চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর তৃতীয় জাতীয় সাংস্কৃতিক উত্সব ২৫ সেপ্টেম্বর পেইচিংয়ে শেষ হয়েছে । চীনের সংখ্যালঘু জাতি বিষয়ক এক কর্মকর্তা বলেছেন , এই উত্সবে চীনের বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি যে সব চিত্তাকর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছে , তা' চীনের সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুফল । পরবর্তীকালে চীন সংখ্যালঘু জাতিগুলোর বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কাজে আরো বেশি গুরুত্ব দেবে ।
চীন একটি বহুজাতিক দেশ । হান জাতি ছাড়া চীনে ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতি আছে । প্রতিটি সংখ্যালঘু জাতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতি আছে। এ সব সংস্কৃতি থেকে সংখ্যালঘু জাতির প্রজ্ঞতা প্রতিফলিত হয়েছে । দীর্ঘকাল ধরে অন্যান্যজাতির সঙ্গে একত্রে বসবাস ও বিনিময়ের ফলে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর নিজ জাতির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের উপর প্রতিকূল প্রভাব পড়েছে । এ জন্যে চীন সরকার বরাবরই সংখ্যালঘু জাতিগুলোর ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি রক্ষা ও উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয় ।
চীনের সংখ্যালঘু জাতি বিষয়ক জাতীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান তোনড্রপ ওয়াংদেন কিছু দিন আগে এক ভাষণে বলেছেন , চীনে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সংস্কৃতি রক্ষার আইন ও নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে । তিনি আরো বলেছেন , চীনের সংবিধান ও সংখ্যালঘু জাতির স্বায়তশাসন আইনে স্পষ্টভাষায় সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতিকে মর্যাদা প্রদর্শন এবং নিজ জাতির বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতি উন্নয়নকে সমর্থন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে । প্রতিটি জাতিরই নিজ জাতির ভাষা ব্যবহার ও প্রসারের অধিকার আছে । একই সঙ্গে নিজ জাতির রীতিনীতি বজায় রাখা ও সংস্কার করা এবং ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা আছে ।
তিনি আরো বলেছেন , সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি রক্ষার জন্য চীন সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে । সংখ্যালঘু জাতির সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ ও বাঁচানোর জন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। জানা গেছে , গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে চীন সংখ্যালঘু জাতির পাঁচ হাজারেরও বেশি প্রাচীন পুথিঁপত্র সংগ্রহ ও ছাপিয়েছে এবং সংখ্যালঘু জাতি সম্পর্কিত চার শ' নানা ধরনের বই প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সংস্কৃতি রক্ষার জন্য প্রতি পাঁচ বছর পর পর জাতীয় সাংস্কৃতিক উত্সব আয়োজন করা হয় ।
তোনড্রপ ওয়াংদেন বলেছেন , কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারের আর্থিক সাহায্য ও নানা ব্যবস্থা নেয়ার ফলে চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সংস্কৃতি রক্ষার কাজে সাফল্য অর্জিত হয়েছে । তবে এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও আছে । যেমন সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সংস্কৃতি রক্ষা ক্ষেত্রে সরকারী অর্থবরাদ্দ চাহিদার চেয়ে কম এবং সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতির প্রচার যথেষ্ট নয় ইত্যাদি ।এ সব সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি বলেছেন , পরবর্তীকালে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সাংস্কৃতিক উন্নয়নে সরকারী অর্থবরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে । বিশেষ করে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় সরকার বিশেষ আর্থিক সাহায্য দেবে ।
তিনি বলেছেন , চীনের সংখ্যালঘু জাতি বিষয়ক জাতীয় কমিটি পরবর্তী পাঁচ বছরে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে । এই পরিকল্পনায় সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি রক্ষার বিষয়বস্তু আছে । যেমন সংখ্যালঘু জাতিগুলোর প্রাচীন পুঁথিপত্র প্রকাশ ও সংখ্যালঘু জাতির ভাষার বইপত্র প্রকাশকে প্রাধান্য দেয়া হবে। এ ছাড়া সংখ্যালঘু জাতির তিনটি মহাকাব্য--তিব্বত জাতির ' ক্সাল' মঙ্গোলিয় জাতির ' চিয়ানগেল ' আর কেলকেচি জাতির ' মানাস ' ও অন্য জাতির লোক সংস্কৃতি ও রীতিনীতির সংগ্রহ ও প্রকাশনার কাজ আরো জোরদার করা হবে।
টোনড্রপ ওয়াংদেন মনে করে , সংখ্যালঘু জাতি অধুষিত অঞ্চলের সংস্কৃতির প্রসার শুধু সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি সংরক্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় , বরং আঞ্চলিক অর্থনীতির প্রসার তরান্বিত করতে পারে ।
|