চীনে দশ বছর ধরে বসবাসকারী মিস্টার এ্যান্ড্রা একজন ইতালিয়ান । তিনি একজন ফটোগ্রাফার । ক্যামেরার মাধ্যমে তিনি চীনের ছবি তুলেন এবং এসব ছবি পশ্চিমা দেশের জনগণকে দেখান , যাতে তারা এসব ছবির মাধ্যমে চীনকে উপলব্ধি করতে পারে ।
৪৭ বয়সী এ্যান্ড্রা ইতালীর মিলানে জন্মগ্রহণ করেন। যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন , তখন তিনি এক সুযোগে পূর্ব চীনের নান চিং শহরে আসেন । তরুণ এ্যান্ড্রার চোখে উন্মুক্ত হওয়া চীন দেশ ইতালীর চেয়ে একদম আলাদা , খুবই আকর্ষণীয় । পরের বছর তিনি চীনের শাংহাইয়ে পড়তে যান। দু'বছর পর তিনি হংকংয়ে গিয়ে সেখানের একটি ইতালী কোম্পানীতে চাকরি শুরু করেন । ১৯৯০ সালে এই ইতালী কোম্পানী পেইচিংয়ে শাখা কোম্পানী স্থাপন করেছে । এ্যান্ড্রাকে এই শাখা কোম্পানীর প্রধান প্রতিনিধির পদে নিযুক্ত করা হয় । তখন থেকে তাঁর পেইচিং জীবন শুরু । ১৯৯৯ সালে এ্যান্ড্রা এই পদ ত্যাগ করে একজন ফটোগ্রাফার হন । তখন কেনো তিনি এই পেশা বাছাই করেছেন ? এ্যান্ড্রা চীনা ভাষা দিয়ে সংবাদদাতাকে বলেন :
ছোটবেলা থেকে আমি ছবি তুলতে পছন্দ করি । আমি ৯০ দশক থেকে টেলিক্যামেরা চালানো শুরু করি । আমি এই কাজ করতে পছন্দ করি । ১৯৯৯ সালে আমার আর্থিক সামর্থ ভালো হয় । আমি ভালোভাবে এই কাজ করতে পারি ।
এ্যান্ড্রা প্রথমে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেন । পরে টেলিকেমারাও কিনেছেন । পেইচিং শহরে অনেক চমত্কার দৃশ্য আছে । ঐতিহ্যিক মন্দির বা জাদুঘর , পেইচিংয়ের লোকদের জীবন , শহরে তরুণ তরুণীদের আধুনিক জীবন ইত্যাদি । এ্যান্ড্রা এসব চীনের ইতিহাস বা পেইচিংয়ের উন্নয়নের দৃশ্য তুলেছেন । তাঁর ছবি পেইচিংয়ে প্রদর্শণ করা হয়েছে । পেইচিং ছাড়া তিনি চীনের অন্যান্য জায়গাও যান । যে দৃশ্য চীনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে , তিনি তা তুলবেন । ছবি তোলার পর এ্যান্ড্রা এসব বিষয়ের সঙ্গে সংগীত যুগিয়ে প্রামান্য চিত্র তৈরী করেন ।
তাঁর তোলা চীন সম্পর্কিত প্রামাণ্যচিত্র ফ্রান্স , ইতালী , জার্মানী ইত্যাদি দেশের টেলিভিশনে বার বার দেখানো হয় । বিভিন্ন দেশের মানুষ এর মাধ্যমে চীনকে উপলব্ধি করতে পারেন । এ্যান্ড্রা বলেছেন , তিনি ছবি তোলার মাধ্যমে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পছন্দ করেন । অন্য দিকে নিজের ছবির মাধ্যমে আরো বেশি মানুষ চীনকে জানতে পারে, এতে খুব আনন্দ লাগে । এ্যান্ড্রা বলেছেন :
আমি যা দেখছি যা অনুভব করছি , তা অন্যকে জানতে চাই । কারণ কিছু পশ্চিমা দেশের লোকচীন সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে থাকে । আমার মনে হয় তা আদান-প্রদানের জন্য সহায়ক হবে না । আমি আশা করি আমার ছবি বা প্রামাণ্য চিত্রের মাধ্যমে মানুষ চীন সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পারবে ।
এ্যান্ড্রার শখ সম্বন্ধে তাঁর স্ত্রী চিন সিয়াও পেইর গভীর অনুভূতি আছে । চি সিয়াও পেই চীনা মানুষ । তিনি পেইচিংয়ের একটি বৈদেশিক পুঁজি কোম্পানীতে কাজ করেন । তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন , ছবি তোলা হল তাঁর স্বামীর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । সময় পেলে এ্যান্ড্রা বাইরে গিয়ে ছবি তুলবেন । চি সিয়াও পেই বলেছেন , এ্যান্ড্রা প্রায় সাড়া চীনে ভ্রমণ করেছেন । বিশেষ করে দূরের এলাকা এবং দরিদ্র্য অঞ্চলে । একটি কাজ চিন সিয়াও পেইর মনে হয় খুব সাধারণ , তবে এ্যান্ড্রার ছবিতে তা মজার হয়েছে । তাই চিন সিয়াও পেই এ্যান্ড্রাকে সমর্থন করেন । কারণ চীনে নিজের কাজ খুব পছন্দ করেন , তাই এ্যান্ড্রা নিজের দেশে ফিরে যেতে পারেন না । তাঁর মাও তাকে সমর্থন করেন । এ্যান্ড্রা বলেছেন :
আমার মা সবসময় আমার কাজের সমর্থন করেন । আমি যে একটি কাজ সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছি , তিনি আমার জন্য আন্তরিকভাবে আনন্দ বোধ করেন । আমার প্রতি তাঁর দাবি হল : যে কোনো কাজ করলে সর্তক এবং মন দিয়ে করতে হবে ।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্বন্ধে এ্যান্ড্রা বলেছেন , তিনি নিজেই চীন সম্পর্কিত একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরী করতে চান ।
|