লেবাননে মোতায়েন জাতিসংঘের অস্থায়ী বাহিনীর মুখপাত্র মিলোস স্ট্রুগার১৯ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেছেন, লেবাননের দক্ষিণাংশে মোতায়েন শান্তিরক্ষী বাহিনীর সংখ্যা প্রায় ৫০০০। ইতালি ও স্পেনের পাঠানো ২০০০ জন সৈন্যও ইতোমধ্যে পৌঁছেছে। ফ্রান্সের বাহিনী বৈরুত থেকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে চলে আসছে। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, লেবাননে যৌথ বাহিনী মোতায়েন করলে নিঃসন্দেহে তা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হবে। তবে এই বাহিনী জাতিসংঘের দেয়া শান্তিরক্ষা কর্তব্য পালনে নানা পরীক্ষার সম্মুখীন হবে।
প্রথমতঃ লেবানন ও ইস্রাইল তথা গোটা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির জটিলতা হচ্ছে বিভিন্ন দেশের অভিন্ন সমস্যা। বলা যায়, কিছু দিন আগে সমাপ্ত লেবাননের হিজবুল্লাহ আর ইস্রাইলের সামরিক সংঘর্ষ আসলে অর্ধ শতাব্দী স্থায়ী আরব দেশগুলো ও ইস্রাইলের সংঘর্ষের একটি সংক্ষিপ্তসার। সংঘর্ষের মাত্রা এমন উচু , বৈরিতা এমন প্রবল, যা বহু লোকের কল্পনার বাইরে। যদিও সংঘর্ষে জড়িত উভয় পক্ষ কেউ জয়লাভ করে নি, কিন্তু দু'পক্ষের বৈরি মনোভাব আগের চেয়ে আরো বেড়েছে। আবার সংঘর্ষ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর মোতায়েন মানে সংঘর্ষের কেন্দ্রে প্রবেশ করা। যদি আবার লড়াই শুরু হয়ে বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী দু'পক্ষের লক্ষ্যে পরিণত হতে পারে। ১৯৮৩ সালে মার্কিন মেরীন সেনার ২৪১ জন সদস্য নিহত হয়েছে। তখন থেকে মার্কিন বাহিনীর আর বৈরুতে যাওয়ার সাহস হয় নি।
দ্বিতীয়তঃ যৌথ বাহিনীর ক্ষমতা সম্পর্কে ইস্রাইল, লেবানন সরকার ও হিজবুল্লাহর ব্যাখ্যা ভিন্ন ভিন্ন। ইস্রাইল আশা করে, যৌথ বাহিনী হিজবুল্লাহর সশস্ত্র তত্পরতা বন্ধ করবে। লেবানন থেকে হিজবুল্লাহকে ইস্রাইলের দিকে রকেট ছুড়তে বাধা দেবে, প্রয়োজন হলে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ইস্রাইলের নিরাপত্তা রক্ষা করবে। লেবানন সরকার আশা করে, যৌথ বাহিনী দক্ষিণাঞ্চলে সরকারী প্রশাসন পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারী বাহিনীকে সাহায্য করবে, ইস্রাইলের আগ্রাসনের সময় লেবাননকে রক্ষা করবে। হিজবুল্লাহ মনে করে, যৌথ বাহিনীর কর্তব্যের আওতা কেবল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সীমারেখা রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারী বাহিনীকে সাহায্য করা।
আসলে যৌথ বাহিনীর কর্তব্যের ব্যাপারে জাতিসংঘের বক্তব্য খুব পরিষ্কার নয়। নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যৌথ বাহিনীর কর্তব্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে যুদ্ধবিরতি তত্ত্বাবধান করা, লেবাননে সরকারী বাহিনী মোতায়েনের সাহায্য করা, লেবাননের দক্ষিনাংশে লেবাননের সরকারী বাহিনী এবং শান্তিরক্ষী বাহিনী ছাড়া অন্য কোন সশস্ত্র সংস্থা বা ব্যক্তির তত্পরতা চালাতে না দেয়া। যৌথ বাহিনীর সেনাপতি আলাইন পেলেগ্রিনি ১৮ সেপ্টেম্বর বলেছেন, তারা লেবাননের হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এটা হচ্ছে লেবাননের সরকারী বাহিনীর দায়িত্ব, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর কর্তব্য নয়। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের ব্যাখ্যা ভিন্ন বলে যৌথ বাহিনীর ক্ষমতা স্পষ্ট নয়। এটা যৌথ বাহিনীর লেবাননে শান্তিরক্ষা কর্তব্য পালনে একটি বড় বাধার সৃষ্টি করেছে।
যৌথ বাহিনী মোতায়েনের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার নিয়ে লোকজনের আশা আবার বেড়েছে। এর মধ্যে অনির্দিষ্ট উপাদানগুলো বিবেচনা করে জনসাধারণ উপলব্ধি করেছেন যে, যৌথ বাহিনীকে শান্তিরক্ষা কর্তব্য পালন করতে অনেক কঠিন অবস্থা মোকাবেলা করতে হবে। এই সমস্যা নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ৬১তম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে না পারলে, জাতিসংঘের কর্তৃত্বের উপর সন্দেহ সৃষ্টি হবে।
|