v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-13 17:05:43    
চীনের একটি গ্রামের সংগে সম্পর্কিত জাতি সংঘ কর্মকর্তা

cri
    গত কয়েক দিন মধ্য চীনের হোনান প্রদেশের তা ছেং ছুন নামক একটি ছোট গ্রামে সকলেই উত্সাহের সংগে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা দুজন বৃদ্ধের কথা আলোচনা করছেন । তারা হলেন জাতি সংঘের প্রবীণ কর্মকর্তা- চীনের তাইওয়ানবাসী হুয়া চুন সুং ও হংকংবাসী লিউ তা চেং । তারা এখন এই ছোট তা ছেং ছুন গ্রামের অনারারী কর্তা হয়েছেন । তাহলে এত দূরে থাকা জাতি সংঘের এই দুজন বৃদ্ধ কেমন করে চীনের একটি সাধারণ ছোট গ্রামের সংগে মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন ? আজকের অনুষ্ঠানে এই সম্পর্কের কিছু বলছি আমি শি চিং উ ।

    গত জুন মাসের একদিন তা ছেং ছুন গ্রামের সর্বত্রই সরিষার সোনালী রংয়ের ফুল ফুটছে । সারা গ্রামে উত্সবের এক আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করছিল । গ্রামের প্রবেশ পথে ঢাক ঢোলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল , গ্রামের নৃত্য দল সিংহের নাচ নাচছিল এবং গ্রামবাসীরা রাস্তার দু পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন । তারা একের পর এক চুলপাকা দুজন বৃদ্ধের সংগে কথাবার্তা বলছিলেন । এই দুজন বৃদ্ধ লম্বা নন , তবে বেশ নম্র । তারাই হলেন জাতি সংঘে কর্মরত হুয়া চুন সুং ও লিউ তা চেং । এবার তারা বিশেষভাবে নিউইয়র্ক থেকে তা ছেং ছুন গ্রামে বেড়াতে এসেছেন ।

    তা ছেং ছুন গ্রামের সংগে এই দুজন বৃদ্ধের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করলে তাদের সহকর্মী ছাও কোও চুংয়ের কথা বলতে হবে । ৩৭ বছর বয়সের ছাও কোও চুং তা ছেং ছুন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি জাতি সংঘে ৮ বছর ধরে কাজ করেছেন । হুয়া চুন সুং ও লিউ তা চেং ছাওয়ের গুণাবলীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর সংগে গভীর মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন ।

    দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করলেও ছাও কোও চুং কোনো দিনই তার জন্মভূমির গ্রামবাসীদের ভুলে যান নি । তা ছেং ছুন গ্রামের গঠনকাজে সমর্থন দেয়ার জন্যে তিনি প্রায়শই নিজের জমা রাখা টাকা গ্রামে পাঠান । এই দুজন বৃদ্ধও গরীব পরিবারের ছেলে ছিলেন বলে এই খবর পেয়ে তারা এই সরলমনা তরুণের আচরণে মুগ্ধ হন । তারাও নিজেদের শক্তি দিয়ে তাঁকে সাহায্য করতে চান । হুয়া চুন সুং বলেছেন ,

    আমি ও লিউ তা চেংও দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছি । আমরা সবসময় চীনের অনুন্নত গ্রামাঞ্চলগুলোর জন্যে কিছু অবদান রাখতে চাই । ছাও কোও চুং আমাদের এই ইচ্ছা জানার পর তার গ্রামের অবস্থা সম্পর্কে আমাদের জানালেন । আমাদের মনে হয় , এটা একটা ভালো সুযোগ ।

    হোনান প্রদেশের চিয়াও চোও শহরের দূরবর্তী একটি গ্রাম হিসেবে তা ছাং ছুন একটি পরিচিত গরীব গ্রাম । গত কয়েক বছরে আশেপাশের গ্রামগুলোতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে । কিন্তু তা ছেং ছুন গ্রাম এখনো পিছিয়ে রয়েছে । গ্রামে একটি ভালো রাস্তাও নেই এবং প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষা সরঞ্জামও খুবই পশ্চাতপদ ।

    তা ছেং ছুন গ্রামের অবস্থা শোনার পর এই গ্রামে রাস্তা নির্মাণ ও স্কুলের বাড়িঘর উন্নত করার জন্যে এই দুজন বৃদ্ধ পরামর্শ করে ১০ হাজার মার্কিন ডলার দানের সিদ্ধান্ত নিলেন । গত মার্চ মাসের শেষ দিকে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তা ছেং ছুন গ্রামের কাছে ২০ হাজার মার্কিন ডলার পাঠালেন । তা ছেং ছুন গ্রাম এর কিছু টাকা দিয়ে কম্পিউটার কিনেছে , প্রাথমিক স্কুলের জন্যে উচ্চমানসম্পন্ন কম্পিউটার কক্ষ নির্মাণ করেছে এবং বাকী টাকা দিয়ে গ্রামীন রাস্তা নির্মাণ করেছে ।

    সুদূর নিইউয়র্কে অবস্থানরত দুজন বৃদ্ধের ভালোবাসা দেখে গ্রামবাসীরা অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছেন । চোও ছুয়ান চাং বলেছেন ,

    আমি অন্তরের অন্তস্থল থেকে খুশী । এমন কি আনন্দে আমি কেঁদেছি । কারণ আমাদের গ্রামের ইতিহাসে এমন ঘটনা কোনো দিন ঘটে নি। আমাদের গ্রাম গরীব । আমাদের সাহায্য করার জন্যে এই দুজন প্রবাসী চীনা এগিয়ে এসেছেন । আমি সত্যিই আনন্দিত ।

    তা ছেং ছুন গ্রামের কর্তা লি কুয়াং লে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , এই দুজন বৃদ্ধ শুধু আমাদেরকে আর্থিক সাহায্য দেন নি , বরং আমাদের গ্রামবাসীদের মধ্যে মানসিক পরিবর্তনও এনে দিয়েছে । অতীতে গ্রামবাসীরা কেবল নিজেরা নিজেদের ব্যাপার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন । কেউই গণ কল্যানকর ব্যাপারে শরীক হতেন না । দুজন বৃদ্ধার আচরণের অনুপ্রেরণায় গ্রামবাসীদের আচরণেরও পরিবর্তন ঘটেছে । এখন তারা নিজেদের কাজ করার পাশাপাশি সক্রিয়ভাবে স্বেচ্ছামূলক কাজে যোগ দিচ্ছেন । রাস্তা নির্মাণের সময়ে নারী , পুরুষ , বৃদ্ধ ও শিশু নির্বিশেষে সবাই কাজে অংশ নিচ্ছেন । লি কুয়াং লে মনে করে যে, সেই দুজন বৃদ্ধই এসব পরিবর্তন এনে দিয়েছেন । তিনি বলেছেন ,

    এবার তারা এসে শুধু আমাদের টাকার সমস্যা সমাধান করেছেন , তাই নয় , তার চেয়ে গুরুত্বপূণ বিষয় হচ্ছে এই যে , তাদের আচরণের মধ্যে চীনা জাতির শ্রেষ্ঠ চরিত্র ও মাতৃভূমি ও জনগণকে ভালোবাসার পবিত্র ভাবমানস প্রতিফলিত হয়েছে । এটাই আমাদের জন্যে এক অমূল্য সম্পদ ।

    গ্রামে এই দুজন বৃদ্ধের প্রভাব দেখে লি কুয়াং লে ভাবতে লাগলেন , তাদেরকে এই গ্রামের অনারারী কর্তা করলে কত ভালো হবে । তিনি গ্রামবাসীদের প্রতিনিধিদের জড় করে একটি সভা করলেন । সকলেই তার এই প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছেন। অল্প দিনের মধ্যে হুয়া চুন সুং ও লিউ তা চেং তা ছেং ছুন গ্রামের অনারারী কর্তার নিয়োগপত্র পেয়েছেন ।

    দুজন বৃদ্ধ গ্রাসবাসীদের সাদর আমন্ত্রণে বিমুগ্ধ হন । তারা তা ছেং ছুন গ্রামে একবার বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন । সেখানে গেলে তারা গ্রামটি দেখতে পারবেন এবং গ্রামবাসীদের সংগে গল্প করতে পারবেন । লিউ তা চেং বলেছেন ,

    আমাদেরও অনেক লেখাপড়ার দরকার হয় । আশা করি , আপামর জনসাধারণের সংগে মেলামেশা করা এবং তাদের মনের কথা শোনার সুযোগ আমাদের হবে । তাদের কি দরকার ও কি অসুবিধা আছে । দেশের বাইরে থেকে আমরা তাদের জন্যে কি কি করতে পারি । আমরা আশা করি যে, কোনো কোনো কার্যক্রমে যোগ দেয়ার মাধ্যমে চীনের গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরো ভালোভাবে জানতে পারবো ।

    দুজন অনারারী কর্তাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্যে তা ছেং ছুন গ্রাম পরামর্শ করে স্থির করেছে যে , গ্রামে তাদের থাকার জন্যে বাড়ি তৈরি করবে । তবে তারা এই দুটো জমিতে গ্রণ্থাগার ও বৃদ্ধদের শরীরচর্চা কেন্দ্র নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন । তারা বলেছেন , যেহেতু তারা এই গ্রামের অনারারী কর্তা হয়েছেন , সেহেতু গ্রামবাসীদের কল্যাণের জন্যে কাজ করা উচিত ।