v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-21 18:47:20    
মোকাও গুহা

cri

 মোকাও গুহা হচ্ছে বিশ্ব বিখ্যাত বৌদ্ধ ধর্মের ধ্বংসাবশেষ। স্থানীয় লোকেরা একে "সহস্রাব্দী বুদ্ধ গুহা" বলে গণ্য করেন। মোকাও গুহা চীনের কানসু প্রদেশের তুনহুয়াং শহরের দক্ষিণ-পূর্বের ২৫ কিলোমিটার দূরে মিংসা পাহাড়ে অবস্থিত। ৩৬৬ সালে মোকাও গুহার খনন কাজ শুরু হয়। জানা গেছে, সেই সময় একজন সন্ন্যাসী এখানে ভ্রমণে এসেছিলেন। তিনি মিংশা পাহাড় থেকে বের হওয়া হাজার হাজার সোনালী আলো দেখে উপলব্ধি করেছিলেন যে, পাহাড়টি বৌদ্ধ ধর্মীয় পবিত্র স্থান। ফলে পাহাড়ে প্রথম বৌদ্ধ ধর্মীয় গুহা নির্মাণ করেন। এরপর বিভিন্ন রাজবংশের এই গুহার খনন কাজ অব্যাহত থাকার ফলে গুহার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ে। ১৩৬৮ সালের মধ্যে এখানে প্রায় হাজারটি বৌদ্ধ ধর্মীয় গুহা নির্মিত হয়। তখন এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। আর কেউ এখানে গুহা নির্মাণ করে নি।

 মোকাও গুহার আকার ভিন্ন ভিন্ন, বড় গুহা আছে, ছোট গুহাও আছে। মোকাও গুহার বুদ্ধ মুর্তি বৈচিত্রময়। গায়ে পরা পোষাক আর ভঙ্গি নানা ধরনের। এতে ভিন্ন আমলের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো মোকাও গুহাকে বিশ্ব পুরাকীর্তির তালিকায় অন্তভূক্ত করেছে।

 এখন পুরাকীর্তি সংরক্ষণের জন্য কেবল ৩০টি গুহা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। কেবল পথপ্রদর্শকের নেতৃত্বে উন্মুক্ত গুহাগুলোর ভিতরে প্রবেশ করা যায়। পথপ্রদর্শক মিস. লিউ হোং লি জানিয়েছেন, সাধারণ পর্যটকদের দশ বারোটি গুহা পরিদর্শন করতে দু'ঘন্টা সময় লাগে। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব গুহা দেখতে চাইলে কমপক্ষে এক দিন সময় লাগবে।

 লিউ হোং লি বলেছেন, পথপ্রদর্শকরা সাধারণতঃ পর্যটকদের প্রথমে ৯৬ নং গুহায় নিয়ে যান। কারণ এই গুহার বাইরে নয় তলা একটি ভবন আছে। এই ভবন হচ্ছে মোকাও গুহার প্রতীক স্থাপত্য। তিনি বলেছেন, "৯৬ নং গুহায় মোকাও গুহার বৃহত্তম বুদ্ধ মুর্তি আছে। এর নাম 'উত্তর বৃহত্ বুদ্ধ মুর্তি'। এই বুদ্ধ মুর্তির উচ্চতা ৩৫.৫ মিটার। এটা হচ্ছে রুমে বসানো বিশ্বের বৃহত্তম বুদ্ধ মুর্তি।"

৬৯৫ সালে ৯৬ নং গুহার খনন কাজ শুরু হয়। গুহার ভিতরে বুদ্ধ মুর্তিগুলো বহু বার পুননির্মিত হওয়ায় এর আদিম রূপ এখন আর দেখা যায় না। তবে এখানে আগেকার মতো মহা ও জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ বজায় রয়েছে। যদি পর্যটকরা মোকাও গুহার আসল চেহারা দেখতে চান, তাহলে ৩২৮ নং গুহায় যেতে পারেন। সেখানে কিছু অত্যন্ত চমত্কার মুর্তি আছে।

 ৩২৮ নং গুহার ভিতরে পাঁচটি প্রধান মুর্তি রয়েছে। মাঝখানের পদ্ম ফুল দিয়ে তৈরি আসনের উপর বসে আছেন শাক্যমুনি। তাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর বড় শিষ্য চিয়া ইয়ের মুর্তি। তাঁর ডান দিকে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর ছোট শিষ্য আনানের মুর্তি। দু'জন শিষ্যের পাশে আরো রয়েছেন দু'জন দেবতার মুর্তি। এই মুর্তিগুলো অত্যন্ত জীবন্ত।

 ১৫৮ নং গুহায় শুয়ে থাকা বুদ্ধ মুর্তিও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এই বুদ্ধ মূর্তি প্রায় ১৬ মিটার উচু। জানা গেছে, এই মূর্তি হচ্ছে শাক্যমুনির নির্বাণ মূর্তি। নির্বাণ হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মের বিশেষ শব্দ। বুদ্ধ বা সন্নাসীর মৃত্যুকে "নিয়ে ফান" অর্থাত্ নির্বাণ বলা হয়। পথনির্দেশক লিউ হোং লি বলেছেন, "শাক্যমুনি মূর্তি দেখতে খুব সুন্দর। তার চোখ, মুখ, নাক এবং ভ্রু সমন্বিত আছে। তাকে দেখলে মানুষের মন কাঁপবে। সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।"

 মূর্তি ছাড়া প্রাচীরচিত্রও মোকাও গুহার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হাজার বছরের বাতাস সহ্য করার পর এই প্রাচীরচিত্রগুলো এখনো রঙ্গিন এবং পরিষ্কার। প্রাচীরচিত্রের বিষয়বস্তু বেশির ভাগ বৌদ্ধ ধর্মীয় কাহিনী। প্রাচীরচিত্রে উড়ন্ত পরী সবচেয়ে প্রশংসনীয়।

বৌদ্ধ ধর্মে আকাশে উড্ডয়নতর দেবতাকে "উড়ন্ত পরী" বলে গণ্য করা হয়। তারা সাধারণতঃ বুদ্ধ বৌদ্ধ ধর্মের শাস্ত্র ব্যাখ্যা করার সময় এসে নাচ, গান করেন এবং ফুল পাঠান। মোকাও গুহার মধ্যে যে ৪৯০টি মুর্তি এবং প্রাচীরচিত্র আছে, এর প্রত্যেকটিতে উড়ন্ত পরীর চিত্র দেখা যায়। কোন কোন উড়ন্ত পরীর উড্ডয়ন হচ্ছে, কোন কোন উড়ন্ত পরী হাতে পদ্ম ফুল নিচ্ছে, কোন কোন পরীর কোলে চীনের ঐতিহ্যিক বাদ্যযন্ত্র পিপা আছে। উড়ন্ত পরীর চিত্রগুলো ভিন্ন, তবে সব চিত্র অতি জীবন্তপূর্ণ।

 চীনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা শিক্ষক চাং নি মোকাও গুহায় বহু বার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, মোকাও গুহার উড়ন্ত পরীর প্রাচীরচিত্র তাঁকে সবচেয়ে আকর্ষণ করে। তিনি বলেছেন, "দেখুন, এই উড়ন্ত পরীগুলো ডানা না থাকলেও আকাশে উড্ডয়ন করতে পারে, এর মধ্যে গভীর রোমান্টিক বর্ণ রয়েছে। ছবি আঁকার দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলেও বলা যায়, এই চিত্রগুলোর কাঠামো এবং ভাস্কর্য চমত্কার। বেশ কিছু ক্ষণ নজর দিলে মনে হয় এই ছবিগুলো জীবিত হতে পারে। "

 উড়ন্ত পরী ছাড়া মোকাও গুহার প্রাচীরচিত্রে নৃত্যরত মেয়েও প্রায়ই দেখা যায়। তারা সাধারণতঃ এক পা মাটিতে রেখে, আরেক পা উচ্চুতে তুলে, দুটি হাত পিঠে রেখে চীনের বাদ্যযন্ত্র পিপা বাজান। মনে হয়, তারা সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে নাচছে।

 চীনের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমির প্রত্নতত্ববিদ উ সিন হুয়া মনে করেন, মোকাও গুহার প্রাচীরচিত্রে "উড়ন্ত পরী" এবং "পিপা বাজানো মেয়ে" এর মতো ছবিগুলো চতুর্থ থেকে চৌদ্দ শতাব্দী পর্যন্ত চীনের প্রাচীন সমাজের অবস্থা গবেষণার জন্য মূল্যবান তথ্য দিয়েছে। তিনি এই প্রাচীরচিত্রগুলোকে "দেওয়ালে থাকা গ্রন্থগার" বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেছেন, "যেমন তুন হুয়াং মোকাও গুহার প্রাচীরচিত্রে যুদ্ধ ঘোড়ায় ব্যবহৃত অঙ্গস্ত্রাণ দেখা যায়। এই অঙ্গস্ত্রাণমধ্য শতাব্দীর পর ইউরোপে আবিষ্কার হয়েছে। বুঝা যায় , চীন ইউরোপের চেয়ে অনেক আগে থেকে ঘোড়ায় অঙ্গস্ত্রাণব্যবহার শুরু করে।"

 আচ্ছা, বন্ধুরা, সুযোগ থাকলে আপনা নিজেরাই মোকাও গুহা দেখতে যাবেন। উল্লেখ্য যে, মোকাও গুহায় যেতে চাইলে প্রথমে তুন হুয়াং পৌঁছতে হয়। বিমান বা রেলগাড়ি করে তুন হুয়াংয়ে যাওয়া যায়। তুন হুয়াং পৌঁছানোর পর টেক্সি করে মোকাও গুহায় যেতে পারেন। অবথা তুন হুয়ান শহরের বিভিন্ন হোটেল বা পর্যটন সংস্থার সংগঠিত পর্যটন দলের সঙ্গে মোকাও গুহায় যেতে পারেন।