v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-10-11 20:07:14    
লং মার্চ - অভূতপূর্ব কাহিনী

cri
    যদিও চীনা জনগণ শান্তি ও স্থিতিশীলতার মধ্যে ৫০ বছর ধরে দিন কাটিয়েছেন , তবুও ৭০ বছরের আগেকার লং মার্চ বোধ হয় কোনো দিন চীনাদের জীবন থেকে বিস্মিত হয়ে যাবে না । চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগের সংগে অগ্রসর হওয়ার সময় লং মার্চকে স্মরণ করতে হবে । সাধারণ লোকের মধ্যে পরস্পরকে অনুপ্রেরণা দেয়ার সময় লং মার্চের কথা উল্লেখ করতে হবে । জাতীয় স্বার্থকে সবার ওপরে রাখতে হবে , লং মার্চে প্রদর্শিত এই ভাবানুভূতি সবসময় চীনকে বিমুগ্ধ ও উত্সাহিত করে চলেছে । চীনের জনসাধারণের মধ্যে লং মার্চের সংগে সম্পর্কিত কাহিনী মুখে মুখে প্রচলিত রয়েছে ।

    ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত জাপানী আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং দেশের অভ্যন্তরে সামরিক শক্তিগুলোর অপ্রয়োজনীয় সংঘাত এড়ানোর জন্যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন লাল ফৌজ দু বছরের মধ্যে ১২ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে চীনের ১৪টি প্রদেশে শত্রু বাহিনীর পিছু ধরা এবং দুরুহ প্রাকৃতিক অবস্থার মুখে লাল ফৌজের তিনটি বাহিনীকে ইয়াং সি নদীর অববাহিকা থেকে নিরাপদ উত্তর-পশ্চিমাংঞ্চলে স্থানান্তর করেছে এবং জাপানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালানো এবং চীনের বিপ্লবী ব্রত উন্নয়নের জন্যে অনুকুল অবস্থা সৃষ্টি করেছে । চীনের লাল ফৌজের এই মহা অভিযান চীনে লং মার্চ বলে পরিচিত ।

    লং মার্চের বিজয় মানব জাতির ইতিহাসে একটি বিস্ময় বলে বিবেচিত হয় । তবে চীনা গণ মুক্তি ফৌজের দ্বিতীয় গোলন্দাজ বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনান্ট জেনারেল লোও তুং চিনের চোখে গৃহ যুদ্ধ এড়ানো , লাল ফৌজের কার্যকরী শক্তি বজায় রাখা এবং বিদেশী আগ্রাসীদের প্রতিরোধ করার জন্যে লং মার্চ করা হয়েছিল । লং মার্চ করতে গিয়ে অতুলনীয় প্রাণহানি ঘটেছে । তখনকার পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে লং মাচ করা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না । তিনি বলেছেন ,

    চীনের লাল ফৌজ বাধ্য হয়ে লং মাচ করেছিল । তবে লং মার্চে চীনের কমিউনিস্ট ও প্রবীণ বিপ্লবী নায়কদের দৃঢ় প্রত্যয় প্রতিফলিত হয়েছে । এই প্রত্যয় ছিল চীনে শোষণহীন ও নির্যাতনবিহীন একটি সমাজ গড়ে তোলা যেখানে জনগণই হবে দেশের মালিক । এই পবিত্র লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে তারা সব ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলেন । লং মার্চ শুরু করার সময় লাল ফৌজের সৈন্য সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ছিল । লং মার্চ শেষ হলে সৈন্য সংখ্যা মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাজারে দাঁড়িয়েছিল । অসংখ্য সৈনিক নিহত হয়েছেন । লং মার্চ সম্পন্ন করতে লাল ফৌজকে কল্পনাতীত বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করতে হয়েছে ।

    এত নিদারুণ প্রাণহানি কি করে হয়েছিল ? তার প্রধান কারণ ছিল প্রতিদিনের তীব্র লড়াই । নয়া চীনের প্রখ্যাত আর্মী জেনারেল হোয়াং খে ছেং লং মার্চের সময় তার সহযোদ্ধাদের লাশগুলো অনুসরণ করে সামনে অগ্রসর হয়েছিলেন । তাঁর মেয়ে হোয়াং মেই বলেছেন ,

    আমার বাবা আমাকে বলেছেন , লং মার্চের প্রথম দিকে রোজ শত্রু বাহিনীর সংগে খন্ড যুদ্ধে লিপ্ত হতে হতো । তখন খাওয়া পরার খুবই অভাব ছিল । রোজই লড়াই করতে হতো এবং হাঁটাহাঁটি করতে হতো । তিনি বলেছেন , কোনো গাইডের দরকার ছিল না, কেবল সহযোদ্ধাদের লাশ দেখে দেখে সামনে যেতাম । বিশাল ঘাসের ভূমিতে কোনো পথও ছিল না , কেবল ছিল সামনে চলমান সহযোদ্ধাদের লাশ ।

    এসব প্রতিকূল অবস্থা থাকা সত্ত্বেও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন লাল ফৌজ , বিশেষ করে তার সামরিক অধিনায়কেরা তাদের অসাধারণ সাহস ও বিচক্ষণতা দিয়ে নমনীয় রণকৌশল অবলম্বন করে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও উত্তর-পশ্চিমাংশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শত্রুদের মোকিবিলা করেছে এবং লাখ লাখ শত্রু বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে । চীনের লাল ফৌজ পাতলা বাতাসে আচ্ছন্ন বরফে ঢাকা পর্বত ডিঙ্গিয়ে এবং নির্জন ঘাসের ভূমি অতিক্রম করে চীন ও বিশ্বের সামরিক ইতিহাসে অভূতপূর্ব কৃতিত্ব স্থাপন করেছে ।

    চীনের কমিউনিস্ট ও লাল ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুং লং মার্চে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং বিজয় অর্জন করেছিলেন । লং মার্চের সময় তিনি বহুবার সৈনিকদের প্রাণহানিতে ও জনসাধারণের স্নেহ-মমতায় কেঁদে ওঠেছিলেন । মাও সে তুংয়ের কবিতায় অভিযাত্রার পথে দেখা দেয়া বিপদসংকুল উচুঁ পাহাড় ছিল ধুলিমাটির মত এবং বিশাল নদ-নদী ছিল কেবল নরম স্রোতের মত । মাও সে তুং এই রকম অদম্য মনোবল নিয়ে শত বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়ে লাল ফৌজকে নেতৃত্ব দিয়ে বিজয় অর্জন করেছেন । লং মার্চে অংশগ্রহণকারী অসংখ্য বীরদের মহিমার প্রশংসায় রচিত গানগুলো কয়েক দশক ধরে লোকের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে এসেছে ।

    লং মার্চের বাহিনীতে যেমন ছিলেন ৬০ বছর বয়সের বৃদ্ধ , তেমনি ছিল ৯ বছরের শিশু । যেমন ছিলেন কিছু সংখ্যক নারী সৈনিক , তেমনি ছিলেন কোরিয়া , ভিয়েতনাম ও জার্মানী থেকে আসা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা । লং মার্চের সময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পদস্থ নেতা ও সামরিক অধিনায়করা সাধারণ সৈনিকের মত ঘাস দিয়ে তৈরি জুতো পরতেন এবং একই খাবার খেতেন । তারা সাধারণ সৈনিকদের সংগে সুখ দু:খের সমভাগী ছিলেন । চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও এমন নীতিতে বিশ্বাসী।

    ৯৪ বছর বয়সের বৃদ্ধ লিউ চিয়া ছিন লং মার্চে অংশ নিয়েছিলেন । তিনি আজও মনে করেন যে, লং মার্চের সময় ক্ষমতার ওপর ব্যক্তি বিশেষের প্রত্যাশা সচেতনভাবে আদর্শের নীচে রাখা হয়েছিল । তিনি বলেছেন ,

    কর্মকর্তা হওয়া ,না হওয়া বড় কথা ছিল না । বিপ্লবের জন্যে কিছু কাজ করলে আমরা সন্তুষ্ট হতাম । আমাদের বিপ্লবের উত্তরসুরী থাকলে এবং বিপ্লব সফল হলে আমরা আনন্দিত হতাম ।

    লং মার্চের সময় চীনের লাল ফৌজ বহু সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত এলাকায় গিয়েছিল । সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সমর্থন পাওয়ার জন্যে লাল ফৌজের প্রখ্যাত নেতা মার্শল লিউ পোও ছেং ই জাতির সর্দারের সংগে ঘনিষ্ঠ মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন । তিব্বতী ও ই জাতির বহু লোক চীনের লাল ফৌজে যোগ দিয়েছিলেন । সংখ্যালঘু জাতিগুলোর জনসাধারণ গান গেয়ে গেয়ে লাল ফৌজকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ।

    চীনের লং মার্চ চীনা জনগণের মনে অফুরন্ত মানসিক শক্তি সৃষ্টি করেছে , শুধু তাই নয় , লং মার্চের কাহিনী চীনের সীতান্ত ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে ।