শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মহিন্দ রাজাপাকসে গত সোমবার বলেছেন , শ্রীলংকা সরকার দেশের দীর্ঘকালীন সংঘর্ষ নিরসন সম্পর্কে প্রধান বিরোধী দলের সংগে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে । যেহেতু রাজাপাকসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার হচ্ছে সংখ্যালঘু পার্টির সরকার , সেহেতু তামিল টাইগার সংস্থা বলেছিল যে, সরকার তার সংগে আলোচনা চালানোর যোগ্য নয় । তাই গত সোমবার স্বাক্ষরিত চুক্তি সরকার ও টাইগার সংস্থার মধ্যকার আইনগত বাধা দূর করার জন্যে ঐতিহাসিক তাত্পর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে ।
গত রোববার রাজাপাকসে প্রধান বিরোধী দল যৌথ জাতীয় পার্টির নেতা রানিল ওকরেমাসিহার সংগে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার পর এ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন । জানা গেছে , স্বাক্ষরিত চুক্তির মধ্যে ক্ষমতাসীন ও যৌথ জাতীয় পার্টির মধ্যে সমানভাবে ক্ষমতা ভোগের বিষয়বস্তু রয়েছে । কিছু খুঁটিনাটি বিষয় চূড়ান্ত না হলেও চুক্তি স্বাক্ষর থেকে প্রমাণিত হয়েছে , উভয় পক্ষ টাইগার সংস্থার সংগে শান্তি আলোচনা ত্বরান্বিত এবং অবিলম্বে দেশের দীর্ঘকালীন সংঘর্ষ নিরসন সম্পর্কে একমত হয়েছে । চুক্তিটিতে বলা হয়েছে , যৌথ জাতীয় পার্টি শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে দেশের জাতীয় সংঘর্ষ নিরসন প্রচেষ্টার প্রতি তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে ।
যেহেতু শ্রীলংকা সরকার আগামী ২২ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডে টাইগার সংস্থার সংগে নতুন এক দফা শান্তি আলোচনায় মিলিত হবে , সেহেতু প্রধান বিরোধী দলের সংগে শান্তি আলোচনা সম্পর্কে একমত হলে আলোচনায় শ্রীলংকা সরকারের জন্যে তা কল্যাণকর হবে । চুক্তিটি স্বাক্ষরের পর রাজাপাকসে বলেছেন , শ্রীলংকা সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি কার্যকরীভাবে শ্রীলংকার শান্তি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে এবং সরকার ও টাইগার সংস্থার মধ্যে শান্তি আলোচনার জন্যে মজবুত আইনগত নিশ্চয়তা বিধান করবে ।
চুক্তিটি শ্রীলংকার শান্তি প্রক্রিয়ার জন্যে ইতিবাচক তত্পর্যপূর্ণ হলেও অল্প দিনের মধ্যে আলোচনায় অগ্রগতি লাভ করা যাবে না ।
প্রথমত ২০০২ সালে বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পর শ্রীলংকা সরকার ও টাইগার সংস্থার মধ্যে ৬ দফা সরাসরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হলেও উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার ভিত্তি এখনো অত্যন্ত দুর্বল রয়েছে । ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে সরকার প্রতিশ্রুতি লংঘন করেছে বলে টাইগার সংস্থা শান্তি আলোচনা থেকে সরে গেছে । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরলস প্রচেষ্টায় গত ফেব্রুয়ারী মাসে সুইজারল্যান্ডে শান্তি আলোচনা আবার অনুষ্ঠিত হয় । তবে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয় নি । এরপর শ্রীলংকায় সহিংস সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে । এ থেকে দেখা যায় , শ্রীলংকার জাতীয় দ্বন্দ্ব অত্যন্ত জটিল । উভয় পক্ষের সংঘর্ষ রাতারাতি দূর হবে না ।
দ্বিতীয়ত সম্প্রতি তীব্রতর হওয়া সহিংস তত্পরতা উভয় পক্ষের শত্রুতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে । আলোচনায় আবার বসলেও চুক্তি স্বাক্ষর অতটা সহজ হবে না ।
অথচ সবাই দেখতে পাচ্ছে যে , উভয় পক্ষের মধ্যে ঘন ঘন সংঘর্ষ ঘটলেও শ্রীলংকা সরকার ও টাইগার সংস্থা এখন কেউই সংঘর্ষকে আরো তীব্রতর হতে দেখতে চায় না । টাইগার সংস্থার রাজনৈতিক নেতা তামিল সেলভান সম্প্রতি বলেছেন , টাইগার সংস্থা এ মাসের শান্তি আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্যে সুইজারল্যান্ডে প্রতিনিধিদল পাঠাবে । আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, শ্রীংলংকার শান্তি আলোচনা অসুবাধাজনক অবস্থায় পড়লেও সংঘর্ষে লিপ্ত উভয় পক্ষ উপলব্ধি করতে পেরেছে যে , কেবল আলোচনাই হচ্ছে সংঘর্ষের চূড়ান্ত নিরসনের কার্যকর উপায় ।
|