v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-15 20:55:26    
মহিউদ্দিন তাহেরের স্মৃতির কথা(ছবি)

cri

 জনাব মহিউদ্দিন তাহের পরিবার নিয়ে নয় বছর পেইচিংএ কাটিয়েছেন। তিনি কার্যমেয়াদ শেষ করে জুলাই মাসে স্বদেশে ফিরে গেছেন। পেইচিং ত্যাগের আগে তিনি আমাদেরকে এক সাক্ষাত্কার দিয়েছেন। সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন আমাদের নবীন কর্মী ছাও ইয়াং হুয়া।

 তাহেরঃ প্রত্যেক কিছুই একটা সীমা আছে। দিন বদলে যায়। সময় বদলে যায়। আমার চীনা জীবন, নয় বছর যে কিভাবে পার হয় গেছে, আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। বলা হয় সুখের সময় খুব দ্রুত চলে যায়। দুঃখের সময় কাটতে চায় না। আমার চীনা জীবন খুব সুখের। অনেক ভালবাসা পেয়েছি, বন্ধু পেয়েছি, সম্মান পেয়েছি , সেটা আমার সহকর্মীদের জন্যই। ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ বিকালে সাড়ে ৩টায় পেইচিংয়ের মাটিতে পা পড়ে। তখন খুব শীত ছিল। বিশেষ করে উষ্ণমন্ডলীয় বা আধা উষ্ণমন্ডলীয় দেশের মানুষ হিসেবে খুব শীত লাগছিল। বাংলা বিভাগের উপ-পরিচালক ও সি আর আইয়ের একজন কর্মী রাজধানী বিমান বন্দরে আমাকে অভ্যর্থনা জানান। তবে এদু'জন আমার প্রথম দেখা চীনা নন। এর আগে ঢাকায় চীনা দূতাবাসে ইয়া বাও লাই সাহেবের  সঙ্গে দেখা হয়েছে। তিনি তখন দূতাবাসের সাংস্কৃতিক বিভাগের প্রথম সচিব ছিলেন। বাংলা বিভাগের বর্তমান প্রবীণ সহকর্মী, তখন দূতাবাসের রাজনৈতিক বিভাগের প্রথম সচিব শি চিং উ সাহেব, তিনি এক সময় বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। অবসর নেয়ার আগে তিনি সি আর আই এর প্রথম এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক ছিলেন। অবসর নেয়ার পরও তিনি বাংলা বিভাগের টানে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। তারা দু'জন তখন চীনা দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। তারাই আমার প্রথম দেখা চীনা। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বেশ কয়েক জনের মধ্যে থেকে আমাকে চীনে আসার সুপারিশ করেছেন। বাংলা বিভাগের তত্কালীন পরিচালক মাদাম চুং এবং আমার অনেক সহকর্মীরা আমার ছবি দেখে ও টুকটাক কাজ দেখে আমাকে পছন্দ করেছে। এজন্য আজকে আমি এখানে কাজ করছি। এর আগে আমি ঢাকার দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট নামক একটি পত্রিকার অর্থনৈতিক বিভাগের প্রধান অর্থাত্ অর্থনীতি সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছি। যাই হোক এটা অতীতের কথা।

 চীন সম্পর্কে ছোট বেলায় অল্প কিছু জেনেছি। তখন থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল চীন সফরে আসা। যদিও কাউকে বলি নি। ইচ্ছা ছিল এখানে আসব, দেখব, ঘুরব, অর্থনৈতিক , সাংস্কৃতিক অবস্থা জানব। তো একটা চাকরি হয় যাওয়ার সুবাদে খুব উচ্ছাস নিয়ে আমি আমার স্ত্রী ও তখন একমাত্র ছেলে উত্সকে নিয়ে ২৬ মার্চ রাতের বেলা , সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ছিল। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স যোগে পেইচিংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ২৭ মার্চ বিকালে এখানে এসে পৌছলাম। পু সাহেব ও চিয়াং সাহেবের সঙ্গে দেখা। মৈত্রী হোটেলে উঠলাম। ওখানে তখন সব বিদেশী বিশেষজ্ঞরা থাকতেন। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ম্যাগডোনাল্ড থেকে খাবার নিয়ে আসা হয় । খুব মজা  করে খেলাম। তখনও আমি জানি না চাইনিজরা ৫টা  সাড়ে ৫টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নেয়। রাত ৯টার দিকে বাঙালির পেট  খুব চোচো করে উঠে। তখন পু সাহেব কিংবা চিয়াং সাহেব তো আর নেই। যার যার বাড়ী চলে গেছেন। তখন হোটেলে খাবারের অর্ডার দিলাম সামান্য। সেদিন আর বিল নেয় নি। পরদিন বিল নিতে আসল ১১৪ ইউয়ান। তখন ভাবছিলাম এত খরচ। তখন আমার বেতন ছিল মাত্র ৩১০০ ইউয়ান। এখন তো বেতন বেড়েছে। পরের দিন সকালে মাদাম চুং হোটেলে আসলেন এবং নিজের বাড়ী থেকে কিছু তৈজষপত্র , হাড়ি, পেয়ালা নিয়ে এসেছেন। তারপর আমাকে নিয়ে  পাশে একটা সুপার মার্কেটে আছে, সেখানে নিয়ে গেলেন এবং প্রয়োজনীয় কিছু জিনিষ কিনে দিলেন। ২৭ মার্চ চিয়াং সাহেব আমাকে চার দিনের বেতন দিয়ে দিলেন। পরে জানলাম এখানে মাসের বেতন প্রথম সপ্তাহে দিয়ে দেয়া হয়। আর আমাদের দেশে দেয়া হয় মাসের শেষ হলে।

 চিয়াং সাহেবের কাছে প্রথম দিনই শিখলাম ১,২,৩,৪ কিভাবে বলতে হয়। তাহলে ভাষা শেখা সহজ হবে। যদিও আমাকে অনেকেই বলেছে চীনা ভাষা শেখা খুব কঠিন। এমনকি চীনের প্রাচীর পার হওয়ার চেয়েও। কিন্তু আমার কাছে মনে হল খুব সহজ। ই আর সান -- এই যে এক থেকে দশ পর্যন্ত। এ থেকে তারপর দশ এক, দশ দুই, তারপর দুই দশ, দুই দশ এক ইত্যাদি। খুব সহজ গননা। মনে পড়ে আমাদের গ্রামের বুড়োবুড়িরা এভাবে গুনতেন। দুই কুড়ি এক, দুই কুড়ি দুই ইত্যাদি। খুব সহজভাবে। আরেটা হচ্ছে ঠান্ডা এর কথা আগেই বলছিলাম। রাজধানী বিমান বন্দর থেকে সি আর আইয়ের গাড়ীতে তখন হোটেলে আসছিলাম তখন দেখছিলাম গাছে কোন পাতা নাই, যেন মরে গেছে। খুব খারাপ লাগল। চিয়াং সাহেবেকে বিজ্ঞাসা করলাম গাছগুলো মরা কিনা। তিনি বললেন, না, আসলে শীতের সময় গাছ পাতা গজাতে পারে না। খারাপ লাগল। এত বড় শহর কোন সবুজ নেই। কিন্তু কয়েকদিন পরেই আমার চশক ভাঙল। ৮/১০ দিন পরে দেখলাম পাতা গজাতে শুরু করেছে। ক্রমান্বয়ে  পুরো শহরে সবুজে ভরে গেল। চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। আর পাতা গজানোর হার এত দ্রুত। আমি আবার অবাক হলাম। তারপর অনেক দিন চীন থাকলাম। অনেক পরিবর্তন দেখলাম। মনে হয়, চীনাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আমি স্বাক্ষী হলাম। হংকং, ম্যাকাওয়ের প্রত্যাবর্তন , ২০০৮ সালে যে অলিম্পিক গেমস হবে সেই সুযোগ পাওয়ার ঐতিহাসিক ঘটনা। চীনাদের দীর্ঘদিনের শখ ছিল অলিম্পিক আয়োজনের। তারপর ২০১০ সালে সাংহাইতে যে বিশ্ব মেলা সেই আয়োজনের সুযোগ পাওয়া ইত্যাদি। আমি বসে বসে এসব দেখলাম।

 সি আর আইতে কাজ করতে এসে কিভাবে যে সময়টা চলে গেল টেরই পাই নি। আমার কাছে খুব তাত্ক্ষনিক মনে হয়েছে। আমার ন'বছরের অভিজ্ঞতা একটি ছোট  অনুষ্ঠানে বলা সম্ভব না। বলা হয়ে থাকে, কেউ কোন এলাকা একদিন ঘুরলে একটি বই লিখতে পারে। এক সপ্তাহ ঘুরলে একটি প্রবন্ধ। এক মাস ঘুরলে এক পৃষ্ট আর বেশি ঘুরলে কিছুই লিখতে পারেন না। কারণ তখন এত বেশি জমে যায়, যে কোনটা রেখে কোনটা লিখবে তা ঠিক থাকে না। আমার অবস্থাও অনেকটা  তাই।

 কোনটা রেখে যে কোনটা বলি। যা মনে আসছে তাই বলছি। আমার শেষ দিনগুলোতে আপনারা  এই সাক্ষাত্কার নিচ্ছেন। এজন্য সি আর আইকে ধন্যবাদ।