v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-10-20 15:52:46    
সন্তানের কাছে মায়ের ৮টি মিথ্যা কথা

cri
    সবাই বলে, বিশ্বে মা সবচেয়ে মহান । মা সন্তানদের প্রথম শিক্ষিকা । মা নিজের সন্তানকে ভালবাসেন । মা চান নিজের সন্তান কখনো মিথ্যা কথা বলবে না এবং বিশ্বাসী ও যোগ্য মানুষ হবে । কিন্তু আজকে যে মায়ের গল্প শোনানো হবে সেই মা তার সন্তানকে ৮বার মিথ্যা কথা বলেছিলেন । হয়ত বন্ধুরা জিজ্ঞেস করবেন, এই মা কেন তার সন্তানকে মিথ্যা কথা বলেছেন এবং তিনি তার সন্তানকে কিকি মিথ্যা কথা বলেছেন?

    ছোটবেলায় সিয়াওমিংয়ের পরিবার এত গরিব ছিল যে,কখনো কখনো বাবামা তাদের পেট ভরাতেও পারতেন না । একদিন দুপুরের খাবার সময় সিয়াওমিংয়ের খাওয়া শেষ হয়নি তবে ভাত শেষ হয়ে গেছে । এই সময় মা নিজের বাটির ভাত সিয়াওমিংকে খেতে দেন এবং তাকে বলেন,তাড়াতাড়ি খাও , আমার ক্ষিদে নেই । মা তার প্রথমটি মিথ্যা কথা বললেন ।

    সিয়াওমিং বড় হয়ে ওঠছে ।বড় হওয়ার সময় পুষ্টি দরকার । এই সময় পরিশ্রমী মা মাঝেমাঝে ছুটির ফাঁকেফাঁকে উপকন্ঠের গ্রামের নদীতে মাছ ধরে সিদ্ধ করে সিয়াওমিংকে খাওয়াতেন । মায়ের সিদ্ধ করা মাছ ও স্যুপ খুব সুস্বাদু । সিয়াওমিং মাছ খায় আর মা পাশে বসে মাছের কাটার মাংস খান । সিয়াওমিং দেখে নিজের বাটি থেকে মাছ মাকে খাইতে দেয় । মা খান না ।তিনি আবার মাছটা সিয়াওমিংয়ের বাটিতে ফেরত দেন । মা বলেন , বাবা, তাড়াতাড়ি খাও , আমি মাছ খেতে পছন্দ করি না । মা তার দ্বিতীয় মিথ্যা কথা বললেন ।

    সিয়াওমিং নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়েছে । তার স্কুলফি জমা করার জন্যে দরজির কাজে নিয়োজিত মা ম্যাচ কারখানা থেকে ম্যাচের বাক্স বানানোর কাজ বাড়িতে নিয়ে আসেন । রাতে ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে পড়ার পর তিনি ম্যাচের বাক্স বানাতে শুরু করেন । শীত্কালের রাতে যখন সিয়াওমিং জেগে ওঠে তখন সে দেখতে পায়,মা মাথা নিচু করে প্রদীপের আলোতে ম্যাচের বাক্স বানাচ্ছেন। সিয়াওমিং মাকে বলত,মা অনেক রাত হল, তুমি ঘুমাও ,কালকে কারখানায় যেতে হবে । মা মৃদু হেসে বলতেন,বাবা,তুমি ঘুমাও । আমার ঘুম আসেনি । ছেলেকে মা তৃতীয় মিথ্যা কথা বললেন ।

    সিয়াওমিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিচ্ছিল । সেই কয়েক দিনে মা কারখানা থেকে ছুটি নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের দ্বারে দাঁড়িয়ে ছেলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন । পরীক্ষা শেষ হওয়ার ঘন্টা বাজল । মা এগিয়ে গিয়ে ছেলেকে গরম চা খেতে দেন। কয়েক ঘন্টা ধরে রোদে দাঁড়িয়ে মা'য়ের ঠোঁট শুকিয়ে গেছে এবং গায়ে ঘাম দেখে সিয়াওমিং হাতের চা মাকে খেতে দেয় । মা তাকে বলেন,তুমি খাও ,আমার পিপাসা লাগেনি । মা চতুর্থ মিথ্যা কথা বলেছেন ।

    বাবা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর মা বাবার দায়িত্বও বহন করেছেন। তিনি দরজির কাজ করে যে অর্থ পান তা দিয়ে নিজের ছেলেমেয়েকে লালনপালন করেন । মা অত্যন্ত কষ্টে ছেলেমেয়েকে পড়াশুনা করাতেন । মার অসুবিধা দেখে প্রতিবেশী চাচা লি মাঝেমাঝে মাকে খাদ্যশস্য ও কয়লা কিনতে আর পানি তুলতে সাহায্য করেন । ধীরেধীরে লক্ষ্য করেছেন যে , চাচা লি মাকে ভালবেসেছেন । সবাই মাকে চাচা লির সঙ্গে বিয়ে করতে পরামর্শ দেন । কিস্তু সন্তানদের জন্যে মা প্রতিবেশীদের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেছেন । মা বলেন, আমি ভালবাসি না । মা পঞ্চম মিথ্যা কথা বলেছেন ।

    সিয়াওমিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা কাজ শুরু করেন । কর্মচ্যুত হয়ে মা কাছের শব্জি বাজারে ছোটোখাটো জিনিস বিক্রি করে দৈনদিন জীবন চালাতেন । সিয়াওমিং ও ভাইবোনরা প্রত্যেক মাসে মাকে টাকাপয়সা পাঠায় এবং মাকে তাদের সঙ্গে জীবনযাপন করতে শহরে যেতে বলেন । মা জানেন, ছেলেমেয়েদের জীবনযাত্রার মান তেমন উন্নত নয় । তাই তিনি ছেলেমেয়েদের পাঠানো টাকাপয়সা ফেরত দেন এবং বলেন, আমার টাকাপয়সা আছে । এটা মার ষষ্ঠ মিথ্যা কথা ।

    বিশ্ববিদ্যালয়ে দুবছর কাজ করার পর সিয়াওমিং যুক্তরাষ্ট্রের এক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরডিগ্রী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এক বৈজ্ঞানিক গবেষণালয়ে কাজ করেন এবং মোটা বেতন পান । বিদেশে থাকাকালে সিয়াওমিংয়ের সবসময় মার কথা মনে পড়ে । মা যুক্তরাষ্ট্রে এসে তার সঙ্গে সুখে আরামে জীবনযাপন করবেন বলে সিয়াওমিং আশা করেন । কিন্তু মা সিয়াওমিংয়ের এই আশা পূরণ করেননি । তিনি বলেন, এক অপরিচিত জায়গায় থাকা আমার অভ্যাস নয় । মা সপ্তম মিথ্যা কথা বলেছেন ।

    বুড়ো বয়সে মা পাকস্থলী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন । এই দুসংবাদ পেয়ে সিয়াওমিং তাড়াতাড়ি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসেন । শল্যচিকিত্সার পর মার অবস্থা অত্যন্ত দুবল । মা বুড়ো হয়েছেন । ক্যান্সারে তার যে ব্যথা হয় তা দেখে সিয়াওমিংয়ের খুব কষ্ট হয় । তার চোখ দিয়ে পানি পড়ে । মা তাকে বলেন,কেঁদো না,বাবা । ব্যথা না । এটা মার শেষটি মিথ্যা কথা ।

    বন্ধুরা,গল্প থেকে আপনি কি বুঝেছেন?হ্যা , মায়ের ভালবাসা মহত।