v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-15 14:38:56    
তিব্বতী মেয়ে ও বাস্কেটবল তারকা

cri
    চোমা এক তিব্বতী মেয়ে, তিনি তার গ্রামের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রী । মা তাকে মানুষ করার জন্যে অনেক পরিশ্রম করেছেন । বোড় বোন তার জন্যে পারিবারিক সুখী জীবন পরিত্যাগ করেছেন । লিউ ইয়ুতোং একজন বাস্কেটবল-তারকা । বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র ছাত্রদের জন্যে তিনি প্রথমবারের মতো তিব্বতের  ভূমিতে পদার্পন করে সাদা মেঘের মধ্যে বসবাসকারী এক পরিবারে প্রবেশ করেছেন ।

    যাতে আরও বেশি ছেলেমেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে পারে তার জন্যে চীনা বাস্কেটবল সমিতি সহ বিভিন্ন ইউনিট "স্বপ্ন বাস্তাবায়ন করার কার্যক্রম---"ভালবাসার তিব্বতে আগমন" নামে এক তত্পরতার আয়োজন করেছে । দলের মধ্যে সকলের পরিচিত একজন আছেন, তিনি হলেন ১ আগস্ট পুরুষ বাস্কেটবল দলের নেতা , কোচ এবং "যুদ্ধের দেবতা" নামে বিখ্যাত লিউ ইয়ুতোং ।

    ২০ জুলাই সন্ধ্যায় চীনা বাস্কেটবল সমিতি, চীনা কিশোরকিশোরী উন্নয়ন তহবিল সমিতি প্রভৃতি ইউনিয়নকে নিয়ে গঠিত " স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার কার্যক্রম---"ভালবাসার তিব্বতে আগমন" নামক দলের সদস্যরা ছিংহাই-তিব্বত রেলপথের তিব্বত-অভিমুখী রেলগাড়িতে উঠেছেন । ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে বিশ্বে সবচেয়ে উচ্চ রেলপথ । রেলপথিটির থাংকুলা পাহাড় অংশের উচ্চতা হল ৫০৭২ মিটার । রেলপথটির আশেপাশে তাপমাত্রা নিচু এবং অক্সিজেন কম । দ্বিতীয় দিন রেলগাড়ি ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে প্রবেশ করলে দলের কয়েকজন সদস্যের মালভূমির প্রতিক্রিয়া দেখা হয় ।

    "যুদ্ধের দেবতা" নামে পরিচিত লিউ ইয়ুতোংয়ের স্বাস্থ্য ভাল হলেও মালভূমির হাল্কা অক্সিজেন সহ্য করতে পারেন না । লিউ ইয়ুতোং " স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার কার্যক্রম" তত্পরতায় অংশ নেয়ার জন্যে তিব্বত ভ্রমণ করছেন কথাটা শুনে রেলগাড়ির যাত্রীরা সচেতনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের জন্যে চাঁদা দিয়েছেন ।

    যখন রেলগাড়ি দ্রুতগতিতে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে যাচ্ছিল তখন লিনচি জেলার পাই থানার ইয়োংচিউ গ্রামের চোমা ও তার পরিবার সম্মানিত অতিথিরা তাদের গ্রামে আসার খবর পেয়ে অতিথিদের স্বাগত জানাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন । যুগযুগ ধরে চোমা তাদের গ্রামের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রী । তিনি তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বেশি না হলেও পরিবার তা দিতে সক্ষম নয় । তিব্বতী স্টাইলের সুন্দর বাড়িতে থাকা চোমার পরিবার মাত্র ৩-৪ হাজার ইউয়ান স্কুল-ফি দিতে অক্ষম বলে কেউই মনে করে না । চোমা জানান , বাবা জীবিত থাকাকালে এই বাড়ি বানিয়েছেন । তখন তাদের অবস্থা ভাল ছিল । কিন্তু বাবা মারা যাবার পর গোটা পরিবারের ভারি বোঝা মার উপর পড়ে । শুধু মা নন,বড় বোন ও ৮০ বছর বয়সী নানীও সকাল থেকে রাত পর্যন্তপরিশ্রম করতে থাকেন ।

    এই দিন খুব সকালে চোমার মা ও বড়বোন পাহাড়ে ঘাস কাটতে যান । চোমা বাড়িতে ভাগনে পাইমাচাসিকে দেখাশোনা করেন এবং নানীর পক্ষে ভেড়া পালন করেন । চোমার বাড়িতে ৪টি গরু আর ২০টি ভেড়া পোষা হয় । কিন্তু গরু ও ভেড়া পরিবারের জন্যে কিছুই আয় আনতে পারে না । গরু জমি চাষ করে আর ভেড়ার লোম দিয়ে পরিবারের সকলের কাপড় বানান হয় । সাধারণ সময়ে গরু ও ভেড়া পোষার কাজ ৮০ বছর বয়সী নানী দেখেন । ছুটির সময় চোমা এই কাজ করেন যাতে বুড়ো নানী বিশ্রাম নিতে পারেন ।

    ভাগনে পাইমাচাসির বয়স মাত্র ৮ মাস । কৃষি কাজ বেশি থাকা কারণে বড় বোন প্রত্যেক দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জমিতে পরিশ্রম করতে থাকেন । তাই তিনি সময় করে ভাগনেকে দেখাশোনা করতে পারেন না । চোমা বলেন, বাবা মারার যাবার পর বাড়ির আয় দিন দিন কমে যায় । তখন বড় বোন নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে পড়ছিলেন, তার লেখাপড়া ভাল ছিল । কিন্তু মার বোঝা কমানোর জন্যে তিনি স্বেচ্ছায় স্কুলচ্যুত হন । দু বছর আগে বড় বোনের বিয়ে হল । মার সঙ্গে সংসার চালাবার জন্যে তিনি শ্বশুড় বাড়িতে যাননি ।

    চোমা বলেন,নিজের বাড়িতে শ্রমশক্তি না থাকার কারণে আজ দুজন প্রতিবেশী তাদের সাহায্য করতে এসেছেন । তাদেরকে বেতন দিতে হয় না । শুধু তাদেরকে দুপুরের খাবার খেতে দিতে হয় । নিজ বাড়ির কাজ শেষ হওয়ার পর মা ও বড় বোন তাদেরকে সাহায্য করতে যাবেন । স্থানীয় লোকের কথায় এটা"শ্রমশক্তি বিনিময় করা" ।

    চোমা বলেন,মা শিক্ষিত নন বলে খুব কষ্টে জীবনযাপন করতেন । যাতে চোমা ভিন্ন জীবনযাপন করতে পারবেন তার জন্যে মা তাকে শিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন এবং অনেক ঋণে ঋণী হয়েছেন । চোমার স্কুল ফি এখনো জমা হয়নি । কিন্তু মা তাকে সান্ত্বনা দিযে বলতেন,এই ছোটোখাটো ব্যাপারে তুমি চিন্তা করো না,তুমি ভালভাবে পড়াশোনা করো ।

    দীর্ঘকাল ধরে শারিরীক পরিশ্রম এবং মানসিকতার ভারী বোঝার কারণে মাত্র ৪০ বছর বয়সী মা তার সমবয়সী নারীর চাইতে অনেক বুড়ো দেখতে । মার স্বাস্থ্য ভাল না । বাড়িতে পুরুষ নেই বলে বড় বোন বিয়ের পর স্বামী নিজের বাড়িতে থাকবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। দুলাভাইও রাজী হয়েছেন । কিন্তু বিয়ের পর দুলাভাই ও তার পরিবার নিজের কথা অস্বীকার করেছেন এবং বড় বোনকে শ্বশুড় বাড়িতে থাকার দাবী জানান । দুজনের কেউই পরস্পরকে রাজী করাতে পারেন নি । এ জন্যে বড় বোনের কাছে চোমা নিজেকে ঋণী বলে মনে করতেন ।

    ২২ জুলাই রাত ৯টায় ৪৮ ঘন্টার পথ অতিক্রম করে রেলগাড়ি লিউ ইয়ুতোং ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে লাসা রেলস্টেশনে পৌঁচেছে । লাসা থেকে চোমার বাড়িতে এসে চোমা ও তার পরিবারের কাহিনী শুনে লিউ ইয়ুতোং খুব মুগ্ধ হন । তিনি চোমাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া সম্পন্ন করতে সাহায্য দেয়ার কথা দিয়েছেন।

    এবারের কার্যক্রমেচীনা বাস্কেটবল সমিতি তিব্বতের নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের জন্যে ৬ লাখ ইউয়ানের চাঁদা দিয়েছে এবং ১০০বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রছাত্রীকে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে আর্থিক সাহায্য করবে । লিউ ইয়ুতোং ৪জন তিব্বতী বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রছাত্রীকে আর্থিক সাহায্য করবেন।