনৈতিক উপায়ে ইরানের পরমাণু সমস্যা সমাধান করা উচিত । তাই এ সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চত রয়েছে ।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সিয়ান মাইকমাক গত মংগলবার প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন , ইরান এখন সার্বিকভাবে তার পরমাণু পরিকল্পনা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । এর প্রেক্ষাপটে জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উচিত ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা । গত সোমবার মাইকমাক বলেছেন , যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেন ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদের কাছে পেশ করেছে । তবে এ সম্পর্কে বিভিন্ন পক্ষ এখনো একমত হয় নি । যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করেছে যে, এ সম্পর্কে একমত হওয়ার জন্যে হয়তো কয়েক সপ্তাহ লাগবে ।
এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবে সতর্ক দিয়ে বলা হয়েছে , যদি ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা থেকে বিরত না থাকে , তাহলে ইইউ ইরানের বিরুদ্ধে সীমিত নিষেধাজ্ঞ আরোপের ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন দিতে বাধ্য হবে । অথচ সংগে সংগে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন , ইরানের বিরুদ্ধে শাস্তি দেয়ার জন্যে এ পদক্ষেপ নেয়া হবে না । নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্য হবে ইরানের ওপর চাপ প্রয়োগ করে তাকে আলোচনার টেবিলে ফিরে যেতে বাধ্য করা । এটি ইরানের পরমাণু সমস্যায় ফ্রান্সের সবসময়ের অভিমত । এ অভিমতের পরিবর্তন হয় নি । তিনি জোর দিয়ে বলেছেন , ইরানের সংগে আলোচনার দরজা এখনো বন্ধ হয় নি ।
স্পস্টতই রাশিয়া এখনো কূটনৈতিক উপায়ে ইরানের পরমাণু সমস্যা সমাধানের পক্ষপাতী । রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী সেরগি লাভরভ গত সোমবার বলেছেন , ইরান পরমাণু সমস্যা সংক্রান্ত আলোচনা আবার শুরু করার জন্যে রাশিয়া সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে । তিনি মনে করেন যে , এ রকম আলোচনা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা এখনো রয়েছে । এর আগে তিনি বলেছেন , ইরানের পরমাণু পরিকল্পনার প্রতি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষে একান্ত প্রয়োজন । তবে এ প্রতিক্রিয়া যথাযথ হওয়া উচিত । এ প্রতিক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার প্রতিবেদনকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে । আজ পর্যন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় নি , ইরান আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকী সৃস্টি করেছে ।
অথচ ইরানের মনোভাব এখনো অনমনীয় রয়েছে । আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার মহাপরিচালক এল বারাদি সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন , ইরান ইতোমধ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের এক নতুন ধরণের সরঞ্জামের পরীক্ষা শুরু করেছে । এ সরঞ্জামের কল্যাণে ইরানের সমৃদ্ধইউরেনিয়ামের উত্পাদন দ্বিগুণ বাড়বে । জানা গেছে , ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদি নেজাদ গত সোমবার আবার ঘোষণা করেছেন , কয়েকটি দেশ ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকী দিলেও পরমাণু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সমস্যায় ইরান কোনোমতেই পিছ পা হবে না । ইরান সরকারের মুখপাত্র গোলাম হোসেন এলহামও একই দিন বলেছেন , পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে ইরানের এক অবাঞ্ছিত অধিকার । তবে ইরান আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোতে পরমাণু সমস্যা সংক্রান্ত আলোচনা চালাতে ইচ্ছুক ।
ইউরোপের জনমত মনে করে যে, ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে মার্কিন প্ররোচনা ছাড়া এ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এখনো আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পরমাণু সমস্যা সমাধানের ইচ্ছা প্রকাশ করছে ।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্যে জোরেসোরে প্রচেষ্টা চালালেও তত্পরতা নেয়ার ব্যাপারে সে নিজের জন্যে যথেষ্ট অবকাশ রেখেছে ।
|