জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য দেশ ২ অক্টোবর জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রার্থী সমস্যা নিয়ে চতুর্থ বার পরীক্ষামূলক ভোটদান করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রী বান কি মুন মোট ১৪টি ভোট পেয়েছেন। সুতরাং তিনি আনানের পরবর্তী জাতিসংঘের মহাসচিব হবেন।
জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী, জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রার্থীকে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্যের মধ্যে কমপক্ষে ৯টির সমর্থনসূচক ভোট পেতে হবে এবং কোন স্থানীয় সদস্য দেশ এর বিরোধীতা করতে পারবে না । এ পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রার্থীকে নিরাপত্তা পরিষদে মনোময়ন করা যায়। এর আগে চালানো তিন বার পরীক্ষামূলক ভোটদানে বান কি মুন সবসময় প্রথম স্থানে ছিলেন। তিনি অন্যান্য কয়েকজন প্রার্থীর চেয়ে বেশি উত্সাহী ভোট পেয়েছেন। চতুর্থ বার ভোটদানে চীন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, রাশিয়া এই পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশ প্রথম বার অন্য দশটি অস্থায়ী সদস্য দেশের ভিন্ন রংয়ের ভোট ব্যবহার করেছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে বিপক্ষে ভোট আছে কিনা জানানো। যদি পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে যে কোন দেশ কোন প্রার্থীর বিপক্ষে ভোট দিলে , সেই প্রার্থীকে সরে যেতে হবে।
এবারের ভোটদানের ফলাফল অনুযায়ী, পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে বিপক্ষে কোন ভোট ছিল না। বান কি মুনের পক্ষে ১৪টি ভোট ও "বিনা মতামত" ১টি ভোট পেয়েছেন। এর অর্থ হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদে
তাকে সুপারিশ করার মর্যাদা অর্জিত হয়েছে। অর্থাত্ পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশসহ কমপক্ষে ৯টি সদস্য দেশ জাতিসংঘের মহাসচিব হওয়ার ব্যাপারে বান কি মুনকে সমর্থন করেছে।
অতীতে জাতিসংঘের মহাসচিব বদলানোর সময় নির্বাচনের কাজ খুব দেরিতে করা হতো, ফলে সুষ্ঠুভাবে নতুন পদে উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতো। এবারের মহাসচিব নির্বাচন ঠিক জাতিসংঘের সংস্কার ও ২০০৫ সালের শীর্ষ সম্মেলনে স্বাক্ষরিত "ফলাফলের দলিল" কার্যকর করার সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন পক্ষের সবাই আশা করে, অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে মহাসচিবের নতুন প্রার্থীর ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছতে পারবে। তা ছাড়া, জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো আশা করে, নতুন মহাসচিব জাতিসংঘের বিষয়াদি সম্পর্কে পূর্বাপর অবগত রয়েছেন। কিন্তু তিনি জাতিসংঘের ব্যক্তি না হলেই ভালো। সে জন্য বান কি মুন দ্বিতীয় প্রার্থী বর্তমান জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব ভারতীয় ব্যক্তি শাশি তারোর চেয়ে সহজে এক মার্ক বেশী পেয়েছেন। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বান কি মুন পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেয়েছেন।
বর্তমানে ৬২ বছর বয়স্ক বান কি মুন দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল বিশ্ববিদ্যালয়ের কূটনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনিডি রাজনীতি ইনস্টিটিউট থেকে প্রশাসনে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেছেন। ১৯৭০ সালে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন। তিনি পর পর ভারতস্থ দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাস, জাতিসংঘে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি দল এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসে কাজ করেছেন। এরপর তিনি অস্ট্রিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত এবং ভিয়েনায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি ছিলেন। ২০০৪ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রী হন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে বান কি মুন জাতিসংঘের মহাসচিবের নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ঘোষণার পর কূটনৈতিক প্রচারণা চালানোর জন্য তিনি বিভিন্ন দেশে বহু বার সফর করেছেন। বহির বিশ্ব তাকে দেখে বেশ শান্ত মনে হওয়ায় মহাসচিবের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার সামর্থ্যের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করায় বান কি মুন বলেছেন, তিনি দেখতে শান্ত হলেও তার চরিত্রে দৃঢ়তার কোন অভাব নেই।
নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মাসের পালাক্রমিক সভাপতি, জাতিসংঘস্থ জাপানের স্থায়ী প্রতিনিধি কেনজো ওশিমা প্রতীক ভোটদানের পর বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদে ৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটদানের সম্ভাবনা আছে। তারপর প্রার্থীকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোটদানের জন্য সুপারিশ করা হবে। জাতিসংঘস্থ মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি জন বোলটনও ভোটদানের ফলাফলের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। যদি সব কাজ সুষ্ঠুভাবে চলতে থাকে, তাহলে বান কি মুন এই বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে আনানের স্থালাভিষিক্ত হয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব হবেন। তিনিই হবেন ৩৫ বছরের মধ্যে জাতিসংঘের প্রথম এশিয় মহাসচিব ।
|