v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-12 13:35:14    
তুং জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে বর্ধমান পর্যটন শিল্প

cri

    দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুই চৌ প্রদেশের চাও সিং অঞ্চল চীনের সংখ্যালঘু জাতি তুং জাতির অন্যতম অধ্যুষিত অঞ্চল । দূর থেকে তাকালে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কৃষি জমি সারিতে সারিতে ছড়িয়ে আছে । কাঠ দিয়ে তৈরী দু'তলা বিশিষ্ট তুং জাতির অজস্র বাড়িঘর কুয়াশায় অস্পষ্টভাবে দেখা যায় । আজ এই অনুষ্ঠানে চাও সিং অঞ্চলের তুং জাতির গ্রাম সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…

    চাও সিং গ্রামের বাইরে সংখ্যালঘু জাতির পোষাক পরা তুং জাতির এক দল তরুণ-তরুণী অতিথিদের আসার জন্য অপেক্ষা করছেন । তরুণরা এক দিকে লু সেন নামে বাদ্যযন্ত্র বাজালেন , অন্য দিকে নাচ করলেন । পরিবেশ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ । মেয়েরা অতিথিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মদ খাওয়ার গান গাইলেন । তারা অতিথিদের তুং জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন চালের মদ খেতে দিলেন । তুং জাতির রীতি-নীতি অনুযায়ী , গ্রামে প্রবেশ করার জন্য অতিথিদের তুং জাতির লোকদের উপহার মদ খেতে হয় । সুতরাং সংবাদদাতাও এই নিয়ম অনুসারে চালের মদ নিঃশেষে খেয়ে ফেললেন ।

    সংবাদদাতা তুং জাতির চুং চেই গ্রামে প্রবেশ করলেন । তার চোখে পড়ল তুং জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটির পর একটি দু'তলা বাড়িঘর নদীর ধারে ছড়িয়ে আছে । বিভিন্ন বাড়িঘরের মধ্যে পুকুর আছে , কৃষি ক্ষেতে ধান আর শাক সবজি চাষ করা হচ্ছে । নদীর ধারে নারীরা কাপড় চোপড় ধুচ্ছেন । গ্রামবাসীদের বাসা থেকে তাঁত আর রুপার অলংকার বানাবার শব্দ শোনা যাচ্ছে । মনে হয় একটি নিখুঁত গ্রাম্য সংগীত বাজানো হচ্ছে । চুং চেই ছাড়া তুং জাতির আরো ৪টি গ্রাম আছে ।

    চুং চেই গ্রামের কেন্দ্রস্থলের মহাচত্বর থেকে একটির পর একটি সংগীতের সুর শোনা যাচ্ছে । তুং জাতির গ্রামে সাধাণতঃ ১ শো থেকে ২ শো কৃষি পরিবার আছে । প্রতিটি তুং গ্রামে একটি ছোট মহাচত্বর নির্মাণ করা হয় । মহাচত্বরের এক পাশে একটি উঁচু ঢোল দালান আর অন্য পাশে একটি মঞ্চ আছে । যখন উত্সব পালন করা হয় , তখন গ্রামের মহাচত্বরে গ্রামবাসীদের জনসভা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় । এই মহাচত্বরে তরুণ-তরুণীদের পরিচয় ও প্রেম করার জন্যও সুযোগ সুবিধা যোগানো হয় ।

    ঢোল দালান তুং জাতির গ্রামের স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন । দেখতে একটি প্যাগোডার মতো । উচ্চতা বিশ মিটারেরও বেশি । ঢোল দালানের চার পাশ কাঠের খুঁটিতে ঘেরা । মানুষের বিশ্রামের জন্য চার দিকে বেঞ্চির ব্যবস্থাও করা হয় । ঢোল দালান কাঠের খুঁটি দিয়ে শক্ত করা হয় । এই সব খুঁটি সংযুক্ত করার জন্য কোনো পেরেক ব্যবহার করা হয় নি । এতে তুং জাতির মিস্ত্রীদের স্থাপত্যের উত্কৃষ্ট নৈপুণ্য তুলে ধরা হয়েছে । তুং জাতির তরুণ লু লিউ ছেন বলেছেন , তুং জাতির প্রতি গ্রামে একটি এ রকমের ঢোল দালান আছে ।

    ঢোল দালান তুং জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য। তাদের বংশের উপাধি প্রায় একই , লু উপাধি । যখন তাদের পূর্ব পুরুষরা এখানে আসেন , তখন তারা প্রায় একই বংশের লোক ছিলেন । পরে তাদের পূর্ব পুরুষদের পাঁচ উপজাতিতে বিভক্ত করা হয় । একটি ঢোল দালান একটি উপজাতির পরিচায়ক । তাদের উপজাতি এই ঢোল দালানের আশেপাশে বাস করে ।

    ঢোল দালানের নিকটে দশ বারো তরুণ তরুণী লাইনে সারিবদ্ধভাবে তুং জাতির লোক সংগীত গাইছে । গান গাওয়ার ব্যাপারে তারা কোনো পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেনি । কিন্তু তাদের পরিবেশনের নৈপুণ্য সত্যি ভাল। সংগীতের প্রতিভা ও দক্ষতার সাহায্যে তারা নিপুণভাবে গান পরিবেশন শেষ করেছে ।

    চাঁদ নামে তুং জাতির এক মেয়ে সংবাদদাতাকে বলেছেন , যে জায়গায় আনুষ্ঠানিকভাবে তুং জাতির লোক সংগীতানুষ্ঠান আয়োজন করা হয় , সে জায়গা সাধারণ জায়গা নয় । সাধারণতঃ গুরুত্বপূর্ণ উত্সব পালন করা আর দূর থেকে আসা বিশিষ্ট অতিথিদের আতিথেয়তা করার সময় ঢোল দালানে এই ধরনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় ।

    তুং জাতির লোক সংগীত কর্মে ঝিঁঝি পোকা আর পাখির মতো প্রকৃতির নানা প্রাণীর শব্দ নকল করা হয় । সুতরাং তুং জাতির সং গীতের সুর আকাশের কন্ঠস্বর বলে অভিহিত করা হয় ।

    যখন আমরা সংগীতের মনোরম সুর উপভোগ করলাম , তখন অন্ধকার আসল । ঢোল দালান থেকে মধুর ও মৃদু কন্ঠে গানের সুর শোনা যাচ্ছে । এতে লোকেরা আত্মহারা আর মুগ্ধ হয় ।

    ঢোল দালানের আশেপাশে তুং জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটির পর একটি হস্তশিল্প দ্রব্য দোকান দেখা যায় । এই সব দোকানে রূপার অলংকার ও সূচীকর্ম দ্রব্য থরে থরে সাজানো হচ্ছে । কানের দুল , সোনার হার , বালাসহ নানা রকম রূপার অলংকার আপাদমস্তক দেখা যায় । সূচীকর্ম দ্রব্যে ফুল , প্রজাপতি প্রভৃতির নক্সা সাজানো হয় , দেখতে সূক্ষ্ম আর প্রাণবন্ত ।

    সংবাদদাতা একজন দোকানদারের সঙ্গে কথা বললেন । পঞ্চাশ বছরেরও বেশি বয়স্ক দোকানদারের নাম লু সু হুয়াই । গত কয়েক বছর ধরে আরো বেশি পর্যটক চাও সিং ভ্রমণে এসেছেন । তার দোকানে তুং জাতির হস্তশিল্প দ্রব্য বিক্রি শুরু হয় । ব্যবসা অধিক থেকে অধিকতর ভাল হয়ে উঠার পাশাপাশি তার পরিবারের জীবনযাপন আগের চেয়ে অনেক স্বচ্ছল হয়েছে । তার যেমন নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে , তেমনি বহু ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যও কেনা হয়েছে ।

    লু সু হুয়াই বহু বছর লেখাপড়া করেছেন । তিনি বরাবরই তুং জাতির সংস্কৃতির সুরক্ষা ও প্রচারের উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন । তিনি মনে করেন , তুং জাতির হস্তশিল্প দ্রব্যের ব্যবসা করায় যেমন আয় করা হয়েছে , তেমনি তুং জাতির সংস্কৃতি প্রচারের অনুকূল হয়েছে ।

    তুং জাতির হস্তশিল্প দ্রব্যের ব্যবসা করায় পর্যটকরা আমাদের জাতির সংস্কৃতি সম্পর্কে বেশি জানতে পেরেছেন ।

    সংবাদদাতা লু স্যু হুয়াইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিলেন । তখন চুং চেই গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে চিমনি থেকে রান্নার ধোঁয়া ভেসে উঠল । তুং জাতির সুন্দর খাবার খাওয়ার সময় হয়েছে । সংবাদদাতা একদিকে তুং জাতির সুস্বাদু তরকারী ও চালের মদ খাচ্ছেন , অন্য দিকে তিনি তুং জাতির গ্রামবাসীদের সঙ্গে নির্বিঘ্নে গান গাইছেন । তারা যেন আনন্দের সাগরে ডুবে গিয়েছেন ।