চীনের ব্যাপক ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার সমস্যার শীঘ্রই সমাধান হবে । সম্প্রতিচীনের ব্যাংকিং তত্ত্বাবধান কমিটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন , তত্ত্বাবধান কমিটি ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার নীতি প্রণয়ন এবং ঋণ দেয়ার শর্ত ও আনুষ্ঠানিকতা সহজ করার নির্দেশ দিয়েছে ।
বর্তমানে চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশই ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তাদের জিডিপি চীনের মোট জিডিপির প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ হয়েছে । কিন্তুদীর্ঘ দিন ধরে ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল , উত্পাদন পন্যের মূল্য কম এবং ঝুঁকি প্রতিরোধের শক্তি কম বলে ব্যাংকগুলো তাদেরকে ঋণ দিতে চায় না । তাই চীনের অনেক ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে ।
থিয়েন লিন কম্পানি চীনের বইপত্র বিক্রি কোম্পানি । এই কোম্পানির ডিরেক্টর জেনারেল লি খুই আমাদের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , কয়েক বছর আগে তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার আবেদন করেছিলেন । কিন্তু ব্যাংক তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে । তিনি বলেছেন , আমি ঋণ নিতে ব্যাংকে গিয়েছি , আমাদের বন্ধক রাখার কিছু নেই বলে ব্যাংক আমার ঋণ নেয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি এতো হতাশ হয়েছি যে মনে করি আমাদের কোম্পানির কোনো ভবিষ্যত নেই ।
চীন সরকার মিঃ লি খুইয়ের মতো ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের ঋণ নেয়ার অসুবিধা দূর করার চেষ্টা চালাচ্ছে । চীনে বিভিন্ন মালিকানার অর্থনীতির প্রসারকে চীন সরকার উত্সাহ দেয় । ২০০৫ সালে চীন সরকার ব্যক্তি- মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকে সমর্থন ও উত্সাহ দেয়ার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে । সরকারের নতুন নীতি অনুসারে ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তৃতীয় পক্ষের জামিন শর্তে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে । এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত চীনের বিভিন্ন ব্যাংক ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট ২৬ কোটি ইউয়ান ঋণ দিয়েছে ।
পেইচিংয়ের চা ব্যবসায়ী মাদাম চু লি লি বলেছেন , পেইচিং ব্যাংকের দেয়া দশ লাখ ইউয়ান ঋণ কাজে লাগিয়ে তার কোম্পানি ইতোমধ্যে একটি ছোট দোকান থেকে এক বড় কোম্পানিতে পনিণত হয়েছে । সারা দেশে এই কোম্পানির মোট ৫৭টি চেইন দোকান আছে । এ সব দোকানে প্রতি বছর দশ কোটি ইউয়ান মূল্যের চা বিক্রি হয় । চু লিলি বলেছেন , আমি যদি ব্যাংক থেকে দশ লাখ ইউয়ান ঋণ না পেতাম , তাহলে আমি এত বেশি চা দোকান খুলতে পারতাম না । পেইচিংয়ের মালিয়েনতাওয়ে আমার চা দোকানের আয়তন পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় ।
যদিও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা সহজ হচ্ছে, তবুও এ ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধাও রয়েছে । যেমন চীনে ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় নি । বর্তমান তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা বড় ও মাঝারী আকারের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য । চীনের ব্যাংকিং তত্ত্বাবধান কমিটির সহকারী চেয়ারম্যান ওয়াং চাও সিং বলেছেন , ব্যাংকিং তত্ত্বাবধান কমিটি কার্যকরভাবে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রনের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার সুবিধা দিতে ব্যাংকগুলোকেউত্সাহ দেয় । তিনি আরো বলেছেন , পরবর্তীকালে ব্যাংকিং তত্ত্বাবধান কমিটি ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ সংগ্রহের পরিবেশ উন্নত করবে , তাদের ঋণ তত্ত্বাবধানের জন্য বিশেষ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করবে এবং ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার কাজ তত্তাবধান করবে ।একই সময় ব্যাংকিং তত্ত্বাবধান কমিটি অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতা করে কর আদায় প্রভৃতি ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি সমর্থন ও সাহায্য দেয়ার চেষ্টা চালাবে ।
|