চীনের প্রধান মন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাওএর আমন্ত্রণে জাপানের নতুন প্রধান মন্ত্রআবে সিনজো আগামী ৮ ও ৯ অক্টোবরচীনে আনুষ্ঠানিক সফর করবেন। এ উপলক্ষ্যে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নিজস্ব সংবাদদাতাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে চীনের চীন-জাপান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মিস্টার ইয়েন জন জে বলেছেন, আবে সিনজোর এবারের সফর চীন-জাপান সর্ম্পক উন্নয়নের " নতুন জানালা" খুলবে । তিনি মনে করেন. দু'দেশের শীর্ষ নেতারা চীন-জাপান সম্পর্কের ভসিষ্যত বিকাশের পথ নির্ধারণ করবেন। তাঁর এবারের চীন সফর চীন-জাপান মৈত্রীর ভিত্তিমজবুত করার অনুকূল।
জাপানের প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী জুনিচিরো কৈজুমি ইয়াসুকুনি মন্দিরে শ্রদ্ধা অপর্ন করেছেন বলে চীন-জাপান সম্পর্কে অচলবস্থা সৃষ্টি হয়। গত শতাব্দীর ৩০ এর দশকে জাপান চীনের উপর আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে ৩ কোটি ৫০ লাখ চীনা লোক হতাহত হয়। সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডর্লার। কিন্তু ২০০১ সালে জাপানের প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী জুনিচিরো ক্ষমতাসীন হওয়ার পর একটানা ছ'বার জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের স্মৃতিফলকসম্পন্ন ইয়াসুকুনি মন্দিরে শ্রদ্ধা তর্পন করেছেন। তাঁর এই আচরণ চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া সহ অনেক এশিয়া দেশে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে গত সারা পাচ বছরে চীন ও জাপানের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ হয়নি। চীনের নেতারা বারংবার বলেছেন, যদি জাপানের নেতারা ইয়াসুকুনি মন্দিরে শ্রদ্ধা তর্পন না করার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বৈঠক ও সংলাপ চালাতে প্রস্তুত। কিছু দিন আগে ষষ্ঠ এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ গ্রহণকারী চীনের প্রধান মন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও বলেছেন,
চীনা জনগণ আর এশিয় জনগণের বিরোধীতা উপেক্ষা করে জাপান সরকারের নেতারা বার বার ইয়াসুকুনি মন্দিরে শ্রদ্ধা তর্পন করেছেন। তাদের আচরণ মাত্মকভাবে চীনা জনগন আর এশিয়ান জনগণের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। আমরা আশা করি, জাপানের ভবিষ্যত নেতারা দু'দেশ আর জনগণের মৌলিক স্বার্থ বিবেচনা করে দু'দেশের মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক বাধাবিঘ্ন দূর করবেন। যাতে দু'দেশের সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ বাস্তবায়িত হয়।
দু'দেশের সম্পর্ক উন্নত করার জন্যে চীনের প্রয়াস চালানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রধান মন্ত্রী হওয়ার দশ দিনের মধ্যেআবে সিনজো চীন সফরের কথা ঘোষণা করেছেন। তাঁর এবারের চীন সফর প্রসঙ্গে চীনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক গবেষণালয়ের উপ মহা পরিচালক ইয়েন জন জে করে বলেছেন, দু"দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে পুনরায় যোগাযোগের জন্য প্রথম কাজ হল দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যত উন্নয়নের পথ নির্ধারন করা। তিনি বলেছেন,
বতর্মানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্যা সমাধান করতে হবে তা হল উচ্চ পর্যায় থেকে একটি ধারণা নির্ধারন । এর লক্ষ্য হবে পরবর্তী পর্যায়ে চীন-জাপান সর্ম্পক কিভাবে সুস্থ , সৌহার্দ্যপূর্ণ আর সহযোগিতামূলক দিকে বিকশিত হয়।
প্রধান মন্ত্রী পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ গ্রহণের সময় আবেসিনজো চীন-জাপান মৈত্রিতে আত্মনিয়োগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে, জাপান এক সময় আগ্রাসন যুদ্ধ বাঁধিয়েছে এবং এশিয়ান দেশগুলোর উপর ঔপনিবেশিক শাসনও চালিয়েছে। প্রধান মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বলেছেন, জাপান দূর প্রাচ্য সামরিক আদালতের বিচারের ফলাফল গ্রহণ করবেন। তবে ইয়াসুকুনি মন্দিরে শ্রদ্ধা অর্পনের সম্পর্কে তিনি স্পষ্টভাবে মনোভাব প্রকাশ করেননি। এ প্রসঙ্গে ইয়েন জন জে মনে করেন,
ইয়াসুকুনি মন্দিরে শ্রদ্ধা অর্পনেরব্যাপারে আবে সিনজো এখন পযর্ন্ত অষ্পস্ট মনোভাব পোষন করেছেন। আমার মনে হয়, যেহেতু তিনি এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলেননি, সেহেতু ওখানে তাঁর না যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকতে পারে। সুতরাং তিনি যাতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সে জন্যে আমাদের যতাসাধ্য প্রচেষ্টা চালানো উচিত।
|