১৬ বছর আগে , একজন তরুণ ভারতীয় ছাত্র চীনে যাওয়ার ফ্লাইটে উঠেছে । তাঁর স্বপ্ন ছিল চীনে ভালোভাবে লেখাপড়া করা এবং একজন পন্ডিত হওয়া । তবে অবশেষে তিনি চীনে একজন বিখ্যাত শিল্পপতী হয়েছেন । তিনি ৬০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের একটি শিল্প গ্রুপের অংশীদার হয়েছেন ।
১৬ বছরের আগে তিনি একজন ছাত্র ছিলেন । এখন তিনি তাঁর জন্মভূমি কলকাতায় একটি শিল্প প্রকল্পে পুঁজি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন ।
আগে আমার স্বপ্ন ছিল একজন প্রফেসর হওয়া । আমি কখনই ভাবি নি যে আমি ব্যবসা করবো । সাকনিক রোই এই কথা বলেছেন । তিনি সম্ভবত চীনে সবচেয়ে সফল ভারতীয় ব্যবসায়ী । তিনি হলেন চীনের ইয়ুং থুং গ্রুপের একমাত্র ভারতীয় অংশীদার । তিনি , তাঁর স্ত্রী এবং কিছু আত্মীয়সজন ও বন্ধু এই গ্রুপ পরিচালক করেন ।
চীনা ব্যবসায়ীদের মুখে এই বিখ্যাত এবং সফল ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্পর্কে জানা গেছে ,তিনি যখন চীনে এসেছেন , তখন তাঁর পোকেটে শুধু বিশ মার্কিন ডলার ছিল । বর্তমানে ৪০ বয়সী রোই একটি শিল্প প্রকল্পে ১কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার পুঁজি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন । এই প্রকল্প হল কলকাতায় কম্পিউটারের হাডওয়ার উত্পাদন করা ।
রোইয়ের বাবা মা শিক্ষক । রোই ভারতের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীর চীনা ইন্সটিটিউটে স্নতক হওয়ার পর ১৯৯০ সালে চীন-ভারত সংস্কৃতি বিনিময়ের এক প্রকল্পের সুযোগে তিনি চীনে আসেন । চীনে এসে তিনি ভাবেন , এখানে এত বেশি সুযোগ আছে । এর জন্য তিনি খুব আনন্দিত হত ।
তিনি কয়েকটি মার্কিন কোম্পানীতে কাজ করেছেন । এসব কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি চীনে ব্যবসা করার পদ্ধতি শিখেছেন । তিনি আগে কিছু ভারতীয় ওষুধ কোম্পানীর চীনা শাখার ম্যঅনেজার ছিলেন । চীনে তিনি ৬ বছর ব্যবসা করেছেন । ছ'বছর পর ১৯৯৬ সালে তিনি চীনের একটি ইস্পাত কারখানার জন্য ভারত থেকে ১১ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের লৌহ আকরিক আমদানির সুযোগ করে দিয়েছেন । এর পর তাঁর ব্যবসা আরো ভালো হয়েছে । অবশেষে তিনি একটি বড় গ্রুপ কোম্পানীর একমাত্র ভারতীয় অংশীদার হয়েছেন ।
রোইয়ের ব্যবসা ক্ষেত্রের গুরুত্বগূর্ণ উন্নতি হয়েছে থিয়েন ফু নামে একজন নারী ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় । পরিচিত হওয়ার পরের বছরে তাঁরা বিয়ে করেন । তাঁরা পরস্পরকে সাহায্য করেন । তাঁরা শুধু স্বামী স্ত্রীই নন , ভালো ব্যবসায়িক অংশিদাও । তিনি বলেছেন , স্ত্রী আমাকে চীনা সমাজ ও চীনের ব্যবসা মহলে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে উত্সাহ দেন । আমার স্ত্রী আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন ।
গত দু'বছরে চীন সফররত অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী তাঁর বন্ধু হয়েছেন । তাঁরা বোইয়ের কাছে চীনাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা এবং ব্যবসা করার পদ্ধতি শিখতে চান । যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশের ব্যবসায়ীরাও এই সম্পর্কে তাঁর কাছ থেকে কিছু জানতে চান । তাঁরা আবিস্কার করেছেন যে , চীনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেক ইংরেজি জানেন না । ভাষা না জানলে যোগাযোগও কঠিন ।
রোই বলেছেন , আমাদের দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজ্ঞতা শেখা উচিত । ১০ বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়া কয়েক শোরও বেশি মধ্যপর্যায়ের ম্যানেজারকে চীনে পাঠিয়েছে । তাঁদের পরিবারও চীনে এসেছেন । এসব ম্যানিজার কোম্পানীর ব্যবসায় অংশ নেন না । তাঁদের প্রধান কাজ ছিল চীনা ভাষা শেখা , চীনের সংস্কৃতি উপলব্ধি করা এবং চীনাদের সঙ্গে বন্ধুত্বও স্থাপন করা । এসব প্রয়াসের ফলে এখন চীনে তাঁদের ব্যবসার ভালো ভিত্তি স্থপিত হয়েছে । ফলে তাঁরা আরো সুবিধা এবং আরো সহজেই চীনের সঙ্গে ব্যবসা করতে শুরু করেছেন ।
চীনে রোইয়ের ব্যবসা অনেক সফল , তিনি এত বছর ধরে অনেক বাণিজ্যিক অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন । তিনি এসব অভিজ্ঞতা অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও ভাগাভাগি করেন । বিশ্বাস করি চীনে তাঁর ব্যবসা আরো ভালো হবে ।
|