সম্প্রতি চীনের পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর বিশেষজ্ঞরা চীন সরকারের কাছে সমগ্র দেশের পল্লী অঞ্চলে নতুন ধরনের সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব করে । তারা বলেছেন , এই চিকিত্সা ব্যবস্থার কল্যাণে কৃষকদের চিকিত্সা ব্যয় কম হবে এবং সুবিধা বেশি হবে ।
নতুন ধরনের সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে চালুর কাজ ২০০৩ সাল থেকে শুরু হয় । এ সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থার নিয়ম হলো কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার প্রতি বছর প্রত্যেক কৃষকের জন্য ২০ ইউয়ান জমা দেয় , কৃষক নিজে প্রতি বছর ১০ ইউয়ান জমা দেন । এ সব অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠিততহবিলে প্রত্যেক কৃষকের নামে প্রতিবছর ৫০ ইউয়ান আছে । অসুস্থ কৃষক প্রতি বছর এ চিকিত্সা তহবিল থেকে নির্দিষ্ট পরিমানের আর্থিক সাহায্য পান ।
যে সব গ্রামে এই সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে , গত পাঁচ মাসে পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাজবিজ্ঞান একাডেমীর বিশেষজ্ঞরা সেই সব গ্রাম পরিদর্শন করেছেন । এই বিশেষজ্ঞ গ্রুপের প্রধান , পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যরক্ষা নীতি ও পরিচালনা বিভাগের প্রধান প্রফেসার উ মিন পল্লী অঞ্চলের নতুন সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থার প্রশংসা করেছেন । তিনি বলেছেন , মোটের উপর বলতে গেলে নতুন সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার কাজ সফল হয়েছে । কৃষকরা চিকিত্সা সুবিধা পেয়েছেন , তাদের চিকিত্সা ব্যয় কমেছে । পল্লী অঞ্চলের চিকিত্সা অবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে । বিশেষজ্ঞ গ্রুপের সদস্যরা মনে করেন , এই ব্যবস্থা পল্লী অঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষকের আকাংখার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ । তাই সমগ্র দেশের গ্রামাঞ্চলে এই ব্যবস্থা বলবত করা উচিত ।
এ বছরের মার্চ মাসের শেষ নাগাদ চীনের মোট ১৩ শ'টি জেলা ও শহরের উপকন্ঠের পল্লী অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে এই সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু হয়েছে । মোট ৩৭ কোটি কৃষক এই সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থায় অংশ নিয়েছেন । যে সব কৃষক সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থায় অংশ নিয়েছেন , তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ কৃষক আগামী বছর একইভাবে এই ব্যবস্থা অংশ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন । যে সব কৃষক আপাততঃ এই চিকিত্সা ব্যবস্থায় অংশ নেয় নি , তাদের মধ্যে ৫১ শতাংশ কৃষক আগামী বছর এ ব্যবস্থায় অংশ নেয়ার কথা বলেছেন । চীন সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে ২০১০ সালে সমগ্র দেশের পল্লী অঞ্চলে এই চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু হবে ।
বিশেষজ্ঞরা এই চিকিত্সা ব্যবস্থার প্রশংসার পাশাপাশি এই ব্যবস্থার সমস্যাও উল্লেখ করেছেন । প্রধান সমস্যা হলো আর্থিক ঘাটতি । বর্তমানে কৃষকরা প্রতি বছর মাত্র ৫০ ইউয়ান এই তহবিলে জমা দিতে পারে , কাজেই কৃষকের চিকিত্সার ফির ৭০ শতাংশ কৃষককে নিজে বহন করতে হয় । তাই এই ব্যবস্থা কৃষকদের চিকিত্সার ব্যয়ের বেশির ভাগ বহন করতে পারছে না । কিছু কিছু কৃষক অসুস্থ হওয়ার দরুন আবার গরীব হয়েছে । এ ছাড়া কিছু অঞ্চলে চিকিত্সা তহবিল পরিচালনা ও তত্ত্বাধানেও কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে ।
চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নতুন সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থার এ সব সমস্যা সমাধান এবং এই ব্যবস্থা আরো নিখুঁত করার চেষ্টা করছে । স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পল্লী স্বাস্থ্য বিভাগের উপপ্রধান নিয়ে ছুন লেই বলেছেন , শহর ও পল্লী অঞ্চলের অর্থনৈতিক ব্যবধানের দরুন বর্তমানে কৃষকরা সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থা থেকে যে আর্থিক সাহায্য পাচ্ছে , তার পরিমান শহরাঞ্চলের নাগরিকদের চেয়ে অনেক কম । তিনি বলেছেন , পল্লী অঞ্চলের সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থা ধাপে ধাপে চিকিত্সা বীমায় রুপান্তরিত হবে , তবে এই প্রক্রিয়া খুব লম্বা হবে । বর্তমানে পূর্ব চীনের কিছু শিল্পোন্নত অঞ্চলে সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থা চিকিত্সা বীমায় রুপান্তরিত করা যায় ।
|