ব্রিটিশ সরকার , লিথুয়েনিয়ার স্পীকার মুন্টিয়ানাস , এস্তোনিয়ার স্পীকার ভারেক ও ইউক্রেনের সর্বোচ্চ সোভিয়েতের চেয়ারম্যান মোরোজের আমন্ত্রণে চীনের গণ রাজনৈতিক পরিষদের জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান চিয়া ছিং লিন ২২ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত উপরুল্লেখিত চারটি দেশে আনুষ্ঠানিক মৈত্রী সফর করবেন । এটা হবে ইউরোপীয় দেশগুলোতে চীনের শীর্ষ নেতার এ বছরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সফর । এই সফর চারটি দেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ও চীন -ইউরোপ সম্পর্কের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে ।
চিয়া ছিং লিনের বর্তমান সফরের উদ্দেশ্য হলো পারস্পরিক সমঝোতা ও আস্থা বাড়ানো , বন্ধুত্ব সুসংবদ্ধ করা এবং সহযোগিতা বাড়ানো । তিনি প্রথম সফর করবেন ব্রিটেন । চীন ও ব্রিটেনের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠারপর গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে দুদেশের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ ও মতবিনিময় বেড়েছে । ফলে দুদেশের সমঝোতা ও আস্থা লক্ষনীয়ভাবে বেড়েছে । ১৯৭২ সালে দুদেশের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সময় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমান ছিল মাত্র ৩২ কোটি মার্কিন ডলার । ২০০৫ সালে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দাড়ায় ৩৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । দুদেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাণিজ্য , অর্থবিনিয়োগ , ব্যাংকিং , জ্বালানী সম্পদ , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । চীন ও ব্রিটেনের শীর্ষ নেতারা প্রতি বছর সফর বিনিময় করেন । ব্রিটেন সফরকালে চিয়া ছিংলিন আর্থ-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো জোরদার করা এবং দুদেশের সংসদীয় আদান-প্রদানে বাড়ানো সম্পর্কে প্রস্তাব পেশ করবেন । তার এই সফর দু দেশের অংশীদারী সম্পর্কের প্রসার তরান্বিত করবে ।
লিথুয়েনিয়া ও এস্তোনিয়া বাল্টিক সাগরীয় অঞ্চলের দুটি দেশ । এ বছর হলো এই দুটি দেশের সঙ্গে চীনের কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পঞ্চদশ বার্ষিকী । চীন লিথুয়েনিয়া ও এস্তোনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় এবং এ দুটি দেশকে বাল্টিক অঞ্চলে চীনের দুটি বন্ধু দেশ মনে করে । চীন ও লিথুয়েনিয়ার মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর দুদেশের বাণিজ্যের পরিমান আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে । ২০০৫ সালে দু দেশের বাণিজ্যের পরিমান ছিল ৩৭.২ কোটি মার্কিন ডলার । সংস্কৃতি , শিক্ষা , ক্রীড়া , পর্যটন , বেসরকারী বিনিময় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে দুদেশের সহযোগিতা বেশ তত্পর ।
চীন ও এস্তোনিয়ার সম্পর্ক ভালো । এস্তোনিয়ার স্বাধীনতার পর চীন সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয় এবং কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে । কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর দুদেশের রাজনৈতিক আস্থা এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা দ্রুত বেড়েছে । ২০০৫ সালে দু দেশের বাণিজ্যের পরিমান ছিল ৩৬.৯ কোটি মার্কিন ডলার ।
লিথুয়েনিয়া ও এস্তোনিয়া সফরকালে চিয়া ছিং লিন এ দুটি দেশের শীর্ষ নেতা ও সংসদীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক , সংসদীয় যোগাযোগ ও অন্যান্য অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করবেন ।
চিয়া ছিং লিনের সফরের সর্বশেষ দেশ হলো ইউক্রেন । চীন ও ইউক্রেন ১৪ বছর আগে কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে । গত ১৪ বছরে দুটি দেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরম্পরকে সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে সহযোগিতা করে আসছে । অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীন ও ইউক্রেন একে অপরের অভাব পূরণ করতে পারে । ২০০৫ সালে দুদেশের বাণিজ্যির পরিমান ছিল ৩.২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
চীন ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় । এ বছর চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান উ পান কো ও প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও ইউরোপীয় দেশগুলো সফর করেছেন । রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চীন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর অবস্থানের মিল বেশি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দু পক্ষ একে অপরের অভাব পূরণ করতে পারে । ইউরোপের চারটি দেশে চিয়া ছিং লিনের সফর অবশ্যই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তথা চীন-ইউরোপ সম্পর্কের প্রসার তরান্বিত করবে ।
|