সবাই বলে যে চীনা ভাষা খুব কঠিন , তবে আমি তা চ্যালেঞ্জ করতে চাই । এ্যাঙ্গোলার ছাত্রী ব্লান্কা সংবাদদাতাকে তার চীনে লেখাপড়ার গল্প বলেছেন। চীনে ৯ বছরের লেখাপড়ার সময় তিনি মন থেকে চীন ও চীনা ভাষাকে পছন্দ করেছেন । যদিও এখন তিনি মিসরে থাকেন , তবে ব্লান্কার মনে পরিবারের সঙ্গে আবার চীনে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন আছে ।
১৯৯৬ সালে ২৪ বয়সী ব্লান্কা এ্যাঙ্গোলার রাজধানী লুয়ান্ডা থেকে চীনে লেখাপড়া করতে আসেন । তখন ব্লান্কা চীন সম্পর্কে কিছুই জানতেন না । তিনি চীনের বিখ্যাত কুংফু সিনেমা তারকা লি সিয়াও লুংয়ের সিনেমা দেখতে খুব পছন্দ করতেন , তাই তখন তার ধারনা ছিল চীনারা সবাই কুংফু পারে । ব্লান্কার সঙ্গে আরো ১০ জন এ্যাঙ্গোলান ছাত্রছাত্রী চীনে এসেছিলেন । তাদের চীনা জীবন চীনের থিয়েন চিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় । কিন্তু অল্প সময়ের পর অন্য ১০ জন ছাত্রছাত্রী এ্যাঙ্গোলায় ফিরে যান , কারণ তাদের মতে হল চীনা ভাষা অত্যন্ত কঠিন । শুধু ব্লান্কা যান নি এবং থিয়েন চিন বিশ্ববিদ্যালয়ে দু'বছর লেখাপড়া করেছেন ।
চীন সম্পর্কে আরও জানার জন্য ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্লান্কা দক্ষিণ চীনের সিয়া মেন শহরের সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান । ফ্লাইট থেকে নামার সময় থেকেই সিয়া মেনের সুন্দর সুন্দর দৃশ্য ব্লান্কাকে আকর্ষণ করে । সে বছর থেকে ব্লান্কা সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ বছরের জন্য লেখাপড়া করতে শুরু করেন । তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রচার ও টি ভি বিষয়ে ব্যাচালার ও মাস্টার ডিগ্রী নেন ।
মজার কথা হল , সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সঙ্গে প্রথম পরিচিত মানুষ , মিসর থেকে চীনে লেখাপড়া করতে আসিলাভ পরে তার স্বামী হয়েছেন । আসিলাভ ১৯৯৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে চীনে লেখাপড়া করতে শুরু করেন । তিনি প্রথমে পেইচিংয়ের ভাষা ইন্সটিটিউটে চীনা ভাষা শিখেছেন , পরে তিনি সিয়ান মেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়ে পরিসংখ্যান বিষয়ে মাস্টার ও ডকারেট ডিগ্রী লাভ করেন । ২০০২ সালের শেষে ব্লান্কা ও আসিলাভ এ্যাঙ্গোলায় গিয়ে বিয়ে করেন । পরে তারা লেখাপড়া শেষ করার জন্য একসঙ্গে সিয়ান মেনে ফিরে আসেন । তাদের বিয়ে হওয়ার দু'বছর পর অর্থাত্ ২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে তাদের ছেলে আবুদুল্লাহ সিয়ামেনে জন্ম গ্রহণ করে । সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্লান্কার বন্ধু ব্লান্কার ছেলেকে এক চীনা নাম দিয়েছেন ,তা হল ---আ দু । এই নাম বাচ্চার আসল নামের উচ্চারণের সঙ্গে মিল আছে ।
ব্লান্কার জন্য চীনে তার লেখাপড়া এবং চীনা জীবন যেন স্বপ্নের মত । ব্লান্কা সংবাদদাতাকে বলেছেন , তাঁর মাতৃভাষা পর্তুগীজ , তবে তাঁর স্বামী আসিলাভের মাতৃভাষা হল আরবী । তিনি আর স্বামী আসিলাভের পরিচয় , ভালোবাসা এবং বিয়ের ক্ষেত্রে চীনা ভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে , যেন সেঁতুর মত এই দু'জনকে যুক্ত করেছে ।
২০০৬ সালের মার্চ মাসে ব্লান্কা স্বামীর সঙ্গে মিসরে ফিরে গিয়েছেন । আসিলাভ মিসরের সুবিখ্যাত মানসুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিষয়ের শিক্ষক হয়েছেন। এ দিকে ব্লান্কা বাসায় স্বামী ও শিশুকে যত্ন নেন । ব্লান্কা চীনা ভাষায় বলেছেন যে , আমি চীনের কথা মনে পড়ে । আমার সিয়ান মেনের কথাও মনে পড়ে । আমার সত্যিই চীনে ফিরে যেতে চাই , চীনা বন্ধুদের সঙ্গে চীনা ভাষায় আলাপ করতে চাই এবং চীনা টি ভি নাটক দেখতে চাই । ব্লান্কা এখন চীনে একবার ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করছেন । তিনি বলেছেন , তিনি আশা করেন তাঁর স্বামী আসিলাভ চীনে এক ভালো চাকরি খুঁজে বের করে তাঁর পরিবার আবার চীনে ফিরে যেতে পারবে ।
ব্লান্কা ও আসিলাভ সংবাদদাতাকে বলেছেন , চীন সরকার তাঁদেরকে যে বৃত্তি দিয়েছে , তাঁরা এর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন । চীনা মানুষের আন্তরিক সাহায্য তাঁদের মনেও গভীর ছাপ ফেলেছে ।
ব্লান্কা বলেছেন , এ্যাঙ্গোলার জনগণের কাছে চীনারা খুব বন্ধুত্বপূর্ণ । আরো বেশি চীনারা এ্যাঙ্গোলায় গিয়ে ব্যবসা করেন । চীন এ্যাঙ্গোলাসহ আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গেও বন্ধুত্ব করে । তিনি আশা করেন আফ্রিকা-চীন জনগণের মৈত্রী সুদীর্ঘ হবে ।
আসিলাভ বলেছেন , আরো বেশি মিসরীয়রা চীন সম্পর্কে জানতে চান এবং চীনে ব্যবসা করেন । চীনে লেখাপড়া করেছিলেন এ তথ্য জানিয়ে অনেক ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠান তাঁর কাছে থেকে চীন সম্পর্কিত তথ্য জিজ্ঞেস করে । তিনি প্রায় আফ্রিকায় চীনের একজন মুখপাত্র হয়েছেন ।
|