v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-10-04 14:54:41    
চীনের চন্দ্রোত্সব

cri
    চীনের ঐতিহ্যবাহী উত্সবগুলোর মধ্যে চন্দ্রোত্সব হচ্ছে একটি গুরুত্বপূণ উত্সব । প্রতি বছরের চীনা পঞ্জিকার ১৫ আগস্ট চন্দ্রোত্সব পালিত হয় । এ দিনের সন্ধ্যায় যেখানে আবহাওয়া ভালো , সেখানে সবসময় পূর্ণ চন্দ্র দেখা যায় । এ উত্সবের সময় সাধারণত পরিবারে পরিবারে সকলে মিলে চাঁদ উপভোগ করেন এবং এক বিশেষ ধরণের কেক খান । তখন প্রত্যেক পরিবারে এক স্নেহ ও মমতা বিরাজ করে । আগামী ৬ অক্টোবর হবে চীনের চন্দ্রোত্সব । এবার চীনের জাতীয় দিবসের দীর্ঘদিনের ছুটিতে চন্দ্রোত্সব পড়বে । দুটো বড় উত্সব একনসংগে পালন করা চীনা লোকদের জন্যে এনে দেবে আনন্দময় পরিবেশ । চন্দ্রোত্সব আসতে আরো কিছু দিন বাকী থাকতে চীনের বিভিন্ন স্থানের জনসাধারণ উত্সবের জন্যে প্রস্তুতি শুরু করেছেন । ইয়াং পিয়ান দক্ষিণ-পশিচিম চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেং তুতে বসবাস করেন । তিনি ছেং তুর একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন । তিনি জীবনকে খুবই ভালোবাসেন । তিনি বলেছেন , অতীতে চন্দ্রোত্সবের সময় তিনি কেক খেতেন , নদীতে প্রদীপ ভাসাতেন এবং ড্রাগণ-বোটের প্রতিযোগিতা দেখতেন । কখনো কখনো কয়েজন  বন্ধুর সংগে মিলে মদ খেতেন ও গল্প করতেন । অথচ এ বছর তিনি অন্যভাবে চন্দ্রোত্সব পালন করার পরিকল্পনা নিয়েছেন । তিনি ও তার বান্ধবী একটি চন্দ্র-উপভোগ পর্যটক দলে যোগ দেবে । তারা ছেং তুর দক্ষিণ দিকে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সি ছিয়াং শহরে গিয়ে চন্দ্র উপভোগ করবেন । তিনি বলেছেন ,

    আবহাওয়ার কারণে ছেং তুতে পরিষ্কারভাবে চাঁদ দেখা যায় না । সি ছিয়াং চন্দ্র নগর বলে সুপরিচিত । সেখানে সুস্পষ্টভাবে চাঁদ দেখা যায় । চন্দ্রোত্সবের সময় চাঁদ খুব বড় আকার ধারণ করে থাকে । এ পূণ চাঁদ ঠিক মিলনের প্রতীক। এর কল্যাণের তাত্পর্য রয়েছে ।

    ছেং তু সবসময় মেঘাচ্ছন্ন । প্রতি বছরের চন্দ্রোত্সবের সময় চাঁদ কদাচিত দেখা যায় । ছেং তুবাসীদের কাছে এটি সত্যিই একটি দু:খের বিষয় । সি ছিয়াং শহর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উঁচু বলে সেখানকার চাঁদ সর্বদাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছে । তাই সি ছিয়াংয়ের অন্য নাম হচ্ছে চন্দ্র নগর । এ বছরের চন্দ্রোত্সব ঠিক চীনের জাতীয় দিবসের দীর্ঘদিনের ছুটিতে পড়বে । কাজেই ইয়াং পিয়ান ও তার বান্ধবী দূরবর্তী স্থানে গিয়ে চন্দ্র উপভোগের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন ।

    চন্দ্র উপভোগ করা ছাড়া চন্দ্রোত্সব পালনের আরেকটি বিষয় হচ্ছে বিশেষ ধরণের কেক খাওয়া । এ রকত কেক গোলাকার । ভেতরে কিছু উপাদান থাকে । গোড়ার দিকে কেকের মধ্যে শুধু তিল , চীনা বাদাম ও চিনি দেয়া হতো । পরবর্তীকালে কেকের ভেতরে বিশ বাইরটি উপাদান দেয়া হচ্ছে । গোলাকার কেক মিলন ও সম্প্রীতির প্রতীক । এতে কয়েক হাজার বছর ধরে আপনজন ও পারিবারিক জীবনের প্রতি চীনাদের সুন্দর আশা-আকাংক্ষা প্রতিফলিত হয় । দক্ষিণ চীনের কুয়াং তুং প্রদেশের রাজধানী কুয়াং চৌয়ের লোও চুন ওই বলেছেন ,

    চন্দ্রোত্সবের সময় কেক খাওয়া অপরিহার্য বিষয় । সন্ধ্যার খাবারের পর আমাদের পরিবারের সকল সদস্য মিলে বারান্দায় বসে কেক খাওয়ার সংগে সংগে ফলমূল ও অন্য খাদ্যবস্তুও খাবো । আবার থিয়েন কুয়ান ইন চা তৈরি করে চা খেতে খেতে চাঁদ দেখবো । সেই অনুভূতি সত্যিই অপূর্ব হবে ।

    কুয়াং চৌতে তৈরি কেকগুলো সুস্বাদু এবং ব্যবহৃত উপাদানও অনন্য সাধারণ বলে সারা দেশে তার সুনাম রয়েছে । গত কয়েক বছরে ক্রেতারা খাদ্যবস্তুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন । তাই কুয়াং চৌ ধরণের কেকের প্রকার সংখ্যাও বেড়ে চলেছে । কেকগুলোর ভেতরে এখন ফলমূল ও নানা ধরণের শস্য দেয়া হচ্ছে । কারণ এসব কেক স্বাস্থের জন্যে আরো হিতকর হয় । এ বছরের কেকের বাজারে পেয়ারা ও সিনচিয়াংয়ের হামি তরমুজকে কাঁচামাল হিসেসে ব্যবহার করা হয়েছে ।

    কুয়াং চৌ ধরণের কেক তৈরির জন্যে পরিচিত লিয়ান সিয়াং লোওয়ের মাস্টার চুং চিন পোও বলেছেন , এ বছর তারাও স্বাস্থ্যের পক্ষে হিতকর কেক তৈরি করেছেন । তিনি বলেছেন ,

    আমরা ঐতিহ্যিক কেক তৈরি করা ছাড়া কম চিনির স্বাস্থ্যকর কেক তৈরি করেছি । এসব কেক রং, গন্ধ ও স্বাদের দিক থেকে সবই শ্রেষ্ঠ । ক্রেতারা এ রকম কেক খেলে নিশ্চয় কুয়াং চৌ ধরণের কেক উপভোগ করতে পারবে ।

    চীনারা চন্দ্রোত্সবের সময় চীনারা যে চাঁদ দেখেন এবং কেক খান , তার একমাত্র আশা হচ্ছে মিলন ঘটানো । তারা উত্সবের মাধ্যমে আপনজনের স্নেহ-মমতা অনুভব করতে চান । মাদাম কোও চুন লি হচ্ছেন পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা । প্রতি বছরের চন্দ্রোত্সবের সময় হয় তার স্বামীর বাবামার সংগে মিলে পালন করেন , নয় তার নিজের বাবামার সংগে মিলে পালন করেন । এতে তাদের বাবামারা খুবই আনন্দিত হন । তিনি বলেছেন ,

    আমার মনে হয় , চন্দ্রোত্সবের সময় অবশ্যই নিজের পরিবার এবং নিজের বাবামার সংগে মিলে পালন করতে হবে । এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আমার স্বামী ফটো তুলতে খুবই পছন্দ করেন । তিনি সবসময় উত্সবের সময়কার দৃশ্য তুলে নেন । প্রতিবার সকলে উপস্থিত থাকার সময় তিনি আগেকার তোলা ক্যাসেটের দৃশ্য দেখান । দেখে সবার মুখে আর হাসি ধরে না । বাবামারা খুশী হলে আমরাও আনন্দ বোধ করি ।

    দু বছর আগে মাদাম কোও পেইচিংয়ের উপকন্ঠে একটি বাড়ি কিনেছেন । এ বছর তিনি নিজের বাবামাকে নিয়ে সেখানে কিছু দিনের জন্যে থাকার পরিকল্পনা নিয়েছেন । তারা গ্রামে চন্দ্রোত্সব পালন করবেন । তিনি বলেছেন ,

    আমি চাই বাবামা গ্রামে চন্দ্রোত্সব পালনের পরিবেশ অনুভব করুন । পেইচিংয়ের উপকন্ঠের কৃষকরা খুবই সরলমনা । সেখানে উত্সব পালনের ঘন পরিবেশ বিরাজ থাকে । কৃষকদের সংগে মিলে চন্দ্রোত্সব পালন করলে আমার মনে স্নেহ জন্ম নেবে । আমার বাবামাও গ্রামে যেতে চান । সেখানে তারা কৃষকদের সংগে গল্প করতে পারবেন এবং তাদের কাছ থেকে কিছু শাকসব্জিও কিনতে পারবেন । সে রকম পরিবেশে তারা আরাম বোধ করবেন ।

    তাইওয়ানের চুং হাও থিয়ান ১১ বছর আগে মূলভূখন্ডে ব্যবসা করতে এসেছেন । তিনি চীনের ফু চিয়ান প্রদেশের সিয়া মেনে নিযুক্ত তাইওয়ানের একটি বড় পরিবহন কোম্পানিরশাখা কোম্পানির ম্যানেজার । চন্দ্রোত্সবের সময় তিনি দেশের বাড়িতে যাবেন ।