v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-26 19:44:16    
চীনে পু ই জাতির প্রথম পাড়াগাঁ- চাঁদ পল্লীগ্রাম

cri
    পু ই জাতি চীনের ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির অন্যতম । জনসংখ্যা ২৬ লাখ । তাদের অর্ধেকেরও বেশি ভাগ দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুই চৌ প্রদেশে বাস করেন । আজ এই অনুষ্ঠানে পু ই জাতি অধ্যুষিত পল্লীগ্রাম-চাঁদ পাড়াগাঁ সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি থান ইয়াও খাং । এই পল্লীগ্রাম পু ই জাতির ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত আছে বলে চীনের পু ই জাতির প্রথম পাড়া গাঁ বলে অভিহিত করা হয় ।

    পু ই জাতির বেশির ভাগ পল্লীগ্রাম পাহাড়ের পাদদেশ ও নদ-নদীর ধারে অবস্থিত। তার চার দিক নিবিড় অরণ্য ও নদ-নদীতে ঘেরা । একটি স্বচ্ছ নদী বেয়ে সংবাদদাতা চাঁদ গ্রামে পৌঁছুলেন । গ্রামের সামনে পৌঁছুতে না পৌছুতেই দূর থেকে শোনা যাচ্ছে মেয়েদের কন্ঠে স্থানীয় লোক সংগীত্ । পু ই জাতির মেয়েরা রঙবেরঙের পোষাক পরে দুই হাতে মদের কাপ তুলে সংবাদদাতাকে মদ খেতে দিচ্ছিলেন । একজন গ্রামবাসী লি সিং সংবাদদাতাকে বলেন , এটাকে মঙ্গলকামনার জন্য অতিথিদের বাধ্যতামূলকভাবে মদ খাওয়ানো রীতি-নীতি বলা হয় ।

    সম্মানিত অতিথিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই ধরনের মদ খাওয়াতে হয় । এই ধরনের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করার জন্য অল্পবয়সীদের একবার আর প্রবীণদের একবার মদ খাওয়ানো হয় ।

    তিনি বলেছেন , পু ই জাতির চালচলন অনুযায়ী , অতিথিরা দুই কাপ মদ খেয়ে ফেললেই পু ই জাতির গ্রামে প্রবেশ করতে পারবেন । অবশ্যই যারা মদ খেতে পারেন না , তাদের কোনো চিন্তার প্রয়োজনও নেই । কারণ তাদের যে মদ খাওয়ানো হয় , তা চালের মদ । মদে মিষ্টি আছে এবং তা খেলে মানুষের অনায়াসে নেশা হয় না ।

    চাঁদ গ্রামের প্রতিটি বাড়ি বাঁশে ঘেরা । দৃশ্য মনোরম । গ্রামের বাইরে যে চাঁদ নদী বইছে , তাতে এই পাড়াগাঁর অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক ও কমণীয়তা ফুটে উঠেছে । পু ই জাতির মেয়ে ওয়াং হুই সংবাদদাতাকে বলেছেন , এই চাঁদ নদীর দরুণ গ্রামের নাম চাঁদ রাখা হয়েছে । এই নদীর ওপর একটি বিস্ময়কর রূপ কথা প্রচলিত আছে ।

    অতি প্রাচীনকালে মাও মেই নামে একটি মেয়ে ছিল । সে আর চাঁদ বড় ভাই নামে একটি ছেলে ছিল তার শৈশবসঙ্গী । এখানকার রাজা ইয়ান্ লাং ওয়ান্ মাও মেইয়ের লাবণ্যে খুব আকৃষ্ট ও লোভী হন । তিনি তাকে নিজের আয়ত্বে নেয়ার অপচেষ্টা চালান । মাও মেই কোনো মতেই নতি স্বীকার করে নি । রাজা বলেন , চাঁদ বড় ভাই এই নদী প্রবাহিত হওয়ার দিকস্থিতি পরিবর্তন করলেই তারা দু'জনে মিলিত হতে পারবেন । এইভাবে চাঁদ বড় ভাই প্রতিদিন নদীর ধারে বসে থাকে । তাতে মুগ্ধ হয়ে যখন স্বর্গ নদী বয়ে যাবার দিক বদলাচ্ছে , তখন বন্যা হওয়ায় চাঁদ বড় ভাইকে অন্যত্র ভাসিয়ে নিয়ে যায় । মাও মেই খুব মর্মাহত হয় । সে প্রেমিক-প্রেমিকা নামক একটি পর্বতশৃঙ্গ থেকে নীচে লাফিয়ে পড়ল ।

    তার পর এই নদী পশ্চিম থেকে পূর্বে না বয়ে , বরং পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয় । এই নদীকে চাঁদ নদী বলা হয় । নদীর ধারে অবস্থিত এই গ্রামটিকেও চাঁদ গ্রাম বলা হয় । চাঁদ গ্রামে পু ই জাতির বিচিত্র ঐতিহ্য ও আচার ব্যবহারও সংরক্ষিত আছে । এর মধ্যে তামার ঢোল একটি সবচেয়ে ঐতিহ্যিক জিনিস বলা যায় । যখন সংবাদদাতা এই গ্রামে সাক্ষাত্কার নিচ্ছিলেন , তখন চীনের চান্দ্রবর্ষের ষষ্ঠ মাসের ৬ তারিখ পু ই জাতির ঐতিহ্যিক উত্সব--- পু ই জাতির লোক সংগীত্ উত্সব পালিত হচ্ছে । উদযাপনী অনুষ্ঠানে সংবাদদাতা পু ই জাতির তামার ঢোল বাজানো দেখলেন ।

    তামার ঢোলের উপরে নানা রকম জীবপ্রাণীর ছবি সাজানো রয়েছে । পু ই জাতির উপাসনা অনুষ্ঠানে তামার ঢোলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাদ্যযন্ত্র বলে ব্যবহার করা হয় । পু ই জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রতিটি গ্রামে কমপক্ষে একটি তামার ঢোল আছে । এই তামার ঢোল সাধারণতঃ গ্রামের সর্দার বা বয়স্কদের কাছে সংরক্ষিত আছে । ৭০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ ছেন চুং হেং এই গ্রামের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ঢোল বাদ্যযন্ত্রী । তিনি তামার ঢোলের ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন ,

    তামার ঢোল আমাদের পু ই জাতির একটি মূল্যবান বাদ্যযন্ত্র । এটা আমাদের জাতির প্রতীক । রূপকথা অনুযায়ী , প্রাচীনকালে তামার ঢোল যুদ্ধে ব্যবহার করা হতো । তা জাতির ঐক্যের পরিচায়ক ।

    রূপকথায় আরো বলা হয়েছে , তামার ঢোল স্বর্গের দেবতা পু ই জাতিকে উপহার দিয়েছেন । বয়স্কদের মৃত্যুর সময় তামার ঢোল বাজালে দেবতা হওয়ার জন্য তাদেরকে স্বর্গে পাঠানো যাবে । নববর্ষে পূর্বপুরুষদের উপাসনা করার সময় তামার ঢোল বাজালে উত্সব পালনের জন্য পূর্বপুরুষরা নাতি-নাতনীদের কাছে যাবেন । যাতে প্রাচুর্যময় ফসল পাওয়া আর পরিবার পরিজনের মঙ্গলকামনা করা যায় । যেহেতু পু ই জাতির মধ্যে তামার ঢোলের বিশেষ ভূমিকা আছে , সেহেতু তা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে । সাধারণতঃ নববর্ষ , শেষকৃত্য অনুষ্ঠান ও উত্সব পালনের সময় তামার ঢোল বাজানো হয় । তামার ঢোল বাজানোর আগে একটি আড়ম্বরপূর্ণ উপাসনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।

    তামার ঢোল উপাসনা অনুষ্ঠান গ্রামের একটি সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান । তামার ঢোলের সামনে উপাসনায় ব্যবহার্য মুর্গীসহ নানা রকম ব্যঞ্জন রাখা আছে । গ্রামের সর্দারের সভাপতিত্বে গ্রামের সকল বিবাহিত পুরুষ সম্মিলিতভাবে ঢোল বাজান । সবাই বংশপরম্পরায় প্রচলিত উপাসনার বুলি মুখস্থ করেন , কোমরে লাল রেশমে বাঁধা অল্পবয়সীরা বাটির চালের মদ ছুড়ে ফেলেন । বৃদ্ধ ছেন চুং হেং ঢোল উপাসনার অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছেন , তামার ঢোল পু ই জাতির বিস্ময়কর ঢোল । তারা তাকে খুব সম্মান প্রদর্শন করেন । সুতরাং প্রতি বছর সবাইকে ঢোলকে উপাসনা করতে হয় । উপাসনা অনুষ্ঠানের সময় মাংস , মুর্গীসহ বিবিধ ব্যঞ্জনের বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন ।

    পু ই জাতির একজন অল্পবয়সী ঢোল বাদ্যযন্ত্রি ছেন লু চিয়াং বলেছেন , তামার ঢোল বিষয়ক রীতি-নীতি যুগ যুগ ধরে উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করা হবে । এতে পু ই জাতির বিভিন্ন প্রজন্মের লোকদের প্রতি মঙ্গলকামনা করা হয় ।