v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-10-18 20:35:39    
চীনের লাল নগর ইয়ান আনের অতীত ও বর্তমান

cri
    মার্কিন প্রখ্যাত সাংবাদিক এডগার স্নো তাঁর সুপরিচিত " লাল তারকার আলোকে উদ্ভাসিত চীন" নামে একটি বইতে প্রায়শই চীনের উত্তর শেন সি প্রদেশের লাল ভূমির কথা উল্লেখ করেছেন । এই লাল ভূমির নাম ইয়ান আন । ইয়ান আন চীনের হোয়াং থু মালভূমির একটি অচেনা ছোট নগর ছিল । এক সময় চীনের লাল ফৌজ লংমার্চে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে এখানে মিলিত হয়েছিল । তখন থেকে ইয়ান আন সারা পৃথিবীতে সুনাম অর্জন করে এবং বিখ্যাত লাল নগরে পরিণত হয় । তাহলে লাল ফৌজ লং মার্চ শেষ করে ইয়ান আনে মিলিত হওয়াটা এখানকার উন্নয়নে কি ধরণের ছাপ ফেলেছে ? আজকের ইয়ান আনের চেহারা কি রকম ?

    সুই চিন শান ইয়ান আনের একজন পুরনো অধিবাসী । তাঁর বয়স ৮২ বছর । তার চুল ও গোঁফ সবই পেকেছে । এখানকার ছেলেমেয়েরা এই দয়ালু বুড়োকে খুবই ভালোবাসে । কেন না , তিনি সবসময় তাদেরকে লাল ফৌজের লংমার্চের কাহিনী শোনান । ছেলেমেয়েদের জানা আছে , একটি ছোট কালো ব্যাগ সর্বদাই তার কাছে থাকে । ব্যাগের মধ্যে থাকে একজোড়া ঘাসের জুতো ও একগোছা শুক্ন ঘাস । দাদা সুই প্রায়শই ছেলেমেয়েদের বলতেন , সেসময়ের লাল ফৌজ এই রকম ঘাসের জুতো পরতো এবং এই রকম শুক্ন ঘাস দিয়ে কাগজ তৈরি করে দলিলপত্র ছাপাতো ।

    সুই চিন শান স্মরণ করে বলেছেন , লাল ফৌজ তার মনে গভীর রেখাপাত করেছে । ১৯৩৬ সালে লাল ফৌজ ইয়ান আনে সাফল্যের সংগে মিলিত হয়েছিল , তখন তার বয়স ছির মাত্র ১০ বছর । তবে সে সময় লাল ফৌজের কয়েকজন সৈনিক তার বাড়িতে বসবাস করেছিল । তখন থেকেই তিনি তার ভালোভাবে এই বাহিনীকে মনে রেখেছেন ।

    এখনো সুই চিন শানের মনে আছে , সেই দিন যেসব সৈনিক তাদের গ্রামে আসলেন , তাদের পোশাক গুছানো ছিল না । কেউ কেউ লম্বা লম্বা জামা পরতো , আবার কেউ কেউ খাটো খাটো জামা পরতো । পোশাকের রংও একই ছিল না । কোনো কোনো সৈনিক কোলো জামা , আবার কোনো কোনো সৈনিক সাদা জামা পরতো । তবে মাথায় তারা সবাই একই ধরণের ধুসর রংয়ের ৮ কোনার টুপি পরতো। টুপিগুলোর সামনের মাঝখানে সেলাই করা ছিল একটি করে লাল তারা । তিনি বলেছেন ,

    তখন আমার বাবা লাল ফৌজের কর্মকর্তদের বললেন , আমাদের লাল ফৌজ এসেছে । খাওয়া-দাওয়ার জন্যে আপনাদের একটি ছাগল দিতে চাই । উত্তরে তারা বললেন , তা চলবে না । আমাদের টাকা নিতে হবে । আমাদের শৃংখলা খুব কঠোর । যাওয়ার সময় লাল ফৌজ আমাদের আংগিনাকে সাফ করে খুব পরিষ্কার করে তুলেছিল ।

    বাবার কাছ থেকে সুই চিন শান জানতে পারলেন , এই বাহিনীর নাম লাল ফৌজ । তিনি আরো জানতে পারলেন , চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন । পরবর্তীকালে লাল তারা সেলাই করা টুপি পরা লাল ফৌজের সৈনিকরা সবসময় সুই চিন শানের চোখে পড়তো । তারা তাদের গ্রামে স্কুল নির্মাণ করেছিল । সুই চিন শান ও তার রাখাল বন্ধুরা সবাই স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেলেন । তিনি বলেছেন ,

    অতীতে আমি দেখেছিলাম , আমার গ্রামের ধনী পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়তো । তখন আমি খুবই ইর্ষা করতাম । তবে বাবার টাকা না থাকায় আমি স্কুলে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলাম । লাল ফৌজ এখানে আসার পর আমাদের জন্যে স্কুল নির্মাণ করে আমাদের স্কুলে পড়ার সুযোগ দিয়েছে । আমি সত্যিই মহা খুশী ।

    চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন বাহিনী ইয়ান আনের জনসাধারণের জন্যে কোনো বোঝা বাড়াতো না । তারা ইয়ান আনে ব্যাপক উত্পাদন অভিযান চালাতে শুরু করলো । লাল ফৌজের সৈনিকরা অনাবাদী জমি চাষ করে এবং গরু ছাগল পালন করে ইয়ান আনের অর্থনীতির প্রভূত উন্নতি সাধন করেছিল । এতে বুড়ো সুইয়ের পরিবারের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়েছিল । তিনি বলেছেন ,

    চীনা কমিউনিস্ট পার্টির তত্কালীন নেতা মাও সে তুং এই ব্যাপক উত্পাদন অভিযানের সূচনা করলেন । জনসাধারণ হোক আর সরকারী প্রতিষ্ঠান ও স্কুল হোক , সবাই উত্পাদনের এই উত্তাল জোয়ারে শামীল হলো । এই অভিযানের মাধ্যমে ইয়ান আনের জনসাধারণের জীবনযাত্রার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে । এই অভিযান চলার সময় আমার পরিবারেও বছরে ১ হাজারেরও বেশি কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য উত্পাদন করা হতো ।

    ১৯৩৭ সালে চীন-বিরোধী জাপানী আগ্রাসী যুদ্ধ সার্বিকভাবে শুরু হওয়ার পর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জাপান-বিরোধী প্রতিরোধের আহবানে সাড়া দিয়ে চীনের বিভিন্ন স্থানের দেশপ্রেমিক তরুণ-তরুণীরা দলে দলে ইয়ান আনে গিয়েছিলেন । এভাবে লাল ফৌজের সৈন্য সংখ্যা বেড়েই চলেছিল ।

    সেই সময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ইয়ান আনে জাপান-বিরোধী প্রতিরোধ সংক্রান্ত সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয় ও উত্তর-শেন সি গণ বিদ্যালয়ের মত ৩০টিরও বেশি বিদ্যালয় খুলেছিল এবং বিপুল সংখ্যক সুযোগ্য ব্যক্তিকে গড়ে তুলেছিল । তাছাড়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ইয়ান আনে গণতান্ত্রিক সংস্কার ও সামাজিক সংস্কার আন্দোলন চালিয়েছিল এবং গ্রাম ও মহাকুমাগুলোর কর্তাদের নির্বাচন করার জন্যে গ্রামবাসীদের সংগঠত করেছিল ।

    ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর সুই চিন শান চাকরী পেলেন । তিনি গ্রামবাসীদের সংগে মিলে জাপানী বিমানগুলোর বোমাবর্ষণে ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরনো শহুরে এলাকায় নতুন করে রাস্তা ও বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন । ইয়ান আনে শিল্পেরও উন্নতি হয়েছে এবং তেল শোধন কারখানা , সিগারেট কারখানা , উল বয়ন কারখানা এবং কয়লা খনি নির্মিত হয়েছে । গত শতাব্দির সত্তরের দশকের শেষ দিকে ইয়ান আন থেকে শেন সি প্রদেশের রাজধানী সি আন পর্যন্ত রেল পথ নির্মাণ করা হয় । ইয়ান আনের বিভিন্ন জেলার মধ্যে সুড়ঙ্গ খনন করে বহু সড়কও নির্মিত হয় ।

    চীনে সংস্কার ও উন্মুক্ততার নীতি চালু হওয়ার পর ইয়ান আনের উন্নয়ন আরো দ্রুততর হয়েছে । সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্যে ইয়ান আনের অধিবাসীরা বিরাট সংখ্যক গাছ লাগাতে শুরু করেন । বিশাল বিশাল জমিতে আপেল ও নাশপাতীর গাছ লাগানো হয় । এসব ফলমূল দেশের অন্যান্য স্থানে ও বিদেশে রফতানী হয় । গত কয়েক বছরে ইয়ান আনের তেল শিল্পেরও উন্নতি হয়েছে । এতে ইয়ান আনের আর্থিক আয় বিরাটভাবে বেড়ে গেছে

    সুই চিন শান একজন রাখাল থেকে পরে জেলার একজন কর্তা ও ইয়ান আন অঞ্চলের কমিশনার পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন ।