চীনের পেইচিং-এর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের চুংকুয়ান ছুন হচ্ছে চীনের বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষকদের কাছে " সিলিকন ভ্যালি"। কয়েক দশক আগে, অনেক চীনা জনগণ উচ্চতর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্যে এখানে এসে কাজ শুরু করেছে । প্রথম দিকে তারা বিদেশের বিভিন্ন ইলেকট্রেনিক পণ্যদ্রব্যের খুচরা যন্ত্রাংশ দিয়ে সামগ্রী তৈরী করে পণ্যভোগীদের কাছে বিক্রী করে। যার কোনো গবেষণা ও উদ্ভাবনী মূল্য ছিল না। তবে চুং কুয়ানছুন এখন চীনের বৃহত্তম উচ্চতর প্রযুক্তিগত শিল্প এলাকায় পরিণত হয়েছে। এখানের উত্পাদিত পণ্যদ্রব্যের গুণগতমান প্রায় ৯০ শতাংশ যা, প্রায় বিশ্ব মানের সমান ।
একজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সংবাদদাতার কাছে বলেছে যে, চুং কুয়ানছুনের কোনোএকটি গবেষণা কেন্দ্র গিয়ে ওখাকার গবেষক ও তাদের বৈজ্ঞানিক প্রকল্পটি দেখে তাকে অনেক বিস্মিত হয়েছে। কারণ তাদের উত্পাদিত পণ্যদ্রব্যের মান বিশ্বের প্রায় প্রযুক্তিগত মানের-সমান।
সংবাদদাতা চুং কুয়ানছুন শিল্প এলাকার হান ওয়াং বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগত লিমিটেড কোম্পানিতে এসে , এর প্রমাণ পেয়েছেন । এ কোম্পানির প্রকৌশলী চাং হাওফেং বলেছেন যে, বর্তমানে বাজারে অনেক ধরণের মোবাইল ফোন আছে। এবং মোবাইল ফোনে হাতে নেয়াও যায়। সব মোবাইল ফোনের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই এই কোম্পানি তৈরী করেছে । চাং হাওফেং তাঁর সহযোগীর সঙ্গে আরো একটি নতুন প্রযুক্তি গবেষণা করেছেন।
" যেমন এর নাম কার্ড, মোবাইল ফোন দিয়ে তার ছবি তুললে, এই নাম কার্ডের সব কিছু মোবাইল ফোনের ভেতরে চলে যায়। আমাদের এই নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে শুধু কয়েক সেকেন্ডই এই নাম কার্ডের সব শব্দ মোবাইল ফোনে ঠিকভাবে দেখা যায়।"
গতবছর থেকে হানওয়াং বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি লিমিটেড কোম্পানি এই নতুন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছে। এখন বিশ্বের অনেক অনেক বিখ্যাত মোবাইল ফোন কারখানা তার কাছ থেকে সামগ্রী কিনছে। আসলে , গত শতাব্দীর ৯০ -এর দশকে এই কোম্পানি চুং কুয়ানছুনে স্থাপন করার সময়, তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিলো বৈজ্ঞানিক উপায়ে পণ্যের নবায়ন আর নতুন কিছু উদ্ভাবন করা। তবে প্রথম দিকে, এর জন্যে এই কোম্পানির অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। হান ওয়াং বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগত লিমিটেড কোম্পানির প্রধান লিউ ইন চিয়ান বলেছেন:
" তখন আমাদের মোট ৪৩টি প্রকল্পটি ছিলো, এর মধ্যে কয়েকটি ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে । কিছু পণ্য হয়তো আমাদের পছন্দ, কিন্তু ব্যবহারকারী তা পছন্দ করে না; আরো কিছু নতুন পণ্য তৈরী করার পর তাদের মুল্য খুব বেশি থাকায় তাও ব্যবহারকারী ক্রয় করতে পারে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এত বেশি প্রকল্প একই সঙ্গে চালানোর আমাদের যথেষ্ট সামথ্য ছিলো না ।"
এর জন্যে হানওয়াং বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগত লিমিটেড কোম্পানি আগের ৪৩টি প্রকল্পটি অনেক কমানো করা যায়। এখন তাদের শুধু ৬টি আছে। এইভাবে কোম্পানির পণ্য গবেষণা ক্ষেত্রের সফলতা হার প্রায় ৫০ শতাংশ উন্নীত হয়েছে।
হানওয়াং বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি লিমিটেড কোম্পানির মত নিজেদের উদ্ভাবনের উপর নির্ভর করে অর্জিত সফল চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান চুং কুয়ানছুনে আরো অনেক গুলো রয়েছে । চুং কুয়ানছুনের বিজ্ঞান প্রযুক্তিবিদ্যা ও শিল্প এলাকার প্রসাশনিক কমিটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি রেন জাইছি বলেছেন যে,প্রতিবছর আন্তর্জাতিক বাজারে , এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নতুন প্রযুক্তি গবেষণা ক্ষেত্রের মাধ্যমে তৈরী -পণ্যের বিক্রিত মূল্যের মধ্যে প্রায় ৫ থেকে ৮ শতাংশ বেড়েছে। এখন চুং কুয়ানছুনে মোট ১৭ হাজারেরও বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। তাদের গবেষণার মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত । তিনি আরো বলেছেন, গতবছর, চুং কুয়ানছুন বিজ্ঞান প্রযুক্তিবিদ্যা ও শিল্প এলাকায় গবেষণার জন্যে মোট ২২ বিলিয়ন ইউয়ান পুঁজিবিনিয়োগ করেছে। যাতে অনেক সুবিধার সৃষ্টি হয়েছে।
হুই তিয়ান বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তি কোম্পানি হচ্ছে চীনের ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালের মোট ১০ জন ছাত্রছাত্রী ১৯৯৮ সালে তাদের লেখাপড়া শেষ করার পর সম্মিলিতভাবে এই কোম্পানি গঠন করেছে। এই কোম্পানির প্রধান চিয়াং সিওতান সংবাদদাতার কাছে বলেছেন, কোম্পানি স্থাপনের প্রথম দিকে , তার মনে হয়েছে যে শুধু লেখাপড়ার সময় নিজের সফটওয়্যার ক্ষেত্রের শিক্ষা বিষয় নিয়ে এখানে কাজ করতে পারে।
কিন্তু, এই কাজের ব্যাপারটি এত সহজ নয় । কোম্পানির শুরুর দিকে, বিভিন্ন রকমের ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়, এমনকি কোম্পানী ভেঙে যাবার সম্ভাবনাও থাকে। অবশেষে ২০০৩ সালে হুইতিয়ান বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তি কোম্পানি অফিস এবং প্রসাশনিক ব্যবহার সংক্রান্ত সফটওয়্যার বাজারে ছেড়ে প্রচুর সুনাম ও আর্থিক সফলতা পেয়েছে।
" আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে চীনের অগ্রণী অফিস এবং প্রসাশনিক সফটওয়্যার দিয়ে পরিসেবা করা । ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষা বিভাগের সুবিধা নিয়ে এখানে নিজেদের গবেষণা সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর অন্তর্ভূক্ত রয়েছে যে, ছিংহুয়া গণ-প্রসাশনিক কলেজ, অর্থনৈতিক প্রসাশনিক কলেজ, তথ্য কলেজ । যাদের ইলেকট্রোনিক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে ।"
আরো জানা গেছে, গতবছরে হুইতিয়ান বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তি কোম্পানি মোট ১০ কোটি ইউয়ান আয় করেছে। এই তিনবছরের উত্পাদনের গড়পড়তা বৃদ্ধিহার প্রায় ১৫০ শতাংশ হয়েছে।
|