v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-10-06 19:21:45    
চাং হাইথাও ও ওয়াং চিংয়ের প্রেমের কাহিনী

cri

    ১৯৯৭ সালের ১৪ জুলাই চীনের চিলিন প্রদেশের ছাংছুন শহরে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় ২৩ বছর বয়সী চাং হাইথাও গুরুতর আহত হন । বুকের হাড় এবং মেরুদন্ড ভেঙ্গে যায় বলে তার অবস্থা অত্যন্ত বিপদ্জনক হয়ে ওঠে । ডাক্তারদের আপ্রাণ চেষ্টায় চাং হাইথাওয়ের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে বটে । কিন্তু তার শরীর বুক থেকে পা পযন্ত অবশ হয়ে যাওয়ায় তিনি এক অবশ মানুষে পরিণত হন ।

    নিজের অবশ শরীর দেখে চাং হাইথাও দুঃখ-বেদনায় ভেঙ্গে পড়েন এবং আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন । বাবামার পরামর্শ অনুযায়ী তিনি আত্মহত্যার মনোভাব ছেড়ে দেন। তার মন যেন মরে গেছে,তিনি জীবিত থাকার আস্থাও হারান ।এমনি অবস্থায় তিনি নিঃসঙ্গভাবে ৫ বছর কাটিয়েছেন। ২০০৪ সালের ২৮ জুলাই এক ভুল নম্বরে মোবাইল ফোনে তার মরা ও রসহীন জীবনে প্রাণ সঞ্চারিত হয় ।

    ফোন করলেন এক মহিলা । তিনি ভুল নম্বরে ফোন করলেন । ফোন বন্ধ করার পর বিরক্তিকর অবস্থায়রত চাং হাইথাওয়ের মাথায় এক অদ্ভূত ধারণা জাগে যে,ওই মোবাইলের নম্বরে এক ই-মেল পাঠালে কেমন হয় । সঙ্গে সঙ্গে তিনি এক ই-মেল পাঠালেন । তিনি ই-মেলে লিখেছেন, আমি বুক থেকে পা পযন্ত অবশ লোক । আমার জীবন মরা জীবন,যিনি আমার কথা শুনতে চান আমি এমন এক লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে চাই । চাং হাইথাও ভাবতে পারেননি যে, তার ই-মেলের উত্তর আসবে । পরের দিনগুলোতে চাং হাইথাও এই মহিলাকে একটানা আরও কয়েকটি ই-মেল পাঠালেন । এভাবে চাং হাইথাও মহিলার সঙ্গে ই-মেলের মাধ্যমে কথাবার্তা শুরু করলেন । ই-মেলে চাং হাইথাও জানতে পারলেন,ভুল নম্বরে মোবাইল করা মানুষটি একজন ৩৪ বছর বয়সী এক মহিলা ।তিনি ছাংছুন শহরে থাকেন । কয়েক বছর আগে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে । এখনো বিবাহ-বিচ্ছেদের কালো ছায়া থেকে বের হননি বলে তার মন অত্যন্ত খারাপ । চাং হাইথাও নিজের দুঃখ-দুর্দশা পাশে রেখে মহিলাকে সান্ত্ত্বনা দেন । কিছু দিন পর চাং হাইথাও মহিলাটির ই-মেলে কিছু সুখ-আনন্দের লক্ষণ উপলব্ধি করলেন । এজন্যে তিনি যে আনন্দ পান তা কখনো হয়নি । কারণ তিনি উপলব্ধি করেছেন যে,তিনিও অন্য কাউকে সাহায্য করতে সক্ষম এমন এক মানুষ ।

    যিনি চাং হাইথাওয়ের সঙ্গে মোবাইলের মাধ্যমে ই-মেল বিনিময় করেন তার নাম ওয়াং চিং । বিবাহবিচ্ছেদের পর প্রফুল্ল ওয়াং চিংয়ের বিরাট পরিবর্তন হয়েছে । তিনি আর কারো সঙ্গেও কথাবর্তা বলেন না । মা তাকে যে কয়েক জন নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তিনি বারবার তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন । তিনি কখনো পরিচিত মানুষকে নিজের মনের দুঃখ ও বেদনার কথা বলেন না । কারণ তিনি চান না যে,কাছের লোক তার দুবলতা জেনে যাক। কিন্তু কেউই ভাবতে পারেন না যে,এই সময় অপরিচিত চাং হাইথাও তার জীবনে আসতে পারেন । কারণ চাং হাইথাও এক অপরিচিত লোক , তাই ওয়াং চিং সহজভাবে মনখুলে নিজের গল্প তাকে বলতে পারেন । ওয়াং চিং অনুভব করতে পারেন যে, যখন তিনি নিজের অভিজ্ঞতা বলেন তখন চাং হাইথাও মনোযোগের সঙ্গে শুনেন এবং সত্যিকারভাবে তাকে সময় দেন । ধীরেধীরে ওয়াং চিং মানসিকতার দিক থেকে চাং হাইথাওয়ের উপর নির্ভরশীল হয়েছেন । এক দিন ওয়াং চিংয়ের মনে এক ধারণা হল যে, চাং হাইথাওয়ের সঙ্গে তার একবার দেখা করা দরকার ।

    ওয়াং চিংয়ের অনুরোধ একেবারে চাং হাইথাওয়ের কল্পনার বাইরে । প্রথমে তিনি অনেক চিন্তা ও ভাবনার পর কঠিনভাবে ওয়াং চিংয়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন । তারপরও ওয়াং চিংয়ের বারবার অনুরোধে তিনি সাক্ষাত করতে রাজী হয়েছেন ।

    সাক্ষাতের সেই দিন ওয়াং চিং বিশেষভাবে নিজকে সাজিয়েছেন এবং আনন্দের সঙ্গে চাং হাইথাওয়ের বাড়ি অভিমুখী বাসে উঠলেন । এই দিন চাং হাইথাও খুব ভোরে উঠে ওয়াং চিংয়ের আগমনের অপেক্ষা করলেন । তিনি এত অস্থির যে,যখন ওয়াং চিং নিজের সামনে হাজির হচ্ছিলেন তখন তিনি একটি কথাও বলতে পারছিলেন না । সাক্ষাতের সময়ে ওয়াং চিং খুব কম কথা বলেন । তার মন অস্থির হল । কারণ তিনি বিশ্বাস করতে পারেন না যে,মোবাইলের মাধ্যমে যিনি তাকে সাত্ত্বনা ও উত্সাহ দেন তার শারীরিক অবস্থা এত খারাপ । এটা ভেবেই ওয়াং চিং খুবই মুগ্ধ হন । চাং হাইথাওয়ের বাড়ি ত্যাগ করার সময়ে ওয়াং চিং মনেমনে সিদ্ধান্ত নিলেন যে , তিনি অবশ্যই এই পুরুষের জন্য কিছু করবেন ।

    এর পর ওয়াং চিং বারবার চাং হাইথাওকে দেখতে আসেন এবং তাকে অনেক জিনিস উপহার দেন । মেলামেশার মাধ্যমে ওয়াং চিং উপলব্ধি করেন, চাং হাইথাও রসপূর্ণ ও বুদ্ধিমান মানুষ । কিছু সময়ের পর নিজেই চাং হাইথাওকে ভালবেসে ফেলেছেন বলে ওয়াং চিং মনে করেন । কিন্তু নিজের বয়স চাং হাইথাওয়ের চেয়ে ৬ বছর বড় এবং হাইথাও একজন অবশ লোক , কথাটা ভেবে ওয়াং চিং এই ভালবাসা মনের ভেতর পুষে রাখলেন । আরও কিছু সময় পার হল, ওয়াং চিং নিজের ভালবাসাকে আর চেপে রাখতে পারলেন না । হাইথাওর মনোভাব জানার জন্যে তিনি তাকে এক ই-মেল পাঠান ।

    ওয়াং চিংয়ের ভালবাসার সামনে চাং হাইথাও শান্তভাবে বিবেচনা করার পর মনে করেন যে,তিনি শুধু ওয়াং চিংয়ের বোঝা হবেন । তাই তিনি ওয়াং চিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করার জন্যে নিজের মোবাইল বন্ধ করে দেন । চাং হাইথাওয়ের অভিব্যক্তি দেখে ওয়াং চিং যেমন দুঃখিত তেমনি মুগ্ধ । চাং হাইথাওকে তার ভালবাসার মনোভাব আরও দৃঢ় হল ।চাং হাইথাওর বাড়িতে এসে ওয়াং চিং নিজের মনোভাব হাইথাওর পরিবারপরিজনদের জানালেন । ওয়াং চিং এক প্রস্তাব করলেন । প্রস্তাব অনুযায়ী প্রথমে তারা দুজন ওয়াং চিংয়ের ছাংছুন বাড়িতে কিছু সময় ধরে জীবনযাপন করবেন । দুজন খুব ভাল করে মিলাতে পারলে বিয়ে করতে পারবে । চাং হাইথাওর পরিবারপরিজনরা রাজী হলেন ।

    চাং হাইথাও ও ওয়াং চিং নতুন জীবনযাপন শুরু করলেন । ওয়াং চিং এক ছোটো খাবারের দোকান খুললেন আর চাং হাইথাও নিজের সাধ্যমত কিছু কাজ করেন । দুজন পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে দুজনকে বোঝার ও আনন্দের সঙ্গে দু বছর কাটিয়েছেন । এ বছরের ২৬মে চাং হাইথাও ও ওয়াং চিংয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান আড়ম্বরপূর্ণভাবে আয়োজিত হয়েছে । সবাই তাদের সুখী জীবন কামনা করেন ।