২১ সেপ্টেম্বর জেনিভায় প্রকাশিত ২০০৬ সালে আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে , গত ২০ বছর ধরে আফ্রিকার অর্থনীতি মন্থর রয়েছে । কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে পুনরায় সেখানে তা টেকসই বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দিয়েছে । এই ভাল প্রবণতা বজায় রাখার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত আফ্রিকায় সাহায্যের প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সাহায্যের বিষয়টির ওপর আরো বেশি মনোযোগ দেয়া ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে , বর্তমান শতাব্দির প্রথম দিক থেকেই আফ্রিকার অর্থনীতি টেকসই বেড়ে যাচ্ছে । চীন, ভারতসহ নবোদিত বাজারের চাহিদা বিপুলমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে । এতে আফ্রিকার বাণিজ্য ও পুঁজিবিনিয়োগের জন্য নতুন সুযোগ বয়ে এনেছে । আগেকার অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার সারসংকলন করার ভিত্তিতে বহু আফ্রিকান দেশ সার্বিক অর্থনৈতিক সংস্কার চালাচ্ছে । আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্ব সম্প্রদায় আফ্রিকাকে অর্থ সাহায্য বাড়ানো এবং ঋণ মওকুফ করার ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে । এতে আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভবিষ্যত-সম্ভাবনার ব্যাপারে বিশ্ব জনগণের আশা-আকাংক্ষাও আবার জেগে উঠেছে ।
কিন্তু রিপোর্টে বলা হয়েছে , আফ্রিকা এখনো কঠোর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন । আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সহস্রাব্দের উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আফ্রিকা মহাদেশ ইতোমধ্যে পশ্চাত্পদ হয়েছে । সময়মতো এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার জন্য আগামী দশ বছরের মধ্যে আফ্রিকান দেশগুলোর উচিত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার বছরে ৮ শতাংশেরও বেশী বজায় রাখা । কিন্তু জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুসন্ধান অনুযায়ী, এবছর আফ্রিকার অর্থনেতিক বৃদ্ধি হার শুধু ৫.৫ শতাংশে দাঁড়াবে । জ্বালানী ও খনিজ পদার্থের দাম বেড়ে যাওয়ায় যদিও আফ্রিকান দেশগুলোর জন্য বিরাট উপকার বয়ে এনেছে , কিন্তু এতে এই সব দেশের দারিদ্র্য বিমোচন করা হয় নি এবং ধনী ও দারিদ্র্রের ব্যবধান কমানো ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর ব্যাপারে তা কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে নি।
রিপোর্টে আফ্রিকায় বিদেশের সাহায্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে । রিপোর্টটি মনে করে যে , বর্তমানে আন্তর্জাতিক সাহায্য ব্যবস্থার মধ্যে বেশ কয়েকটি সমস্যা বিদ্যমান । যেমন সাহায্য দানের ব্যবস্থায় রাজনৈতিক প্রবণতা আছে , খরচ বেশি । সাহায্যের ব্যাপারে শুধু স্বল্পকালীন ফলপ্রসূতার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় , কিন্তু সমন্বয় ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে । সাহায্য গ্রহীতা দেশগুলোর উপর অতিরিক্ত চাহিদা চাপিয়ে দেয়া হয় । সুতরাং এই সব সাহায্য পাওয়ার জন্য সাহায্য গ্রহীতা দেশগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে দামের স্থিতিশীলতা ও ব্যক্তি মালিকানাসহ পুনর্গঠনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । ফলে বহু সাহায্য গ্রহীতা দেশগুলোকে বাধ্য হয়ে অর্থনীতির সংকোচ বিষয়ক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে । অন্য দিকে সাহায্য গ্রহীতাদেশগুলোর সঙ্গে সাহায্য দানকারী দেশগুলোর আদান প্রদান ও সমন্বয়ের অভাব বলে নিজের ইচ্ছামতো সাহায্য গ্রহীতা দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক লক্ষ্য ও অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প বাছাই করা হয় । ফলে ভিন্ন দেশের ভিন্ন আশা-আকাংক্ষা ও আর্থিক ব্যবস্থার কারণে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়েছে । অন্য দিকে সাহায্য দাতা দেশগুলোর সঙ্গে সাহায্য গ্রহীতা দেশগুলোর আদান প্রদান ও সমন্বয়ের অভাব এবং তারা শুধু ইচ্ছামতো সাহায্য দানকারী দেশগুলোর প্রণীত অর্থনৈতিক লক্ষ্য ও বাছাই প্রকল্পগুলো গ্রহণ করে বলে সাহায্যের ক্ষেত্রে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়েছে ।
উপরোক্ত নানা রকম ভুলত্রুটি পূরণ করার জন্য রিপোর্টে এক ধরনের আন্তর্জাতিক সাহায্য কাঠামো গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে । যাতে রাজনৈতিক চাপ ছাড়া জাতিসংঘ তহবিলের মাধ্যে সাহায্য বিলি করা যায় । বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণও জাতিসংঘ তহবিলের মাধ্যমে বিলি করা যায় । রিপোর্টে বলা হয়েছে যে , সাহায্য গ্রহীতা দেশগুলো যার যার নিজস্ব বিষয়ে অভিমত প্রকাশ করার জন্য জাতিসংঘের ভেতরে একটি নতুন ফোরাম গড়ে তুলতে হবে । এই ধরনের কাঠামো গড়ে তোলার ফলে সাহায্য গ্রহীতা পক্ষগুলোর মধ্যেকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমে যাবে , প্রশাসনের ব্যয় বিপুলমাত্রায় হ্রাস পাবে এবং সাহায্যের রাজনৈতিক প্রবণতাও রোধ করা যাবে ।
|