v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-10-10 21:55:00    
খাল সংস্কৃতির সুরক্ষা মানে খাল অঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়ন

cri
    পেইচিং -হাংচৌ খাল অথবা চিংহাং খাল যা উত্তর চীনের পেইচিং থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ চীনের হাংচৌ শহরে পর্যন্ত বিস্তৃত। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার । খ্রীষ্ট পূর্ব ৪৮৬ সালে উ সম্রাট ফুছাই কর্তৃক হানকৌ থেকে খাল উন্নত করার কাজের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এ খালের ২৪৮৭ বছরের ইতিহাস রয়েছে । চিংহাং খাল চীনের হাইহোনদী, হুয়াংহো নদী, হওয়াইহো নদী, ইয়াংসি নদী ও ছিয়াংথাও নদী পাঁচটি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত এবং পেইচিং, থিয়ানচিন, হোপেই, শানতুং, চিয়াংসু ও চেচিয়াং ছয়টি প্রদেশ অতিক্রম করেছে । এর দৈর্ঘ্য সুয়েজ খালের চেয়ে ১০ গুণ বেশি, পানামা খালের চেয়ে ২২ গুণ বেশি এবং এটা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ও পুরনো খাল । চিংহাং খাল চীনের মহাপ্রাচীরের মত চীনের প্রাচীনকালে দু'টি চমত্কার প্রকল্প হিসেবে বিশ্বে সুনাম পেয়েছে । শাংতুং প্রদেশের চিনিং শহরে অবস্থিত চিংহাং খালের অংশ হচ্ছে গোটা খালের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র । চিংহাং খাল চালু হওয়ার পর চিনিং শহরের জনগণ কয়েক শো বছর ধরে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খাল সংস্কৃতির সৃষ্টি করেছেন ।

    বর্তমান সময়ে আরো ভালভাবে খাল সংস্কৃতির উত্তরাধীকার অব্যাহত রাখা এবং খাল অঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্যে শাংতুং প্রদেশের চিনিং শহরের চোংছুই অঞ্চলের সরকারের উদ্যোগে "সংস্কৃতিময় খালের শহর" শীর্ষক এক ফোরামের আয়োজন করে । আমাদের সংবাদদাতা এ ফোরামে অংশগ্রহণ করেছেন । অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ খাল সংস্কৃতির সুরক্ষা এবং খাল অঞ্চলের অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নের ওপর মত প্রকাশ করেছেন ।  

    চিনিং শহরের সংস্কৃতির ইতিহাস সুদীর্ঘকালের । তা হচ্ছে চীনা জাতির মৌলিক সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ জন্মস্থান । এখানে ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি, কনফুসিয়াস সংস্কৃতি ও খাল সংস্কৃতি চীনা সংস্কৃতির ইতিহাসে উজ্জ্বলতম প্রভাব ফেলেছে । হাজার হাজার বছর ধরে চিনিং শহরের জনগণ খালের উন্নতি , নির্মাণ ও ব্যবহারের প্রক্রিয়ায় ওপর আঞ্চলিকতার আলোকে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নিজস্ব খাল সংস্কৃতির সৃষ্টি করেছেন । বিশ্বের জনগণকে উজ্জ্বল খাল সংস্কৃতি জানানোর জন্যে চিনিং শহরের খাল সংস্কৃতি গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান চাং জিই এবং অন্য দু'জন লেখক তু ইশেং, চাং থুংলিয়ানের সঙ্গে "খালের ইতিহাস"এর পূর্বাপর বর্ণনা করেছেন । যা খাল সংস্কৃতির উত্তরাধীকারের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে । সংবাদদাতাদের সাক্ষাত্ দেয়ার সময়ে চাং জিই আমাদের জন্য চিংহাং খালের নির্মাণ ইতিহাস জানিয়েছেন । তিনি বলেছেন ,

    চীনের খালের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের এবং দৈর্ঘ্যও সবচেয়ে দীর্ঘ। খ্রীষ্টপূর্ব ৪৮৬ সালে চুনছিউ রাজবংশের শেষ দিকে উ সম্রাট ফুছাই উত্তরচীন দখল করার জন্যে হাংকৌ থেকে বাহিত এই খাল উন্নত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন । কারণ তাঁর বাহিনী প্রধানত নৌ বাহিনী । তারা শুধু নৌ পথের মাধ্যমেই উত্তর চীনে প্রবেশ করতে পারেন । তখনও ইয়াংসি নদী থেকে উত্তর চীনে যাতায়াতের নৌ পথ নির্মিত হয় নি , এর জন্যে হাংকৌ থেকে বাহিত এই খাল উন্নত করে ইয়াংসি নদী থেকে উত্তর চীনের পৌঁছার নৌ পথ নির্মাণ করা হয় । এটা হল পেইচিং থেকে হাংচৌ পর্যন্ত প্রথম খাল নির্মাণকাজের শুরু ।

    সংস্কৃতি হচ্ছে মানবজাতির সমৃদ্ধির সাফল্যের পথ , জাতীয় জীবনের অমূল্যসম্পদ, সমাজ উন্নয়নের নির্দেশনা । এ জন্য সংস্কৃতির সংরক্ষণ বিভিন্ন দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । চীনের থোংচি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা ইস্টিডিউটের প্রফেসর, রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির বিখ্যাত নগর গবেষণা কেন্দ্রের পন্ডিত ডক্টর ইউয়ান ইসান শানতুং প্রদেশের খাল অঞ্চলের নগর সংস্কৃতির সংরক্ষণ নিয়ে সংবাদদাতাদের সাক্ষাত্কার দিয়েছেন । তিনি বলেছেন,

    আমরা প্রধানত শাংতুং প্রদেশের তে চৌ, লিয়াও ছেং, থাইআন, চিনিং, চাওচুয়াং ইত্যাদি অঞ্চলে পর্যবেক্ষণ করেছি । এসব অঞ্চলে খাল তীরের শহরের বৈশিষ্ট্য রয়েছে । প্রত্যেক শহরে খাল তীরের প্রাচীন অধিবাসীদের বসবাস, ছিং রাজবংশের পুরনো জেলা, নদী তীরের দোকান এবং পাথরের মিনার দেখা যায় । কিন্তু অর্থনীতির উন্নয়নের পাশাপাশি, কিছু অঞ্চলের সাংস্কৃতিক উত্তরাধীকার ভালভাবে সুরক্ষা করা হয় নি ,এটা খুবই দুঃখের ব্যাপার । আমি জানি, চিনিং শহর এখন খালের সুষ্ঠু সংরক্ষণের লক্ষ্যে বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধীকারের জন্য আবেদন করছে । আমি আশা করি চিনিং শহরের সরকার ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে । সরকারের প্রচেষ্টার পাশা পাশি নাগরিকদের কাছে সংস্কৃতির উত্তরাধীকারীতা সংরক্ষণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করবে । আমাদের বংশধরের শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতি উত্তরাধীকারতীতা বজায় রাখার জন্য আমাদের সংস্কৃতির উত্তরাধীকারীতা পুনরানয়ন করা উচিত । যারা পর্যটন সম্পদ উন্নত করার জন্যে সংস্কৃতির উত্তরাধীকারীতা ধ্বংস করার ধৃষ্টতা দেখায় তাদের দৃঢ়ভাবে বিরোধীতা করা হবে ।"

    খাল সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য শানতুং প্রদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকার অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছে । খাল সংস্কৃতির সংরক্ষণ ফোরাম ও সম্মেলন বহুবার আয়োজন করার মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে সমাজের বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিদের কাছে খাল সংস্কৃতির সংরক্ষণের গুরত্ব ও তাত্পর্য ব্যাখ্যা করেছে । ১৯৮৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত চিনিং শহরে মোট ৫ বার এই ফোরাম বা কার্যক্রম আয়োজন করা হয়েছে ।

    পাঁচ বারই ফোরামের মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে আশা ব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া গেছে, সরকার খালের ব্যবহার ও উন্নয়নের ওপর অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে । প্রথমেই নৌ পরিবহনের জন্য পুঁজি বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে । গত ছয় বা সাত বছরের মধ্যে মোট পুঁজি বিনিয়োগ ১.৩ বিলিয়ন ইউয়ান এবং চিনিং থেকে চাওচুয়াং পর্যন্ত, চিনিং থেকে তাইএরচুয়াং পর্যন্ত তিন শ্রেণীর ১০০এরও বেশি কিলোমিটার নৌ পথ ,দুটি সুইস গেট এবং ছয়টি নৌবন্দর নির্মাণ করেছে । বর্তমানে দক্ষিণ চীনের কয়লা প্রধানত খালের মাধ্যমেই পরিবহন করা হয় । প্রত্যেক বছর পরিবহনের পরিমাণ ২ কোটিরও বেশি টন । চিনিং থেকে ওয়েইশানহু নদী পথে একটি জাহাজের পরিবহনের পরিমাণ ছয়টি ট্রেনের পরিবহনের পরিমাণের প্রায় সমান ।

    এটা থেকে বোঝা যায় যে ,যুক্তিযুক্ত প্রণয়ন ও পরিকল্পনার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক উত্তরাধীকারীতার সংরক্ষণ, পর্যটন সম্পদের উন্নয়ন এবং অর্থনীতি শিল্পের উন্নয়ন সুষমভাবে হতে পারে । পেইচিং হাংচৌ খাল হচ্ছে মানবজাতির ইতিহাসে একটি শ্রেষ্ঠ মুক্তা বা সম্পদ । আশা করি, বিভিন্ন পর্যায়ের সরকার খালের সংরক্ষণ ও সংস্কৃতির উত্তরাধিকারীতার জন্য আবেদনের প্রচেষ্টা চালাবে এবং এর ফলে চিনিং শহরের ভবিষ্যত আরো উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হবে ।