১৬ অক্টোবর শ্রীলংকার পূর্বাঞ্চলের ট্রিনকোমালী এলাকায় শ্রীলংকার নৌ-বাহিনীর অফিসার ও সৈন্যদের ওপর বিরুদ্ধে একটি আত্মঘাতী গাড়ী বোমা হামলায় কমপক্ষে ১০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং এক শোরও বেশী লোক আহত হয়েছে। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারীতে শ্রীলংকা সরকার ও সরকার-বিরোধী সশস্ত্র তামিল টাটিগার সংস্থার মধ্যে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে এটা হল এ পযর্ন্তসংঘটিত সবচেয়ে মারাত্মক আত্মঘাতী হামলা। ফলে দিন দিন সহিংস সংঘর্ষতীব্রতর হয়ে উঠছে এবং এই সুন্দর দ্বীপ দেশটির শান্তিমূলক প্রত্রিয়াবিপন্ন হয়ে পড়ছে।
ট্রিনকোমালী এলাকার ডামবুল্লা নগরের একটি জনবহুলী পরিবহণ এলাকায় এবারের এই হামলা ঘটে। তখন দু'শোরও বেশী নৌ-বাহিনীর সদস্যবাহী ১৫টি বাস সেখানে অবস্থান করছিল। এ সব অফিসার ও সৈন্য তাদের ছুটি শেষ করে ট্রিনকোমালী বন্দর ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হঠাত বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ী বাসগোলোর দিকে এগিয়ে যায়। তীব্র বিস্ফোরণে ১৩টি বাস বিধ্বস্ত হয়ে বহু সংখ্যক লোক গুরুতর হতাহত হয়েছে। গাড়ীর চালক সঙ্গে সঙ্গে নিহত হয়েছে। বিস্ফোরণের পর আহতদেরকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতলে পাঠানো হয়। শ্রীলংকার একজন সামরিক মুখপাত্র বলেছেন, নিহতদের মধ্যে ৯২জন নৌ বাহিনীর অফিসার ও সৈন্যকে শনাক্ত করা গেছে। বাকীরা হল নৌ বাহিনীতে কর্মরত বেসামরিক কর্মকর্তা।
বতর্মানে শ্রীলংকার সামরিক পক্ষ ও সরকার তামিল টাইগার সংস্থা এই আত্মঘাতী বোমা হামলা পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ করেছে। স্থানীয়তথ্যমাধ্যমগুলোও তাদের সন্দেহভাজন দৃষ্টি টাইগার সংস্থার দিকে নিবিষ্ট করেছে। তথ্য মাধ্যমগুলো মনে করে এটা হল তামিল টাইগারের একটি প্রতীকিহামলা। তা ছাড়া, কেবল মাত্র তামিল টাইগার সংস্থাই এ ধরনের হামলা করার ক্ষমতা আছে। শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে , এবার হামলায় আরেক বার প্রমাণিত হয়েছে যে , তামিল টাইগার সংস্থা এখনও নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যে সহিংসতা সৃষ্টি করছে। সহিংসতা বর্জন করে শান্তিমূলক পথ খুঁজে বের করার জন্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার উদ্দেশ্যে যে আহ্বান জানিয়েছে তামিল টাইগার সংস্থা তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। এ পযর্ন্ত এ ঘটনা সম্বন্ধে তামিল টাইগার সংস্থা কোন মতামত ব্যক্ত করেনি।
স্থানীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন, এবারের হামলা হচ্ছে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শ্রীলংকায় তীব্রতর সহিংস সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি।চলতি মাসের ১১ তারিখে জাফনা উপ-দ্বীপে শ্রীলংকার সরকারী বাহিনী আর তামিল টাইগার সংস্থার মধ্যে তীব্র লড়াই হয়েছে। লড়াইতে তামিল টাইগার সংস্থার দু'শোরও বেশী সদস্য হিহত হয়েছে এবং সরকারী বাহিনীর ১২০ জন প্রাণ হারিয়েছে। দু'পক্ষের চার শোরও বেশী লোক আহত হয়েছে। ১৩ আর ১৪ তারিখে দু'পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাবষর্ণ হয়েছে। এ দু'দিনে তামিল টাইগার সংস্থার বহু সদস্য হতাহত হয়েছে। ১৫ তারিখে শ্রীলংকার নৌবাহিনী তামিল টাইগার সংস্থার একটি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে। কমপক্ষে ৪জন এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে।
অবিরাম সহিংস সংঘর্ষ শ্রীলংকার শান্তিমূলক প্রক্রিয়ার উপর একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বতর্মানে দু'পক্ষের মধ্যে আলোচনার সুষ্ঠু পরিবেশ কোনো মতেই তৈরী করা যায় না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ও মধ্যস্থতার পরিপ্রেক্ষিত সত্বেত্ত দু'পক্ষের মধ্যে বারবার সংঘর্ষ ঘটছে। শ্রীলংকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাময় পরিস্থিতি নিয়নত্রণে আনার জন্যে আন্তর্জাতিক সাম্প্রদায় প্রয়াস চালাচ্ছে। ১৬ অক্টোবর ভোরবেলায় জাপানের বিশেষ দূত এবং শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রাজাপোকসের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। নরওয়ের শান্তিমূলক বিশেষ দূত জন হাসেনও চলতি সপ্তাহের যে কোন সময় শ্রীলংকায় যাবেন। আগামী ১৯ অক্টোবর মার্কিন উপ পররাষ্ট্র মন্ত্রী রিছারদ বোছেরও শ্রীলংকা সফর করবেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষের সঙ্গে লিপ্ত দু'পক্ষ অবশেষে আলোচনার টেবিলে বসবে।
|