v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-10-23 14:40:40    
পেইচিংয়ের সার্বজনীন হাসপাতাল

cri
    চিকিত্সা ব্যয় বেশী হওয়ায় বর্তমানে চীনা জনগণ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ২০০৫ সালে চীনের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য পরিসেবা তৃতীয় জরীপ রিপোর্টে জানা গেছে, চীনের প্রায় ৫০ শতাংশ অধিবাসী রোগে আক্রান্ত হলেও ডাক্তারের কাছে যায় না , প্রায় ৩০ শতাংশ অধিবাসী যাদের হাসপাতালে থাকা উচিত , তারা ইচ্ছে করেই হাসপাতালে আর্থিক কারণে যায় না।

    এই সমস্যা সমাধানের জন্য চীনের বিভিন্ন স্থানীয় সরকার সক্রীয়ভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে । ২০০৫ সালে পেইচিংয়ের হাইতিয়ান স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত শাংতি নামক একটি ক্ষনিক সার্বজনীন হাসপাতাল --শাং তি হয়েছে । প্রায় এক বছরের মধ্যে স্থানীয় জনগণ এই হাসপাতাল যেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে। আজকের " বিজ্ঞান ও জীবন" অনুষ্ঠানে আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো:

    পাঁচ বছর আগে চীনের সিছুয়ান প্রদেশের ছুংছিং শহরের পশ্চিম গ্রামের একজন কৃষক কে মিংইয়ান পেইচিং এসে ছিলেন কাজ করতে । এখান থাকা অবস্থায় তিনি শ্বেতকণিকার আধিক্যজনিত রক্তাল্পতা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে হাসপাতালের ব্যয় বহুন চিকিত্সা তাঁর জন্যে বিরাট ঝামেলার কারণ হয়ে দাড়ায়। তিনি বলেছেন:

   " আমি ডাক্তারকে জিজ্ঞিসা করি: ' কত খরচ হবে?' ডাক্তার আমাকে বলেছেন: ' মোট আট হাজার ইউয়ান হবে'। এ কথা শুনে আমি কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে চলে যাই ।"

    এরপর কে মিংইয়ান আর হাসপাতালে যাননি । তিনি নিজের ঘরে শ্বেতকণিকার আধিক্যজনিত রক্তাল্পতা রোগের সংশ্লিষ্ট বইপত্র দেখে চিকিত্সার খোঁজ খবর নিতে থাকেন। এর মধ্যেই দু'বছরের যায়। তার শরীরের অবস্থা আরো বেশি খারাপ হয়ে পড়ে। তাই তিনি পুনয়ায় হাসপাতালে গিয়েছিলেন, কিন্তু চিকিত্সা খরচ দু'বছর আগের চেয়ে আরো বেশি বেড়ে গেছে। তিনি বলেছেন:

    " হাসপাতালে থাকলে আমাকে মোট ৩০ হাজার ইউয়ান দিতে হবে। আমি ভাবছি: ' বাসায় ফিরে যাবো, হাসপাতালে থাকতে পারবো না । আমার কাছে এত বেশি টাকা নেই!"

    ধীরে ধীরে কে মিংইয়ানের অবস্থা আগের চেয়ে আরো বেশি খারাপ হয়েছে। এখন শুধু অস্থির মজ্জা অপরেশনের মাধ্যমে পরিবর্তনের দ্বায় তাঁর জীবনকে আরো দীর্ঘাতি করার সম্ভাবনা আছে। সৌভাগ্যক্রমে তাঁর ছোটভাই তাকে তার উপযুক্ত মজ্জা দিতে পারে। তবে চিকিত্সা খরচ এত বেশী যে তা প্রায় ৪ ৫ লাখ ইউয়ান হবে।

    অনেকেই কে মিংইউয়ানের মত, রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রথম দিকে হাসপাতালে যায়নি, যার ফরে নিজের শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হয়েছে। এতে শেষ দিকে তাদের হাজার হাজার ইউয়ান চিকিত্সা খরচ হিসেবে ব্যয় করতে হয়। এ ধরণের অবস্থা এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে চীন সরকার সার্বজনিন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে। যার লক্ষ্য হলো জনগণের জন্যে মৌলিক চিকিত্সার নিশ্চয়তা দেয়া, যাতে গরীব মানুষ হাসপাতালে যেতে পারে।শাং তি হাসপাতালের একজন স্পনসরের অন্যতম ইয়ু সিওছিয়ান বলেছেন:

    " জনগণ কোন রোগে আক্রান্ত হলে , তাদের জন্য চিকিত্সা সেবা নিশ্চিত এমন একটি হাসপাতালে যাওয়া আয়োজন, অবহেলা করে বাসায় থাকা ঠিক নয় ।"

এই লক্ষ্য নিয়ে ২০০৫ সালে তখনকালীন পেইচিংয়ের হাইতিয়ান জেলা স্বাস্থ্য ব্যুরোর প্রধান ইয়ু সিওছিয়ান পেইচিংয়ের প্রথম সার্বজনীন হাসপাতাল-- শাং তি হাসপাতালে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই নতুন হাসপাতাল পেইচিংয়ের হাইতিয়ান জেলায় অবস্থিত। এই হাসপাতাল হলো চীনের বেশি চিকিত্সা সেবা প্রদানকারী হাসপাতালগুলোর অন্যতম। অনেক হাসপাতালের প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেছে। তবে চিকিত্সা ব্যয় বহুন বলেই এখানে বসবাসকারী ১ লাখ কৃষক ও অনেক দরিদ্র নাগরিক সহজেই হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে পারে না।

    শাং তি হাসপাতালের সেবা প্রদানের নীতি অন্য সার্বজনীন হাসপাতালের চেয়ে ভিন্ন রকমের । সাধারণত , সরকার সার্বজনীন হাসপাতালে পুঁজিবিনিয়োগ খুব কমই করে থাকে। প্রায় ৯০ শতাংশ খরচই রোগীদের কাছ থেকে নিতে হয়। তাই হাসপাতাল শুধু ব্যবসায়ীক নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে। কিন্তু শাং তি হাসপাতাল অন্য প্রকৃতির । এই নতুন সার্বজনিক হাসপাতালের ডাক্তারদের বেতন সরাসরি সরকার প্রদান করে এবং হাসপাতালের না না ধরণের খরচ যেমন : জায়গার ভাড়া, চিকিত্সা সাজ-সরঞ্জাম ইত্যাদি সব কিছুই এখন সরকার বহন করে।

    সরকার শাং তি হাসপাতালের জন্য ভর্তুকি দিয়েছে, যাতে এখানে বিভিন্ন চিকিত্সার খরচ অন্য হাসপাতালের চেয়ে অনেক কম। শাং তি হাসপাতাল চালু হবার চার মাসেও এখানের রোগীদের বিছানার সংখ্যা যথেষ্ট নয় । কারণ এই হাসপাতালের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অনেকই তাই হাই তিয়ান জেলার খুবই বিখ্যাত এই হাসপাতালে এখন চিকিত্সা নিতে আসেন।

    পেইচিং শহরের হাই তিয়ান জেলার স্থানীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, যদি এই সার্বজনীন হাসপাতাল ভালভাবে চলতে পারে, তাহলে এই নতুন খাত অনুযায়ী আরো দু'টি নতুন সার্বজনীন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবে। চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে যথেষ্ট সাহায্য করবে। এখন চীনের অনেক স্থানীয় সরকার এই ধরণের সার্বজনীন হাসপাতাল স্থাপন করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ।

    এখন অনেকই চিন্তা করে , হাসপাতাল রোগীদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিতে পারে না, তাই স্বাভাবিকভাবে হাসপাতাল চালু রাখতে পারবে কিনা? বা এই হাসপাতাল কতদিন চলতে পারবে ? শাংতি হাসপাতালের প্রধান ওয়াং লিং বলেছেন, সরকারের অর্থ সাহায্যে সার্বজনীন এই হাসপাতালের নির্দিষ্ট খরচ মেটানোর পর, শুধু পানি ও বিদ্যুত্ ইত্যাদি ছোটখাটো খরচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেই পরিবোধ করতে পারে। এবং রোগীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়লে হাসপাতালের ভার কিছুটা কমে যাবে।

    " প্রতিদিন রোগীদের মোট সংখ্যা ১ হাজার বা ১ হাজার ৫ শোর মধ্যে হলো, আমরা বিভিন্ন ধরণের চিকিত্সার খরচ বহন করতে পারি।"