 তিন বছর আগে, ইন ইয়েন পেইচিংয়ে য়োগী নামক যোগ চর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যস্ততম হৈচৈ শহরে শান্ত যোগ চর্চা করার প্রবণতা যেন বষন্তকালের হায়ু শহরের ব্যস্ত মানুষের রক্তের ভেতর প্রবাহিত। এবং যোগ চর্চা স্বাস্থ্যবান জীবনের একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ইন ইয়েনের মনের শান্তি খোঁজার প্রক্রিয়াও যেন একটি মুগ্ধকর কাহিনী ।
সম্প্রতি যোগ ব্যয়াম শরীর চর্চার পদ্ধতি পেইচিংয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইন ইয়েনের যোগী যোগ চর্চা কেন্দ্র বিভিন্ন কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। ভারতীয় যোগী মোহান হলেন যোগী যোগ চর্চা কেন্দ্রের প্রতীক। তিনি সব সময় সাদা রংয়ের কাপড় পরেন। তার স্বচ্ছ চোখ সহজে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
তিন বছর আগে য়োগী যোগ চর্চার প্রথম কেন্দ্র সূর্য মন্দিরের ঘন্টা ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন তার দশটি কেন্দ্র ও কয়েক ডজন দোকান প্রতিষ্ঠিত হয়। তার সদর দফতর পূর্ব পেইচিংয়ের ছাও ইয়াং পার্কে অবস্থিত। ইন ইয়েন বলেছেন:
"সাফল্য এখন মানুষের একমাত্র লক্ষ্য নয়। স্বাস্থ্য ও সুখ মানুষের লক্ষ্য পরিণত হয়েছে। যোগ ব্যয়াম শরীর চর্চার একটি পদ্ধতি হিসেবে শুধু শরীরের অবস্থার উন্নতী করতে পারে তা নয়, বরং মানসিক অবস্থারও বেশ উন্নতী করতে পারে। আধুনিক সমাজে আমাদের জীবনের গতি খুব দ্রুত। প্রতি মানুষের মস্তিস্কে উপরে বিপুল চাপ ফেলে। ধীর স্থীর থাকা খুব কঠিন। যোগ ব্যয়াম এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে।"
আসলে ইন ইয়েনের নিজের এমন এক ভারসাম্যহীন সময় ছিলো।
ইন ইয়েনের জীবনে অনেক সাফল্য এসেছে। তিনি পিকিং ইউনিভার্সিটি থেকে ফরাসী বিষয়ের ওপর ব্যাচেলর ডিগ্রি পেয়েছেন। এরপর পেইচিং ফিল্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার ডিগ্রী পেয়েছেন। তারপর ফ্রান্সে গিয়ে চলচ্চিত্রের ডক্টরেট ডিগ্রী পেয়েছেন। বিয়ের পরে এমবিএ করেছেন। তিনি বিখ্যাত ম্যাগাজিন "এলি"র সম্পাদক ছিলেন। তিনি সুন্দর, রোমানটিক, ক্রিয়েটিভ। কিন্তু ৩৯ বছর বয়স্ক ইন ইয়েন তার চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:
"আমি নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করি। আমি সাফল্য চাই, সমাজে নিজের ভূমিকা চাই। কিন্তু আমি সুখী নই। আমি সব পেয়েছি, কিন্তু আনন্দ পাই না। আমি নিজকে হারিয়েছি।"
তখন ইন ইয়েন সব ছেড়ে দিয়ে নিজকে খুঁজ করার ভ্রমণ শুরু করেছে। তার মনে পড়েছে চলচ্চিত্রের একটি কথা: ভারতে তুমি নিজকে দেখতে পারো। তাই ইন ইয়েন ভারতের রিশিকেশে গিয়েছে। সে বলেছে:
"অবশেষে আমি নিজেই নিজেকে ভালোভাবে কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছি। আমি জানতে চাই: আমি কে? কি করে আমি সুখি হতে পারি?। ভারতের সংস্কৃতি এবং সুগভীর। আমার আশা হলো একটি প্রাচীন সভ্যতা থেকে কিছু জ্ঞান পেতে পারি।"
রিশিকেশে ইন ইয়েন যোগী মোহানের সঙ্গে দেখা হয়। মোহানের উপদেশে সে শান্তি পেয়েছে। তার হৃদয়কে যেন নিষ্পাপ রোদ আলোকিত করেছে। সে নিজকে খুঁজে পেয়েছে। ইন ইয়েন বলেছেন:
"ভারতে আমি জীবনের মূল্য খুঁজে পেয়েছি। এবং জীবনের অনেক নিয়ম অনুভূতি করেছি। আমি আবার আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। আমি মনে করি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো নিজকে জানতে পারা।"
পরে ইন ইয়েন মোহানকে পেইচিংয়ে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ইন ইয়েন আরো বেশি মানুষের সঙ্গে যোগ চর্চারের আনন্দ ভাগাভাগি করতে চান। ইন ইয়েন "বুদ্ধি গাছের নিচের সূর্য বৃষ্টি-ভারতে হৃদয়ের ভ্রমণ" নামক একটি বই লিখেছেন। বইতে ইন ইয়েন নিজের শান্তি পাওয়ার ভ্রমণ ও প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছেন।
ইন ইয়েন বলেছেন, এখন যোগ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা করে আগের চেয়ে তিনি আরো ব্যস্ত। কিন্তু তার মাথায় কোনো চাপ নেই। ৪০ বছরের ইন ইয়েন আগের চেয়ে আরো সন্দর এবং দৃষ।টি নন্দন হয়েছেন। তিনি বলেছেন, জীবনের আসল অংশ খুঁজতে পারলে আর সমন্বিত অবস্থায় থাকলে মানুষ ভেতর ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই সুন্দর হয়।
|