v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-14 21:02:49    
পিং ইয়াও প্রাচীন নগর (ছবি)

cri

 পিন ইয়াও নগর

 পিন ইয়াও হচ্ছে এ পর্যন্ত সংরক্ষিত সবচেয়ে পুর্ণাঙ্গ মিন আর ছিন রাজবংশের প্রাচীন জেলা শহর এবং চীনের হানজাতি অধ্যুষিত হুয়াংহো নদীর মধ্য ও নিম্ন অববাহিকার প্রাচীন জেলা শহরের আদর্শ প্রতিনিধিত্বকারী। এই শহরের প্রাচীর, রাস্তাঘাট, গণবসতি, দোকানপাট, মন্দির ইত্যাদি স্থাপত্যকর্ম এপর্যন্ত মোটামুটি ভালোভাবে সংরক্ষিত আছে। এর স্থাপত্য কাঠামো ও চেহারার বৈশিষ্ট মোটামুটিভাবে অপরিবর্তিত রয়েছে। পিন ইয়াও হচ্ছে চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, যুদ্ধ, শিল্পকলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক গবেষণার জীবন্ত নমুনা। এটি " বিশ্বের পুরাকীর্তির তালিকা" ভুক্ত হয়েছে। চীনের বহু টেলিভিশন নাটক পিংইয়াও প্রাচীন নগরে চিত্রায়ন হয়েছে। নিজেই গাড়ি চালানোর পর্যটকদের প্রথম পছন্দের স্থানেও এটি পরিণত হয়েছে।

 পিংইয়াও প্রাচীন নগর শানশি প্রদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। রাজধানী তাই ইউয়ান থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে। পিংইয়াও হচ্ছে চীনে সংরক্ষিত সবচেয়ে পুর্ণাঙ্গ প্রাচীন নগর। এই নগরটি ২৭০০ বছরের আগে নির্মিত হয়। মিং ও ছিং রাজাদের আসলে এটি সবচেয়ে সমৃদ্ধ নগর ছিল। এই নগরীর অনেক স্থাপত্য মিং ও ছিং রাজাদের আমলে নির্মিত হয়।

 পিং ইয়াও প্রাচীন নগরটি সার্বিকভাবে জানতে হলে সেখানকার প্রাচীন প্রাচীরে উঠে দেখলে সবচেয়ে ভালো। চার দিকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরাও করা প্রাচীন নগরের আকার একটি কচ্ছপের মতো। প্রাচীন নগরের ভিতরে গণ বসতি ও দোকানগুলো যেন কচ্ছপের-খোলায় পরিণত হয়েছে। নগরের দক্ষিণ দ্বার হচ্ছে কচ্ছপের মাথা। দরজার বাইরে দুটি ঝরনা কচ্ছপের দু'চোখের প্রতীক। উত্তর দ্বার হচ্ছে কচ্ছপের লেজ এবং গোটা নগরের নিম্নত্তম স্থান। পুরো শহরের পানি এখান থেকে পার হয়। এমন আকার থেকে বুঝা যায় যে, পিং ইয়াওয়ের পূর্বপুরুষরা কচ্ছপের উপাসনা করতেন। তারা কচ্ছপের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পিংইয়াও নগরকে প্রস্তরের স্তম্ভের মতো শক্ত হয়ে নিরাপদে থাকার কামনা করতেন।

 পিং ইয়াও নগরে চারটি প্রধান রাস্তা , আটটি ছোট রাস্তা এবং ৭২টি গলি আছে। এগুলো সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো রয়েছে। নগরের প্রাচীন গণ বসতি সবই নীল রঙের ইউ আর ধূসর বর্ণের টালি দিয়ে তৈরি চারকোনা বাড়ি । পিং ইয়াও নগরে সংরক্ষিত প্রাচীন চারকোনা বাড়ি প্রায় ৪০০০টি, এর মধ্যে ৪০০ এরও বেশি বসতি অপেক্ষাকৃত ভালোভাবে সংরক্ষিত। এর মাধ্যমে স্পস্টভাবে মিং ও ছিং রাজাদের আমলের শহরের সমৃদ্ধ দৃশ্য প্রতিফলিত হয়। এখন এসব বসতি প্রায় হোটেলে পরিণত হয়েছে।

 পিং ইয়াও এর হোটেল বললে প্রথমে সেখানকার "টিয়ান ইউয়ান কুই" নামে হোটেলের কথা বলতে হয়। এই হোটেল প্রাচীন নগরের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র কয়েক শ' মিটার দূরে। পিং ইয়াও নগরের হোটেলগুলোর মধ্যে এটাকে একটি প্রতিনিধিত্বকারী হোটেল বলা যায়। "টিয়ান ইউয়ান কুই" হোটেল আগে একজন ব্যবসায়ীর বাড়ি ছিল। এটি ২ শতাধিক বছর আগে নির্মিত হয়েছে। তখন স্থানীয় অর্থনীতির স্বর্ণ যুগ ছিলো। পিং ইয়াও নগরে অনেক ব্যবসায়ী এক বা একাঠিক এই ধরনের বাড়িতে বসবাস অধিকার করতেন।

 "টিয়ান ইউয়ান কুই" হোটেল প্রবেশ করলে গভীর প্রাচীন সৌরভ পাওয়া যায়। ওয়াং দা নামে এক পর্যটক এখানে বেশ কিছু দিন ছিলেন। তিনি বলেছেন, "এখানে থাকতে একটু অন্য রকম লাগে। রুমে সাজানো আসবাবপত্র সবই মিং ও ছিং রাজাদের আমলের। দেওয়ালে চীনের ঐতিহ্যিক ছবি লাগানো আছে। এর সঙ্গে আধুনিক জীবনের রঙিন টেলিভিশন সেট, এয়ার-কন্ডিশনিং সবই আছে। পায়খানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল সেখানকার বিছানা সব মাটি দিয়ে তৈরী, এর চীনা নাম "থু খাং"। শীতকালে তা গরম করা যায়। দেখুন, আমার রুমে এই বিছানায় পাঁচ ছয় জন থাকতে পারে। "

 "টিয়ান ইউয়ান কুই " হোটেলের কাছে আরেকটি হোটেল আছে, এর নাম "ই দে"। এই হোটেলটিও বৈশিষ্টসম্পন্ন।

ই দে হোটেল

    "ই দে" আর "টিয়ান ইউয়ান কুই" একই সময় স্থাপিত হয়েছে। "ই দে" হচ্ছে তত্কালীণ ব্যাঙ্কের মালিক হো ওয়াং বিনের বসতবাড়ি। এই বসতি মোট ছয়টি উঠোন নিয়ে গঠিত। প্রত্যেক উঠোনে অতিথি ঘর আছে এবং চমত্কার আসবাবপত্র সাজানো আছে। আসবাবপত্রে খোদোই কাজ এবং রঙিন ছবি আছে, তা দেখে বুঝা যায়, এর পরিবারের সমৃদ্ধি ছিল। পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শুয় লিন জেই পিং ইয়াও নগরে একাধিক বার এসেছেন। প্রত্যেক বার তিনি "ই দে" হোটেলে থাকেন। তিনি বলেছেন, "ই দে" হোটেলের সাংস্কৃতিক অর্থ তাঁকে আকর্ষণ করে। তিনি বলেছেন, "দেখুন, এখানে প্রাচীনকালের জিনিস সবই ভালোভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। যেমন উঠোনের গাছপালা, ঘোড়ায় উঠানোর পাথর ইত্যাদি। বাইরে ঘুরে বেড়ানোর পর এখানে ফিরে আসা একটি লোক-শিল্প যাদুঘরে প্রবেশের মতো। "

 ইয়া মে কুয়াও শে

     "ই দে" হোটেল ত্যাগ করার পর আমরা পিং ইয়াও যুব হোস্টেলে যাবো। প্রাচীনকালে এটি ছিল সরকারী কর্মকর্তাদের অভ্যর্ন্থনা দেয়া এবং থাকার জায়গা। এর চীনা নাম "ইয়া মে কুয়াও শে"। এই হোটেল পিং ইয়াও নগরের কেন্দ্রে অবস্থিত। এর পাশে রয়েছে জেলা সরকারী যাদুঘর। এখানের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিশেষ বার। সাধারণ বারের মতো প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র এখানে পাওয়া যায়। তা ছাড়া অতিথিদের জন্য এখানে অনেক বই এবং চলচ্চিত্রের ডিস্ক সরবরাহ করা হয়। অতিথি আসলে নিজের বাসায় থাকার মতো এই সব ইচ্ছা মতো নিতে পারে। এখানের কর্মী মিস. লো ইয়া পিং জানিয়েছেন, "এই ঘরটি হচ্ছে আগেকার ভোজ হল। এখানে কেবল উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকতে পারতেন। আয়তনের দিক থেকে তত্কালীণ অন্যান্য বাড়িঘরের তুলনায় এ হোটেল বেশ বড়। "

 বর্তমানে বাণিজ্যিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অনেক সাংস্কৃতিক প্রাচীন নগর নষ্ট হয়েছে। কিন্তু পিং ইয়াও সবসময়েই ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিল এবং পর্যটকদের কাছে অসাধারণ সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্ণাঙ্গ দৃশ্য প্রদর্শন করেছে। এটা হচ্ছে পিং ইয়াও নগরের এবং মানবজাতির সৌভাগ্য।