v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-10-25 13:37:27    
মাদক-নিরাময়ীরা এখান থেকে সমাজে ফিরে যাবে

cri
    মাদক হচ্ছে সমাজের ক্ষতিকর ও জীবন-বিনাশী জঘণ্য দানব স্বরূপ । মাদক-নিরাময় কেন্দ্র হচ্ছে জঘণ্য দানবের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা এবং ধ্বংসপ্রায় জীবন ফিরিয়ে আনার স্থান । দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের রাজধানী খুয়েন মিং শহরে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মাদক-নিরাময় কেন্দ্র- খুন মিং বাধ্যতামূলক মাদক -নিরাময় কেন্দ্র । ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এই কেন্দ্র স্থাপিত হয় । তখন গোল্ডেন ট্রায়েঙ্গেল এলাকায় মাদক দ্রব্যের ব্যাপক প্রচলন ছিল । এই মাদক-নিরাময় কেন্দ্র বাধ্যতামূলক চিকিত্সা , বাধ্যতামূলক মাদক-নিরাময় ও স্বেচ্ছাচারী মাদক নিরাময় এলাকায় বিভক্ত । প্রতি বছর এই কেন্দ্রে ৬ হাজারেরও বেশি মাদক আসক্তদের চিকিত্সার ব্যবস্থা করা যেতে পারে । চীনের সবচেয়ে আগে স্থাপিত মাদক-নিরাময় কেন্দ্র হিসেসে প্রতিষ্ঠানটি অনেক মাদক আসক্তকে মাদকের হাত থেকে মুক্ত করেছে ।

    যখন আমাদের সংবাদদাতা খুন মিং বাধ্যতামূলক মাদক-নিরাময় কেন্দ্রে প্রবেশ করলেন , তখন তিনি দেখতে পেলেন , প্রায় গ্রীষ্মমন্ডলের সবুজ বৃক্ষরাশি , নীল ও পরিষ্কার হ্রদ এবং শান্ত ও মনোরম ছোট সেতু । তিনি যেন একটি সুন্দর বাগানে প্রবেশ করলেন । সেখানে উচুঁ উচুঁ দেয়াল নেই , বৈদ্যুতিক জাল ও লোহার জানালাও নেই । কর্মীদের হাতে কোনো হাতিয়ার নেই । কাজেই সেখানে বলপ্রয়োগের কোনো নামগন্ধও নেই ।

    গত দশ বারো বছরের উন্নয়নের মাধ্যমে খুন মিং বাধ্যতামূলক মাদক-নিরাময় কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃত খুয়েন মিং মাদক-নিরাময়ের নমুনা গড়ে ওঠেছে । এই নমুনার মর্ম কথা হচ্ছে ওষুধ দিয়ে মাদক নিরাময় করা , মানসিক চিকিত্সা করা , শ্রম দিয়ে মাদক নিরাময় , মানুষকে মর্যাদা দিয়ে মাদক আসক্তদের মাদকের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করা । এই নমুনার লক্ষ্য হচ্ছে মাদক নিরাময়কে সমাজের সংগে যুক্ত করা যাতে মাদক নিরাময়ীরা সুষ্ঠু মন নিয়ে সমাজে ফিরে যেতে পারে ।

    সমাজের সংগে বাধ্যতামূলক মাদক-নিরাময় কেন্দ্রের সংযুক্তিকরণের তাত্পর্য রয়েছে । মাদক নিরাময়ীদের সমাজে ফিরে যাওয়ার আগে একটি দক্ষতা লাভ করতে হবে যাতে সমাজে ফিরে তারা বেঁচে থাকতে পারে । তাদের এক রকম দক্ষতা না থাকলে মাদক-নিরাময় কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে গেলেও সমাজ সহজে তাদের গ্রহণ করতে পারে না । তাদের হাতে কাজ না থাকার ফলে মনের শূণ্যতা পুরণের জন্যে তারা আবার মাদকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবে । সুতরাং তাদের বেঁবে থাকার সামর্থ্য বাড়ানোই হচ্ছে তাদের আবার মাদক আসক্ত হওয়া এড়ানোর একটি কার্যকরী উপায় । খুয়েন মিং বাধ্যতামূলক মাদক-নিরাময় কেন্দ্রের উপপরিচালক নিউ চান কুয়াং বলেছেন , তার কেন্দ্রের কাজ হচ্ছে মাদক-নিরাময়ীদের সমাজে ফিরে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নেয়া । তিনি বলেছেন,

    মাদক-নিরাময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে এক রকম বিশেষ দক্ষতার অধিকারী । কেউ কেউ নাচ গান করতে পারে , আবার কেউ কেউ চাষবাস আর মত্স চাস করতে পারে । বাধ্যতামূলক মাদক-নিরাময় কেন্দ্র তাদের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা অনুসারে পৃথক পৃথকভাবে প্রশিক্ষণ দেন । যাদের বিশেষ গুণাবলী আছে , তাদের জড় করে সুসংগঠিতভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দেন । এই সব প্রশিক্ষণ কোর্সে অন্য মাদক আসক্ত ব্যক্তিরাও যোগ দেয় যাতে এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সবাই এক ধরণের কৌশল আয়ত্ত করতে পারে ।

    বর্তমানে সমাজে এমন কিছু সংখ্যক লোক রয়েছে , যারা মাদক-নিরাময়ীদের তুচ্ছ করে । তাদের আচরণ মাদক-নিরাময়ীদের আরো নিসংগ করে তুলেছে এবং তাদের আবার মাদক আসক্তদের দলে ঠেলে দেবে । তাই মাদক-নিরাময়ীরা সমাজে ফিরে যাওয়ার পর তাদের মানসিক শোধন জরুরী হয়ে পড়েছে ।

    এই জন্যে খুন মিং মাদক-নিরাময় কেন্দ্র আপনজনদের সংগে দেখা সাক্ষাতের সুব্যবস্থাসম্পন্ন হল নির্মাণ করেছে । এই কেন্দ্র উদ্যোগের সংগে পাড়া এলাকাগুলোর আবাসিক কমিটির সংগে সহযোগিতা করে মাদক নিরাময়ীদের বাবামার সংগে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখে , তাদের জন্যে আপনজনদের স্নেহ-মমতা ও উত্সাহ খুঁজে বের করার ব্যাপারে সহায়তা করে এবং তাদের সমাজে ফিরে যাওয়ার পথে তাদের অসুবিধা দূর করার চেষ্টা করে । মাদক-নিরাময় কেন্দ্রের শিক্ষক কাও বলেছেন ,

    আমাদের কেন্দ্রের দেখা সাক্ষাতের হলের মানবিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে । মাদক-নিরাময়ীদের কাঁচের প্রতিবন্ধকতা আর মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে হয় না । আমরা আশা করি , শিক্ষার্থীদের প্রত্যয় স্থাপনের ব্যাপারে সহায়তার কাজে তাদের আপনজনেরা আরো বিরাট ভূমিকা পালন করবেন । প্রতি বছর আমরা এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের অবস্থা তদন্তের কাজ চালাই । এভাবে আমরা মাদক নিরাময়ের কাজকে পাড়া এলাকাগুলোতে সম্প্রসারণ করেছি ।

    খুন মিং জোরপুর্বক মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আমাদের সংবাদদাতা মিস ওয়াংয়ের সংগে দেখা করলেন । তিনি সাফল্যের সংগে মাদক নিরাময় করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,

    আগে মাদকে আসক্ত হওয়ার জন্যে আমার পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা আমাকে তুচ্ছ করতো । তবে মাদক-নিরাময় কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার পর আমি অনুভব করছি যে, অনেকে আমাকে গ্রহণ করেছে এবং আমার যত্ন নিচ্ছে । মাদক-নিরাময় কেন্দ্রে আমাদের শিক্ষকরা আমার যত্ন নিতেন , সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর আবাসিক কমিটির কর্মী ও থানার পুলিশেরা আমাকে সাহায্য করতে আসেন । তারা আমার আপনজনদের আমাকে পরিত্যাগ না করার পরামর্শ দেন । অতীতে আমার পাশে কথা বলার কোনো বন্ধু ছিল না । কিন্তু এখন পাড়া কমিটির কর্মীরা আমাকে তাদের নিজেদের বোনের মত মনে করে আমার মনের কথা শুনেন এবং আমার আনন্দ ও দু:খের সমভাগী হন । এতে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি । এত বেশি লোক আমার যত্ন নেন এবং আমাকে উত্সাহ দেন । এতে জীবনের প্রতি আমি আস্থা ফিরে পেয়েছি ।

    ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত খুন মিং বাধ্যতামলক মাদক নিরাময় কেন্দ্র মোট ৭০ হাজারেরও বেশি মাদকে আসক্তদের চিকিত্সা করেছে । তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধের বয়স ৬৯ বছর এবং সবচেয়ে কনিষ্ঠের বয়স ১১ বছর । তাদর মধ্যে অনেকে সাফল্যের সংগে মাদক নিরাময় করে সমাজে ফিরে গিয়েছেন । খুন মিং বাধ্যতামূলক মাদক নিরাময় কেন্দ্রের উপ পরিচালক নিউ চান কুয়াং বলেছেন , আমাদের কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে । এটাই আমাদের কেন্দ্রের চূড়ান্ত লক্ষ্য ।