সিঙ্গাপুর শহরটিই একটি দেশ। ৬৯০ বর্গকিলোমিটার ভূমিতে ৪২ লাখ অধিবাসী বসবাস করেন। যদিও সিঙ্গাপুরে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশী, তবে সেখানকার সড়ক পরিবহন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল। সিঙ্গাপুরের গণ পরিবহণ ব্যবস্থা খুব উন্নত। পাতাল রেল বা পাবলিক বাস প্রভৃতি গণ পরিবহণ মাধ্যমে যাতায়াত করা হচ্ছে বর্তমানে সিঙ্গাপুরের অধিবাসীদের প্রধান পরিবহণ পদ্ধতি।
সিঙ্গাপুরের গণ পরিবহণ পাতাল রেল আর পাবলিক বাস ব্যবস্থা নিয়ে গঠিত। পাতাল রেল হচ্ছে সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে সুবিধাজনক পাবলিক পরিবহণ ক্ষেত্র। এখন সিঙ্গাপুরে তিনটি পাতাল রেল লাইন আছে, তা দিয়ে মোটামুটি পুরো দ্বীপে যাতায়াত করা। এর মধ্যে ভারী রেলের লাইনের ৬৭টি স্টেশন আছে। হালকা রেলের লাইনের ৪৩টি স্টেশন আছে। প্রচণ্ড ব্যস্ততার সময় প্রতি তিন মিনিট অন্তর একটি পাতাল রেল চলাচল করে। পাতাল রেল স্টেশনের পরিচালনা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় বাস্তবায়িত হয়। পাবলিক বাস সিঙ্গাপুরের প্রতিটি রাস্তায় ছড়িয়ে আছে। বর্তমানে সিঙ্গাপুরে ২৬০টিরও বেশি পাবলিক বাস লাইন আছে এবং সর্ব মোট ৩৩০০টি পাবলিক বাস আছে।
সিঙ্গাপুরের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারং ইনস্টিটিউটের উপ-অধ্যাপক লি দে হোং মনে করেন, বিশ্বের অন্যান্য একই ধরণের শহরের তুলনায় সিঙ্গাপুরের পরিবহণ ব্যবস্থা অনেক ভালো। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সিঙ্গাপুর সরকার ব্যক্তিগত মালিকানা গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করেছে। তিনি বলেছেন, "প্রথমতঃ সিঙ্গাপুরে উচু শুল্কের হার বেশী এবং অধিকতর কর নেয়া হয়। সুতরাং সিঙ্গাপুরে ব্যক্তিগতভাবে একটি গাড়ি কেনা ব্যয়বহুল। দ্বিতীয়তঃ একটি ব্যক্তিগত মোটর-গাড়ি কেনার আগে একটি বিশেষ অনুমোদন পত্র লাগবে। এই অনুমোদন পত্রের দাম বাজারের পরিবর্তনশীল দাম অনুসারে নির্ধারিত হয়। তৃতীয়তঃ সিঙ্গাপুর সরকার প্রতি বছর ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়ি বাড়ানোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাত্ প্রতি বছর ৩ শতাংশের বেশি বাড়ানো যায় না। ফলে সিঙ্গাপুরে মাত্র ৭ লাখ মোটর-গাড়ি আছে। "
ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়ি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর গণ পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছে। গত শতাব্দীর ৭০ দশকের প্রথম দিক থেকে সিঙ্গাপুরের সরকারী বিভাগ শহরের পরিবহণ পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। পরিবহণ নেটের নির্মাণকাজ দ্রুত করেছে।
গণ পরিবহণের নির্মাণ এবং পরিচালনা ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ স্থল পরিবহণ ব্যুরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। স্থল পরিবহণ ব্যুরোর কর্মকর্তা লিউ ঈ দে সংবাদদাতাকে গণ পরিবহন উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের কয়েকটি সফল অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন, "সিঙ্গাপুরে দুটি প্রধান পাবলিক পরিবহণ কোম্পানি আছে। আমরা তাদেরকে স্ব-পরিচালনার মর্যাদা দিয়েছি। কিন্তু পরিসেবার মান এবং টিকিট ক্ষেত্রে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করি। তাছাড়া জনবহুল জায়গায় অবশ্যই পাতাল রেল স্টেশন বা পাবলিক বাস স্টেশন আছে। পাবলিক বাস থেকে পাতাল রেলে অথবা পাতাল রেল থেকে পাবলিক বাসের জন্য দূরে যেতে হয় না। এভাবে জনসাধারণের জন্য সুবিধা সৃষ্টি করেছে। "
গণ পরিবহণ উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সিঙ্গাপুর বিকলাংগ এবং বৃদ্ধবৃদ্ধাদের চাহিদা মেটানোর চেষ্টাও করেছে। লিউ ঈ দে বলেছন, "প্রায় তিন, চার বছর সময় নিয়ে প্রত্যেক পাতাল রেল স্টেশনে লিফট বসানো হয়েছে। যাতে বৃদ্ধবৃদ্ধা আর যারা হুইলচেয়ারে বসেন , তারাও পাতাল রেলের সুবিধা ভোগ করতে পারেন। এরপর আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে পাবলিক বাসেও যাতে হুইলচেয়ার দিয়ে উঠানামা করা যায়।"
ডাঃ লি দে হো মনে করেন, যদিও সিঙ্গাপুরের পরিবহণ অবস্থা খুব ভালো। তবে পেশাগত দৃষ্টি থেকে দেখলে সিঙ্গাপুরের গণ পরিবহণ পরিসেবার আরো উন্নয়ন দরকার, বিশেষ করে পাবলিক বাস ব্যবস্থায়। তিনি জানিয়েছেন, গত তিন বছরে সিঙ্গাপুরের গণ পরিবহণ পরিষদ প্রতি বছর স্থানীয় গণ পরিবহণ পরিসেবার পর্যালোচনা করে। সর্বশেষ পর্যালোচনার ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, যদিও অধিকাংশ লোক সিঙ্গাপুরের গণ পরিবহণের পরিসেবার প্রতি সন্তুষ্ট। তবে সন্তোষজনকের মাত্রা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে লিউ ঈ দে বলেছেন, ভবিষ্যতে স্থল পরিবহণ ব্যুরো অব্যাহতভাবে পাতাল রেল ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করবে, আরো বেশি লোককে পাবলিক বাসের পরিবর্তে পাতাল রেলে যাতায়াত করার জন্য উত্সাহ দেবে।
|