কুইলিন শহর দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুয়াংশি চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত। কুইলিন হচ্ছে বিশ্ব বিখ্যাত দশর্নীয় স্থান। চীনারা প্রায়ই বলেন, একটি জায়গায় পানি থাকলে সেখানে আত্মা আছে। লিচিয়াং নদী হচ্ছে কুইলিনের আত্মা। কুইলিন শহর থেকে ইয়াংসো জেলা পর্যন্ত মোট ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ্য লিচিয়াং নদীকে চীনের নদনদীর প্রতিনিধি বলা যায়। লিচিয়াং নদীর দু'পারের সারি সারি পাহাড় আর গ্রামীণ দৃশ্য চীনের ঐতিহ্যিক ছবির মতো।
সন্ধ্যার পর লিচিয়াং নদী একটি মঞ্চে পরিণত হয়। ইয়াংসোর পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদীতে প্রতিদিন বড় ধরনের নৃত্য নাটক "লিউ সুন চিয়ে" অভিনিত হয়।
একদম কালো আকাশ থেকে মনোরম লোকসংগীত ভেসে আসে। দর্শকরা স্বপ্নের মতো সংগীত শোনার সময় হঠাত্ আলোয় উদ্ভাসিত হন। লিচিয়াং নদীর অপর দিকের পাহাড়ের দৃশ্য আকস্মিকভাবে দর্শকদের সামনে হাজির হয়। অনুষ্ঠানটি দেখে দর্শকরা বার বার হাততালি দেন।
মোট ৬০০ জনেরও বেশি অভিনেতা-অভিনেত্রী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ হচ্ছেন স্থানীয় কৃষক, পেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রী নন। প্রায় ৭০ মিনিটের অনুষ্ঠানে তাঁরা দর্শকদের জন্য লিচিয়াং নদীতে জেলেদের দৈনন্দিন জীবন , স্থানীয় সংখ্যালঘু জাতিগুলোর প্রথা , মাছ ধরা, জমি চাষ করা, গরু পালন করা, চুয়াং জাতির কাহিনী ও লোকসংগীত ইত্যাদি পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটি সুষমভাবে যেন সুন্দর নদনদী ও পাহাড়ের সঙ্গে মিশে যায়।
চীনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চাং ঈ মো এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। ২০০৩ সালের অক্টোবর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে একবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। লিচিয়াং নদীর তীরে দু'হাজারেরও বেশি আসন বসানো হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন ভিড় থাকে।
জার্মানী থেকে আসা লাউবিস দম্পতি প্রথমবার চীনে এসেছেন। তাঁরা কুইলিনে একদিন থাকার পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু এখানে আসার পর আর ফিরে যেতে চান না।
মি. থোমাস লাউবিস বলেছেন, "এ জায়গা অতি সুন্দর। এবারের চীন সফর আমার শেষ বার হবে না। " মিসেস মাটিনা লাউবিস বলেছেন, "এখানের লোক খুব বন্ধুভাবাপন্ন। তাঁরা নিজেরাই এসে আমাদের সঙ্গে গল্প করেন। আমার চোখে, তারা বিশ্বাসযোগ্য। আমরা অবশ্যই আবার চীনে আসবো। চীনের অন্যান্য অঞ্চল দেখতে যাবো।"
এই জার্মান দম্পত্তির মতো অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক কুইলিনে আসেন। কিছু কিছু বিদেশী পর্যটক ইয়াংসোতে বাড়ি কিনেছেন। অস্ট্রেলিয়ার যুবক আলফোন্সো এক্সপোসিটো পাঁচ বছর আগে ইয়াংসোতে এসে বাড়ি কিনেছেন। তিনি স্থানীয় একজন চীনা মেয়েকে বিয়ে করেছেন। তাঁদের ছেলে হয়েছে। তাঁরা ইয়াংসোতে একটি বার খুলেছেন। তিনি বলেছেন, "কুইলিনের দৃশ্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। ইয়াংসো ছোট জায়গা হলেও, খুব শান্ত। জীবনযাপনের গতি খুব মন্থর। অনেক বিদেশী পর্যটক ইয়াংসোতে আসার সময় দু'তিন দিন থাকার পরিকল্পনা করলেও এখানে আসার পর একটানা দু'এক সপ্তাহ থাকেন। কারণ এখানে থাকতে খুব আরাম। এখানে ভালোভাবে বিশ্রাম নেয়া যায়।"
সাধারণ বিদেশী পর্যটক ছাড়াও কিছু কিছু বিদেশী শীর্ষ নেতারাও চীন সফরকালে কুইলিন ভ্রমনে যান। এখন পর্যন্ত কুইলিন মোট ১০৮ জন বিদেশী শীর্ষ নেতার অভ্যর্থনা জানিয়েছে। ১৯৭২ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সোন প্রথম বার চীন সফরকালে কুইলিনে এসেছিলেন। লিচিয়াং নদীতে ভ্রমণের পর তিনি বলেছিলেন, "আমি বিশ্বের আশিটিরও বেশি দেশের ১০০টিরও বেশি শহর সফর করেছি। আমি মনে করি, কুইলিন হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর জায়গা।"
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের বহু দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পরিবেশের ওপর বড় চাপ পড়েছে , এমনকি পরিবেশকে কিছু মাত্রায় নষ্ট করেছে। কিন্তু কুইলিন শহরে আপনি সবসময় টাটকা বায়ু উপভোগ করতে পারেন। লিচিয়াং নদীর পানিও সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এ সম্পর্কে কুইলিন পর্যটন ব্যুরোর উপ-পরিচালক চেন ইয়ু ছুন বলেছেন, কুইলিনের পর্যটন শিল্প উন্নয়নের মূলনীতি হচ্ছে পরিবেশ সংরক্ষণ। কেবল পরিবেশ সংরক্ষণের পূর্বশর্তের ভিত্তিতে পর্যটন শিল্প উন্নত করা যায়। তিনি বলেছেন, "পরিবেশ সুরক্ষাকে সবসময় গুরুত্ব দেয়া হয়। যে প্রকল্প পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত পর্যালোচনায় পাশ করতে পারে না। আমরা কোন ভাবেই তাকে সমর্থন করি না। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য এখন কুইলিনে ধোঁয়া নিগর্মনকারী কারখানা বা দূষিত দ্রব্য নিষ্কাশনকারী কারখানার উন্নয়ন করা হয় না। আমরা মাত্র হাই-টেক শিল্পের বিকাশ করি।"
বন্ধুরা, যদি শহরের ব্যস্থতা আপনার ক্লান্তি এনে থাকে, অথবা আপনি চীনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পাহাড়ী ও নদনদীর সংস্কৃতি উপভোগ করতে চান, তাহলে কুইলিনে আসুন।
|