v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-28 16:37:22    
সিডি ও হোং গ্রাম

cri

সিডি গ্রাম

 বন্ধুরা, মধ্য চীনের আন হুই প্রদেশের বিখ্যাত পাহাড় -- হুয়াং শানে ভ্রমণকারী লোক অসংখ্য, কিন্তু হুয়াং শান পাহাড়ের নিচে সিডি ও হোং গ্রাম নামে দুটি প্রাচীন গ্রাম সম্পর্কে জানার লোক খুব কম। এই দুটি গ্রাম অপেক্ষাকৃত সম্পূর্ণ প্রাচীন গণ বসতি সংরক্ষণের জন্য পরিচিত। ছয় বছর আগে চীনের আনহুই প্রদেশের এই দুটি গ্রাম প্রাচীন গণ বসতির প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ব পুরার্কীতি তালিকায় অন্তর্ভুক্তহয়েছে। আজকের চলুন বেড়িয়ে আসি আসরে আমি আপনাদের এই দুটি গ্রামের পরিচয় দেবো। আশা করি, এক দিন আপনারা হুয়াং শান পাহাড় ভ্রমণের পর সিডি ও হোং গ্রাম দেখতে যাবেন।

 সিডি ও হোং গ্রাম হুয়াং শান পাহাড় থেকে গাড়ি করে এক ঘন্টা দূরে ঈ জেলার পাশে। সিডি গ্রামের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকের দৈর্ঘ্য মাত্র ৭০০ মিটার , দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকের বিস্তার ৩০০ মিটার। গ্রামের পাশ দিয়ে নদীর পানি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে একটি নদী বয়ে গেছে। এখানে প্রাচীনকালের একটি ডাকঘর ছিলো। ফলে এর "সিডি" নাম দেয়া হয়েছে। এর চীনা অর্থ পশ্চিমের ডাকঘর। সিডি গ্রামে অত্যন্ত ভালোভাবে মিং আর ছিং রাজবংশের ২০০টিরও বেশি গণ বসতি সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে ৬০০ বছর আগের বাড়িঘরও আছে।

 সিডি গ্রামের বেশির ভাগ প্রাচীন গণ বসতির চৌকাঠ ও জানালার কাঠামো কালো রংয়ের মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি। দুটি পরিষ্কার প্রস্রবণ গ্রামের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। গ্রামের বাড়িঘরগুলো পাহাড় ও হ্রাদের সুন্দর দৃশ্য মিলে মনোরম ছবির মতো।

 চীনের আন্তর্জাতিক পর্যটন এজেন্সির গাইড মিস. কাও লি ওয়ে জানিয়েছেন, সিডি গ্রামে ৯৯টি সরু গলি আছে। ২০০টিরও বেশি প্রাচীন গণ বসতি এই গলিগুলোতে ছড়িয়ে আছে। পর্যটকরা প্রথম বার সিডি গ্রামে আসলে গোলকধাঁধাঁয় পড়ে যায়। তিনি বলেছেন, "সিডি গ্রামের প্রাচীন গণ বসতি অনেক। তবে এখন মাত্র বারো তেরোটি অপেক্ষাকৃত ভালোভাবে সংরক্ষিত প্রাচীন গণ বসতি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। পর্যটকরা এই উন্মুক্ত গণ বসতিতে প্রবেশ করতে পারেন। এই গণ বসতিগুলো পরিষ্কারভাবে সাজানো হয়েছে। রুমের আসবাবপত্র, ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং চিত্রগুলো মিং ও ছিং রাজবংশের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।"

 ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, সপ্তম শতাব্দীতে চীনের এক জন রাজকুমার অভ্যুত্থানের কারণে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি নাম পরিবর্তন করে এখানে থাকেন। তখন থেকে এখানকার লোক সংখ্যা অধিক থেকে অধিকতর হয়েছে। যথাক্রমে একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠিত হয়। চৌদ্দ শতাব্দীর পর গ্রামের কিছু বুদ্ধিজীবী ব্যবসা করে ধনী হওয়ার পর এখানে বাড়িঘর, মন্দির, সড়ক এবং সেতু নির্মাণ করেছিলেন। ফলে সিডি গ্রামের স্থাপত্য কাজগুলো অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ হয়েছে।

 চীনের স্থাপত্যবিদ ইয়াং হোং সুয়েন মনে করেন, সিডি গ্রামের প্রাচীন গণ বসতির সবচাইতে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানকার স্থাপত্যকাজ ইট, পাথর এবং কাঠের খোদাই কাজ চমত্কার। তিনি বলেছেন, "সিডি গ্রামের গণ বসতি ও অন্যান্য অঞ্চলের গণ বসতির ভিন্ন দিক হচ্ছে, এখানের প্রাচীন গণ বসতির সংখ্যা বেশি, প্রায় সব দিকে দেখা যায়। আরেকটা হচ্ছে এখানকার খোদাই কাজের মান উন্নত, খোদাই শিল্পের প্রযুক্তি এবং গুণগত মান অতি উচু।"

হোং গ্রাম

    সিডি গ্রাম ত্যাগ করার পর আমরা হোং গ্রামে যাবো। হোং গ্রামের আয়তন প্রায় ১৯ হেক্টর। ঈ জেলা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। হোং গ্রামের ইতিহাস সিডি গ্রামের চেয়ে সুদীর্ঘ। প্রথমে এখানে গ্রাম প্রতিষ্ঠার সময় লোকজন পাহাড়ের সামনের একটি ছোট নদীর পাশে বাড়িঘর নির্মাণ করতে পছন্দ করতেন। কিন্তু জনসংখ্যা বাড়ার ফলে নদীর পাশে নির্মিত বাড়িঘরের সংখ্যাও অধিক থেকে অধিকতর হয়েছে। এমন কি একটি বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে প্রতিবেশির বাড়িও রেহাই পেত না। গোটা গ্রাম একসঙ্গে ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এড়ানোর জন্য হোং গ্রামের পূর্বপুরুষরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, নদীর পানি গ্রামের প্রত্যেক বাড়ির পাশে দিয়ে যেতে হবে।

 এর জন্য হোং গ্রামের পূর্বপুরুষরা পানি চলাচলের পাকা প্রণালী তৈরি করেছেন , যাতে পাহাড়ের সামনের নদীর পানি প্রত্যেক পরিবারের দরজার সামনে আসতে পারে। গ্রামীণবাসীরা ভূপ্রাকৃতিক অবদান কাজে লাগিয়ে প্রণালীর পানি বজায় রেখেছেন। তারা নদীর উচ্চ অববাহিকায় জলকপাট নির্মাণ করে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতেন, যাতে নদীর পানি আবার নদীর নিম্ন অববাহিকায় ফিরে যায়।

 চীনের স্থাপত্যবিদ ইয়াং হোং সুয়েন বলেছেন, হোং গ্রামের পানি সরবারহ ব্যবস্থা কেবল বর্তমান চীনের স্থাপত্যবিদদের প্রশংসা পেয়েছে তা নয়, বরং জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানী প্রভৃতি দেশের বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে। তিনি বলেছেন, "হোং গ্রাম ভৌগোলিক পরিবেশ এবং নিয়ম ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে। চীনারা প্রাচীনকাল থেকে প্রকৃতিকে সম্মান করেন। তারা জানেন, প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রকৃতিকে কাজে লাগানো যায়। হোং গ্রামের পিছনে পাহাড় , সামনে নদনদী আছে, পানি নিষ্কাশন করা সুবিধাজনক। এমন পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় জনসাধারণের সেবা করা যায়।"

 হোং গ্রামে ৩০০টিরও বেশি মিং ও ছিং রাজবংশের গণ বসতি সংরক্ষিত রয়েছে। দেখার মতো জায়গা হচ্ছে চেন চি থাং। চেন চি থাংয়ে ওয়াং ডিং কুই নামে একজন বড় ব্যবসায়ীর বাড়ি ছিলো। বাড়িটির গোটা স্থাপত্য কাঠ দিয়ে তৈরি। রুমের ভিতরে ইট, পাথর এবং কাঠ খোদাই করে অতি সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। জানা গেছে, এই বাড়ির মধ্যে কেবল কাঠ খোদাই কাজ করার জন্য ২০ জন শ্রমিক চার বছর স্থায়ী কাজ করেছিলেন।

 পেইচিংয়ের পর্যটক লি চিং বলেছেন, "চেন চি থাংয়ের কাঠের উপর মানুষের ছবি, কাচ আর ইট দেওয়ালে খোদাই করা ফুল ও পাখিগুলোর ছবি প্রায় জীবন্ত। একটি দরজার কাঠ খোদাই কাজ আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। সেখানে ১০০ জন বালকের চিত্র খোদাই করা হয়েছে, কেউ কেউ বাতি দিয়ে নাচছে, কেউ কেউ পটকা ফাটাচ্ছে, কেউ কেউ বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছে। সত্যি দেখার মতো জায়গা।"

 লি চিং মনে করেন, সিডি আর হোং গ্রামের কাঠামো এবং প্রাচীন গণ বসতি দেখে পর্যটকরা এই দুটি পাহাড়ি গ্রামের বিশেষ দিক অনুভব করতে পারেন। গ্রামের বাইরে সুন্দর নদনদী ও পাহাড় ঘেরাও করে, সবুজ গাছপালা চার দিকে ছড়িয়ে আছে। গ্রামের ভিতরে পরিষ্কার খাল প্রত্যেক পরিবারের পাশ দিয়ে চলে গেছে। শত শত প্রাচীন গণ বসতি আমাদেরকে শান্ত ও সরল অনুভূতি দেয়।

 চীনের স্থাপত্যবিদ ইয়াং হোং সুয়েন বলেছেন, "মানবজাতির বৈচিত্র্যময় রঙ্গিন সাংস্কৃতিক সম্পত্তি হিসেবে সিডি আর হোং গ্রামে মিং ও ছিং রাজবংশের ইতিহাস প্রতিফলিত হয়েছে। দেশি বিদেশি পর্যটকরা এখানে এসে প্রাচীন চীনের মনোরম স্থাপত্য কাজ দেখার সুযোগ পান। "