v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-22 19:50:55    
ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা প্রবর্তনে কৃষকরা সমৃদ্ধ হচ্ছে

cri
    ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থার জন্ম হয় বাংলাদেশে । এই ব্যবস্থার সফলতা সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে । চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে । চীনের রাষ্ট্রীয় দারিদ্র্য দূরীকরণ তহবিলের উদ্যোগে ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক প্রকল্পগুলো সি ছুয়ান , কুই চৌ , শান শি আর ফু চিয়ান প্রদেশের দরিদ্র এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে আছে । সম্প্রতি আমাদের সংবাদদাতা কুই চৌ প্রদেশের ফান জেলার মা ছাং থানার হেই সেং দি গ্রামে সাক্ষাত্কার নিতে গিয়েছিলেন । দারিদ্র্য দূরীকরণ করার জন্য এই গ্রামটি স্থানীয় ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা চালু হওয়া একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেন্দ্র ।

    গাড়িতে করে গ্রাম্য পথে তিন ঘন্টারও বেশি সময় লাগল এই গ্রামে পৌঁছুতে। হেই সেন দি গ্রাম থরে-বিথরে উঁচু পর্বতমালায় ঘেরা । এটা একটি প্রাচীন পল্লীগ্রাম । কিন্তু এতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে যৌবনের লক্ষণ বিচ্ছুরিত হচ্ছে । নিবিড় অরণ্য , সুবিন্যস্ত উদ্যান , প্রশস্ত ও স্বচ্ছ বাড়িঘর । প্রৌঢ়রা গোশালায় গরুকে ঘাস খাওয়াচ্ছেন । বয়স্করা বাড়ির প্রাঙ্গনের সামনে বসে গল্প করছেন । থানার পার্টি-কমিটির সম্পাদক কুও শি কুই সংবাদদাতাকে বলেন , আগে গ্রামটি ছিল অন্য রকম । তিনি বলেছেন ,

    গ্রামটি পাবর্ত্য এলাকায় অবস্থিত জমি অনাবাদী । আগে এই গ্রামে আবাদী জমি তৈরীর কার্যক্রম অনেক দুঃখ-কষ্টে চলছিল । একটু অসাবধান হলে গরু পা ফসকে পাহাড় থেকে নীচে পড়ার আশংকা ছিল । আয় করা তো আরো দূরের কথা । চাষাবাদের ওপর নির্ভর করে কৃষকদের পেট কোনো রকমে ভরা যেতো ।

    তবু দারিদ্র্যের সামনে কৃষকরা কোনো নতি স্বীকার করেন নি । নিজেদের ভাগ্য বদলানোর জন্য তারা নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছেন । ২০০১ সালে জেলা ও থানা কর্তৃপক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় হেই সেন দি গ্রাম দেড় লাখ ইউয়ানের প্রথম দফা ক্ষুদ্র ঋণ পেয়েছে । এতে পশু পালনের কার্যক্রম বিকশিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে । জেলা সরকার গ্রামের জন্য বিনামূল্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি শ্রেষ্ঠ গুণগত মান ষাঁড় আমদানি করল । স্থানীয় গরুর উত্কৃষ্টতা বাড়ানো আর উত্তম বংশ বিস্তার করার জন্য এই ষাঁড় কাজে লাগানো হচ্ছে । এই কার্যক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ল ২৪টি কৃষক পরিবারের লোক । হেই সেন দি গ্রামের প্রধান ওয়াং ওয়েন সিং সংবাদদাতাকে বলেন ,

    তখন বিশটিরও বেশী কৃষি পরিবারের উদ্যোগে গরু পালনের একটি খামার প্রতিষ্ঠিত হয় । এখন গ্রামে গরু পালনের এই ধরনের ৪টি খামার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । শতাধিক পরিবারের ৩ শতাধিক লোক এই কার্যক্রমে যোগ দিচ্ছেন । এতে কৃষকদের আয়ের ক্ষেত্রের ব্যাপকতা বেড়েছে ।

    গ্রামের সর্দার এক দিকে সংবাদদাতাকে গ্রাম সম্পর্কে অবহিত করলেন , অন্য দিকে সংবাদদাতাকে ৪টি গোচারণ খামারে নিয়ে গেলেন । এই সব খামারে গোশালা সুবিন্যস্ত, নির্মল এবং ব্যবস্থাপনা সুশৃঙ্খল । গরু পালনের কার্যক্রম আরো সুষ্ঠুভাবে চালাতে কৃষকদের সাহায্য করা এবং গো চারণের প্রযুক্তি জনপ্রিয় করার জন্য পল্লী কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে গোশালা গড়ে তোলা হয়েছে । সকল গ্রামবাসী ব্যবস্থাপনার কাজে যোগ দেন । গ্রামে পশু পালনের নানাবিধ সমস্যা সমাধানের লক্ষে গ্রামবাসীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য প্রযুক্তিবিদদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে । সংবাদদাতার চোখে পড়ল , গরুর পাল স্বাচ্ছন্দ্যে চরছে আর খাচ্ছে । দেখতে ঝকঝকে ও স্ফূর্তিপূর্ণ । গ্রামের সর্দার সংবাদদাতাকে বলেছেন , এই সব গরুর গুণগত মান উত্কৃষ্ট । তা কেনার অর্ডার দেয়ার জন্য অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এখানে এসেছেন ।

    স্থানীয় প্রতিটি গরু সাধারণতঃ ২ হাজার ইউয়ানেরও বেশি দামে বিক্রি করা যায় । কিন্তু এই ধরনের গরুর দাম দ্বিগুণ । একটি গোশালায় তিন থেকে পাঁচটি গরু পালন করা হলে বছরে দুই থেকে তিনটি বাছুর বিক্রি করা যায় । এইভাবে প্রত্যেক কৃষক পরিবারের বার্ষিক আয় ১০ হাজার ইউয়ানেরও বেশি হয় ।

    এই সাফল্যের উত্সাহে গ্রামবাসীদের গরু পালনের আগ্রহ দিন দিন বেড়ে গেছে । গ্রামের সর্দার বলেছেন , এই সব ঋণ ছাড়া শুধু গ্রামবাসীদের নিজেদের পুঁজিবিনিয়োগের উপর নির্ভর করলে গরু পালনের কার্যক্রম চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই । গরু পালনের কার্যক্রম চালু করা না গেলে এই ধরনের ব্যাপক পরিবর্তন কি ভাবে হয়েছে ? এখন গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করা হচ্ছে । এই সব ঋণের সাহায্যে কৃষক পরিবার পশু পালন করতে সক্ষম হচ্ছে । গ্রামবাসীরা আগের চেয়ে অনেক স্বচ্ছল হয়েছেন ।

    সংবাদদাতা একটি কৃষক পরিবারের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । তিনি দেখেছেন , প্রবীণ প্রজন্মের রেখে-যাওয়া ক্ষীণ ও ক্ষয়িষ্ণু কাঠের ঘরের পাশাপাশি ইট ও টালি দিয়ে তৈরী কয়েকটি নতুন ঘর দেখা যায় । নতুন ঘর দেখতে উজ্জ্বল ও ঝকঝকে । বাড়িতে টেলিভিশন , অডিও - ডিভিডি , টেলিফোন ইত্যাদিসহ গার্হস্থ্য ব্যবহার্য অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য আছে । গৃহকর্তা হু ওয়েন খুয়ান সংবাদদাতাকে বলেছেন , তার বাড়িতে ৩ হাজার ইউয়ান ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবহার করে দুটো গরু কেনা হয়েছে । বছরে একটি বাছুর বিক্রি করে ২ হাজার ইউয়ান আয় করা হয় । এখন বাড়িতে ৫টি গরু , একটি ঘোড়া ও ৪টি ভেড়া পালন করা হচ্ছে । এতে বার্ষিক আয় ১০ হাজার ইউয়ানেরও বেশি হয়েছে ।

    তিনি আরো বলেছেন , আগের চেয়ে তার পরিবার এখন অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে । আগে জমি অনাবাদী ছিল । বাচ্চাদের লেখাপড়া তো বড় কথা । সারা বছর অনেক কষ্টে চাষাবাদ করা সত্ত্বেও পেট ভরেই খাওয়া করা যেতো না । এখন অন্নাভাব দূর হয়েছে । তিনি বলেন , সংস্কৃতি ও জ্ঞান ছাড়া কৃষকদের স্বচ্ছলতা অর্জন করা সম্ভবপর হবে না ।

    ক্ষুদ্রঋণের মেয়াদ ৫ বছর । ঋণ পরিশোধ সম্পর্কে বলতে গিয়ে হু ওয়েন খুয়ান বলেছেন , এখন কৃষকদের ৫ বছর মেয়াদী ক্ষুদ্র ঋণ পরিশোধের জন্য কোনো সমস্যা নেই । কৃষকদের জীবনযাপন সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে । ক্ষুদ্র ঋণের সাহায্যে কৃষকদের দারিদ্র্য দূর হয়েছে ।