v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-10-16 10:19:13    
প্রতিবন্ধীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন

cri
    শ্রোতাবন্ধুরা , সাধারণ লোকের মত প্রতিবন্ধীরাও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, যা চীন সরকারের প্রতিবন্ধীদের যত্ন করার এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থার অন্যতম। বর্তমানে চীনে প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের জন্য মোট চারটি বিশেষ উচ্চ শিক্ষা বিদ্যালয় স্থাপন করেছে। কিছু কিছু সাধারণ উচ্চ শিক্ষা বিদ্যালয়ও প্রতিবন্ধীদের জন্যে ক্লাস প্রবর্তিত রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের উচ্চ শিক্ষা বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ এখন অনেক বেড়েছে ।

    ছাংছুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ শিক্ষা কলেজ চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চিলিন প্রদেশে অবস্থিত। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান ভবনে গিয়ে আমাদের সংবাদদাতা খুবই সুন্দর গানের মিছি সুর শুনতে পান। দেখেছি একজন ছাত্রী তার নাম লিউ চিয়ানছুন সে এ গানের সুরের স্রষ্টা ।

    লিউ চিয়ানছুন হচ্ছেন ছাংছুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ শিক্ষা কলেজের একজন সাধারণ ছাত্রী। তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন যে , তাঁর বয়স যখন ১৫ তখন তিনি অজানা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর হাত ও পা দুর্ভাগ্যজনক হারিয়েছে। কিন্তু তাঁর নিজের লেখাপড়া সে কখনই ত্যাগ করেনি। দীর্ঘকাল নিজের প্রচেষ্টার পর তিনি ৩২ বছর বয়সে ছাংছুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ শিক্ষা কলেজের অভিনয় বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। এখানে লেখাপড়া করেন এবং তাঁর অনেক ভালভাবে সময় কেটে যায় ।

    " প্রত্যেক সেমিস্ট্যারেই আমি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে থাকি, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তা খুবই সমর্থন করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান আমাকে বলেছেন ' তুমি করো, এগুলোর খরচের ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই, বিদ্যালয় তা সব দিয়ে দেবে । তোমার যাতায়াতের অসুবিধা হলে, বিদ্যালয় তোমাকে বিশেষ গাড়ী পাঠাবে।' আমি বধির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নৃতো " লুভ ইয়ে" দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিল্প প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমার মনে হয় নিজের শেখা জিনিস সব তুলে ধরতে পেরেছি ।"

    ১৯৮৭ সালে ছাংছুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ শিক্ষা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তা হলো প্রতিবন্ধীদের জন্যে দেশের সর্বোপ্রথম চালু উচ্চ শিক্ষা বিদ্যালয়। তা স্থাপন করায় ছাত্রী লিউ চিয়ানছুনের মত এ ধরণের প্রতিবন্ধীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এখন এই বিদ্যালয়ে মোট ৫০০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী আছে।

    জানা গেছে, ছাংছুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ শিক্ষা কলেজ বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধীদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, তাদের শিক্ষা বিষয় ধার্য করা হয়েছে। যেমন , বধিরদের জন্যে বিদ্যালয়ের শিল্প ডিজাইন ও ছবি আঁকা এবং অন্ধদের শোনার শক্তি বেশি ভাল তাই অভিনয় ও ঐতিহ্যিক চিকিত্সাকে শিক্ষার বিষয় করা হয়েছে। তাছাড়া, প্রতিবন্ধী অলাস্য ছাত্রছাত্রীদের জন্যে বিদ্যালয়ে কম্পিউটারকে শিক্ষা বিষয় করা হয়েছে।

    ছাংছুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ শিক্ষা কলেজের ভাইস-প্রধান চাও লিজুন বলেছেন যে, বহু বছরে তাঁরা মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্যে একটি ভাল শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন । বর্তমান এ বিদ্যালয়ে ডি.ভি.ডি সহ বহু রকমের আধুনিক প্রযুক্তির ওপর শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে , এবং প্রতিবন্ধীদের জন্যে বিভিন্ন ধরণের পূর্ণাঙ্গ সাজ-সরঞ্জাম দিয়ে পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

    " আমাদের বিদ্যালয়ের বধিরদের , অন্ধদের কম্পিউটার পরীক্ষাগার এবং আরেকটি আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট পরীক্ষাগার আছে। এই ইন্টারনেট পরীক্ষাগারে শুধু প্রতিবন্ধীদের জন্যে প্রতিষ্ঠিত একটি শিক্ষা ওয়েব-সাইট রয়েছে । এখন বিশ্বের মোট ১৩টি দেশের প্রতিবন্ধীরা এই ওয়েব-সাইটে অংশ নেয়। এই ১৩টি সদস্য দেশের জনগণ একসময়, মিলিতভাবে ওয়েব-সাইটের বিষয় শিখতে পারে। তা একটি আধুনিক সাজ-সরঞ্জাম।"

    এ ছাড়া , ছাংছুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ শিক্ষা কলেজে আরো একটি মোট ২ লাখেরও বেশি বই নিয়ে একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্ধদের বই প্রায় ৭ হাজারেরও বেশি ।

    চীনের পশ্চিমাঞ্চলের ছুংছিং শহর থেকে অন্ধ ছাত্রী লিউ রুই ছাংছুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ শিক্ষা কলেজে লেখাপড়া করেন। তিনি বলেছেন যে, এখানে প্রতিদিন লেখাপড়া করতে আমার ভাল লাগে, বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ ছাড়াও , এখানকার শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের যত্নে আমি মুগ্ধ হয়েছি।

    " কারণ আমাদের মধ্যে কিছু কিছু লোক মনে করে যে, আমরা অন্ধ, আমাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের কিছুটা পার্থক্য আছে। এখানে এসে শিক্ষকরা যেমন " দেখতে পারে কিনা" এসব কথা বলবে না। তাঁরা আমাদেরকে সাধারণ মানুষের মতই দেখেন এবং আমাদের জীবনে দৃঢ়ভাবে বেঁচে থাকার কথা বার বার বলেছেন।"

    এর সঙ্গে সঙ্গে এ বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্থ ছাত্রছাত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ করে। যাতে প্রতিবন্ধীদের সমাজে কাজ করার সামর্থ্য উন্নত হয়। " বিদ্যালয় আমাদের লেখাপড়ার সুযোগ দিয়েছে, তারা আমাদেরকে অনেক সাহায্য করেছে। যেমন চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা মাঝে মাঝে এখানে এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এইভাবে আমরা সাধারণ লোকের সাথে আলোচনা করতে পারি, আমাদের অনেক ভাল লাগে।"

    ছাংছুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ শিক্ষা কলেজের প্রধান মনে করেন যে, ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধীদের জীবন আরো বেশি সুন্দর হবে।