v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-10-12 10:27:19    
উন্নয়নের নতুন পথে চীনা মাটি শিল্পের  প্রাচীন নগর চিংতেচেন"

cri
    চীনা মাটির জন্য চীন সারা বিশ্বেবিখ্যাত। চীনে চীনা মাটির জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পনগরের নাম চিংতেচেন। এখানে উত্পাদিত চীনা মাটির জিনিসপত্রের গুণগত মান খুবই উত্কৃষ্ট। সম্প্রতি আমাদের সংবাদদাতা এই শিল্পনগর সফর করেছেন।

    "আপনারা যে সংগীতের সুর শুনছেন, তা নানা রকম চীনা মাটির বাদ্যযন্ত্রে বাজানো সুর। এ কথা জেনে আপনি হয়ত অবাক হবেন। চিংতেচেন শহরে আমরা গভীরভাবে মুগ্ধ হয়েছি যে, চীনা মাটির সংস্কৃতি নগরজীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে।"

    চিংতেচেন দক্ষিণ চীনের চিয়াংশি প্রদেশে অবস্থিত। এখনকার মাটি চীনা মাটির জিনিসপত্র তৈরী করার জন্য খুবই উপযোগী। তা'ছাড়া চিংতেচেন শহরের চার দিকেই সবুজ পাহাড়। পাহাড়ে প্রচুর চিরসবুজ পাইন গাছ। পাইন গাছের কাঠে পাইনতেল আছে বলে, এই কাঠ খুব ভাল জ্বালানি। পাইন কাঠ জ্বালালে ১৩০০ ডিগ্রী সেলশিয়াসের উচ্চ তাপ পাওয়া যায়। এতে ধবধবে সাদা রঙের ঝকঝকে চীনা মাটির পাত্র তৈরি করা যায়। প্রাচীন কালে এই শহরের নাম চিংতেচেন ছিল না। এক হাজার বছর আগে চীনের সোং রাজবংশের আমলে একজন সম্রাট এক রকম সুন্দর চীনা মাটির পাত্র দেখে খুব পছন্দ করলেন। তিনি তাঁর শাসনামলের নাম "চিংতে" শব্দটা দিয়ে এই ধরনের চীনামাটির নামকরণ করলেন। ফলে চিংতে ধরনের চীনা মাটির পাত্রের উত্পত্তিস্থানও চিংতেচেন অর্থাত্ চিংতেশহর নামে সুপরিচিত হল।

    তার পর থেকে চিংতেচেনের চীনামাটির জিনিসের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। সুদূর ইউরোপের লোকেরাও চীনা মাটির জিনিসপত্র খুব পছন্দ করলেন। আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যাদুঘরে চিংতেচেনের চমত্কার চীনামাটির জিনিসপত্র সংরক্ষিত রয়েছে এবং প্রদর্শিত হচ্ছে।

    কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিংতেচেনের চীনামাটির জিনিসপত্র বাজারে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। কারণ এখানকার চীনামাটির পণ্যদ্রব্যের প্যাকিং খুব সাধারণ । নতুন ধরনের পণ্য কম এবং নকল পণ্য বেশি।

    চিংতেচেন শহরের চীনামাটি ব্যুরোর প্রধান হুয়া খাংমিং বলেছেন, " গত কয়েক বছরে আমাদের চীনামাটির বাজারে বিশৃংখলা দেখা দিয়েছে । নকল ও নিকৃষ্ট পণ্যে বাজার ছেয়ে গেছে। ২০০১ সালে বিদেশে চিংতেচেনের নামে নকল পণ্যমেলা আয়োজিত হয়েছে। দেশে আমাদের চিংতেচেনের ট্রেডমার্কের নামে সস্তা ও নিকৃষ্ট ধরনের চীনামাটির জিনিসপত্রের কাঁচা বাজার দেখা দিয়েছে। অনেক সময়ে ফুটপাথে চিংতেচেনের নামে চীনামাটির জিনিসপত্র বিক্রী করার ব্যবস্থা হয়।"

    ফলে সত্যিকারের চিংতেচেন ট্রেডমার্কের চীনামাটির জিনিসপত্রের ক্ষতি হয়।

    নকল দমনের জন্য চিংতেচেন শহরের শিল্প ও বাণিজ্য ব্যুরো এবং আইন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে কড়া ব্যবস্থা নেয়া হয়। "মেধাসত্ব সংরক্ষণের বিশেষ আদালত" প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ৫ বছরে নকল চিংতেচেন চীনামাটি পণ্যের বিরুদ্ধে ২০০টিরও বেশি মামলার বিচার করা হয়েছে । ফলে বাজারের শৃংখলা অনেকটা ফিরে এসেছে।

    গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে চিংতেচেন চীনামাটি শিল্পের অবনতি দেখা দিয়েছিল। সেই সময়ে চিংতেচেনের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানই নামকরা বিদেশী কোম্পানির প্রক্রিয়াকরণ ঘাঁটির ভূমিকা পালন করেছে । অর্থাত্ নিজেদের পণ্যদ্রব্যের ওপর বিদেশী ট্রেডমার্কের লেবেল এঁটে 'প্রক্রিয়াকরণের' সামান্য পারিশ্রমিকই শুধু উপার্জন করেছে । এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য চিংতেচেনের ৫টি বড় চীনামাটির কারখানা একত্রিত হয়ে একটি বড় কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করলো। এই কোম্পানি নিজস্ব ট্রেডমার্কের উন্নত মানের চীনামাটির জিনিসপত্র উত্পাদন এবং বিক্রী করতে শুরু করলো। নিজস্ব ট্রেডমার্ক প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে চিংতেচেন শহরের মেয়র ইয়ু কুওছিং বলেছেন, " বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, নিজস্ব ট্রেডমার্ক সুপ্রতিষ্ঠিত করা একান্ত প্রয়োজন। এতে বাজারে আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষমতা বেড়ে যায়। এটা আমাদের পণ্যের গুণগত মানের উন্নয়নের অনুকূল এবং এতে আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উন্নততর করা যায়। তা'ছাড়া এটা ক্রেতাদের স্বার্থ সংরক্ষণেরও অনুকূল ।"

    শুধু ট্রেডমার্ক সুপ্রতিষ্ঠা করলে যথেষ্ট নয়। আমাদের পণ্যের গুণগত মান অবশ্যই উন্নত করতে হবে। অতীতে চিংতেচেনের নামকরা পণ্য ছিল রঙিন চীনামাটির পাত্র। অর্থাত্ চীনামাটির পাত্রে রঙিন ছবি আঁকা হয়। এটা দেখতে খুব সুন্দর হলেও, এ-রকম চীনা মাটির পাত্র গরম হলে ধাতুর উপাদান বেরিয়ে পড়তে পারে। তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের পণ্য বর্তমান আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য চিংতেচেনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণা চালিয়ে এক রকম নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এই নতুন প্রযুক্তিতে উত্পাদিত চীনা মাটির পাত্রে কেবল সুন্দর রং বজায় রাখা হয় তাই নয়, উপরন্তু ক্ষতিকর ধাতব উপাদান বেরিয়ে পড়ার পরিমাণ একেবারে কমানো যায়।

    নিত্যব্যবহার্য চীনামাটির পাত্র ছাড়াও চিংতেচেনে চীনামাটির নির্মাণ সামগ্রি এবং চীনামাটির শিল্পকর্ম তৈরি হচ্ছে। চীনা মাটির নতুন নতুন জিনিসপত্র উদ্ভাবন করা হচ্ছে। ৬ নম্বর মানুষবাহী নভোযানের তাপ-প্রতিরোধ এবং বুলেট-প্রুফ চীনামাটির উপকরণ এখানেই তৈরী হয়েছে। চীনা মাটি দিয়ে বাদ্যযন্ত্রও তৈরি হয়েছে।

    হাজার বছরের ইতিহাস-সম্পন্ন এই চীনামাটির শিল্পনগরের টেকসই উন্নয়ন বজায় রাখার জন্য কর্মী প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে জাতীয় কারুশিল্প গ্র্যাণ্ড মাস্টার লিউ ইউয়ানছাং বলেছেন, "মানুষ থাকলে আশা থাকবে, প্রতিভাবান ব্যক্তি থাকলে আমাদের ভবিষ্যত্ উজ্বল হবে। প্রতিভাবান ব্যক্তিই এক রকম সম্পদ। বর্তমানে আমরা নতুন ধারণা উদ্ভাবনের জন্য উত্সাহ দেই । অর্থাত্ মানুষের সৃজনী শক্তি কাজে লাগাতে চাই। চিংতেচেন চীনামাটির কারু শিল্প কর্ম সৃষ্টির এক শিল্পনগরে পরিণত হবে।"

    চিংতেচেন চীনামাটি ইনস্টিটিউট এক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ছাত্রছাত্রীদের মোট সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য চীনামাটি শিল্পের প্রযুক্তিবিদ এ কারুকলাশিল্পী তৈরি করা হচ্ছে। একই সময়ে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণাও চলছে। গবেষণার ফলাফল এখানে খুব দ্রুত নতুন পণ্যদ্রব্যে পরিণত করা হচ্ছে।