ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ ১৬ সেপ্টেম্বর কিউবার রাজধানী হাভানায় বৈঠক করেছেন। দু'পক্ষ কতকগুলো সমস্যায় মতৈক্য পৌঁছেছে এবং বোম্বাইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের কারণে বন্ধ হওয়া শান্তি আলোচনা আবার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী সিং এবং প্রেসিডেন্ট মুশাররফ বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর প্রকাশিত যুক্ত বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, দু'দেশের নেতারা আন্তরিক ও সরল পরিবেশে দু'দেশের সম্পর্কের সকল ক্ষেত্র নিয়ে বিস্তারিত মত বিনিময় করেছেন। তাঁরা যাবতীয় ধরনের সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা করেন। তাঁরা মনে করেন, সন্ত্রাসবাদ হচ্ছে বড় বিপদ, ফলপ্রসূভাবে তা মোকাবেলা করতেই হবে। দু'দেশের নেতারা যৌথভাবে সন্ত্রাস-দমন ব্যবস্থা এবং সন্ত্রাসবাদের তদন্ত ও এর বিরুদ্ধে আঘাত হানার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সিন্ধান্ত নিয়েছেন। দু'দেশের তথ্য মাধ্যম মনে করে, এবারের বৈঠকে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এর প্রবল বাস্তব তাত্পর্য আছে। এ থেকে সন্ত্রাস দমন ক্ষেত্রে দু'দেশের সহযোগিতা জোরদার করার স্বদিচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে।
১১ জুলাই ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের বোম্বাই শহরের উপকন্ঠে রেলগাড়ির ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটেছে। ভারত সরকার মনে করে, এবারের বিস্ফোরণ একটি সন্ত্রাসী হামণা ঘটনা। পাকিস্তানের সন্ত্রাসী কোন সংগঠন এ হামলা চালিয়েছে। ফলে ভারত পূর্বনির্ধারিত নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠেয় পাক-ভারত কূটনৈতিক সচিব পর্যায়ের বৈঠক একপক্ষীয়ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। পাক-ভারতের শান্তি আলোচনা এর মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যায়। যদিও পাকিস্তান বারবার বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তবে ভারত বরাবরই মনে করে যে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে, পাক-ভারত সার্বিক সংলাপ প্রক্রিয়া আর এগিয়ে সম্ভব নয়। সে জন্য বলা যায়, এবারের পাক-ভারত শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে সন্ত্রাস দমন সমস্যায় যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তা দু'দেশের শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার পথ সুগম করেছে।
যুক্ত বিবৃতিতে দু'দেশের নেতারা আরো বলেছেন, তাঁরা অব্যাহতভাবে শান্তিপুর্ণ আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যাসহ দু'পক্ষের যাবতীয় মতভেদের সমাধান করবেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দু'দেশের নেতারা নিজ দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক নয়াদিল্লীতে পুনরায় শুধু করার আদেশ দিয়েছেন। যাতে শান্তি প্রক্রিয়া আবার শুরু করা যায়। দুই নেতা সুনির্দিষ্ট কাজের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, অর্থাত্ শিয়াচিন হিমবাহ ও শ্রিক্রিক অঞ্চলের সীমারেখা সমস্যা দ্রুত নিষ্পত্তি করা এবং কাশ্মীরে দু'দেশের নিয়ন্ত্রণ লাইনের দু'পারে পারস্পরিক আস্থা প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা দ্রুত কার্যকর করা।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বোম্বাই বিস্ফোরণ ঘটনার মাত্র দু'মাসের মধ্যে পাক-ভারত নেতাদের বৈঠক এমন বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে, তা কল্পনা করা যায় না। কারণ প্রথমে পাক-ভারতের শান্তি প্রক্রিয়া হচ্ছে ঐতিহাসিক প্রবণতা । এর কোন বিকল্প নেই। এ বিষয়ে দু'দেশের নেতারা একমত। ভারত সবসময় মহান দেশের মর্যাদা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। যদি পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে বৈরিতা অবস্থা অবশান না করতে পারে, তা ভারতের মহান দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুতর প্রভাব ফেলবে। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণদানে প্রেসিডেন্ট মুশাররফ বলেছেন, পাক-ভারতের নেতাদের উচিত ঐতিহাসিক সুযোগ কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার উত্তেজনা ও সংঘর্ষ অবশান করা। যাতে যথাসাধ্য শক্তি দিয়ে এই অঞ্চলের জনগনের দারিদ্র্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনের মান উন্নয়নের সমস্যা সমাধান করা যায়।
দ্বিতীয়তঃ, পাক-ভারতের সার্বিক সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে দু'বছর। নিরাপত্তা ক্ষেত্র, লোকজনের যাতায়াত, অর্থনীতি ও বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দু'পক্ষের পারস্পরিক আস্থার মাত্রা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। হাভানা বৈঠক হচ্ছে গত দু'বছরে প্রধানমন্ত্রী সিং আর প্রেসিডেন্ট মুশাররফের চতুর্থ সরাসরি বৈঠক।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারত ও পাকিস্তানের উচিত পারস্পরিক আস্থা বাড়িযে যাবতীয় হস্তক্ষেপ বাতিল করে দু'দেশের শান্তি প্রক্রিয়া স্থিতিশীলভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
|