ফিলিস্তিন জাতীয় ক্ষমতা সংস্থার চেয়ারম্যান মাহমুদ আব্বাস গত সোমবার ঘোষণা করেছেন , তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় মুক্তি আন্দোলন আল ফাতাহ সোমবার ক্ষমতাসীন ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সংগে শেষ পর্যন্ত জাতীয় কোয়ালিশন সরকার গঠন সম্পর্কে একমত হয়েছে । বিশ্লেষকরা মনে করেন যে , এটি হচ্ছে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংহতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ।
একই দিন ফিলিস্তিন টেলিভিশন কেন্দ্রে প্রদত্ত এক ভাষণে আব্বাস বলেন , আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আল ফাতাহ ও হামাস কোয়ালিশন সরকার গঠনের কাজ শুরু করবে । এর পর পরই আব্বাসের মুখপাত্র নবিল আবু রেদিনা ঘোষণা করেছেন , আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আব্বাস হামাসের নেতা ও স্বশাসিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়ার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ভেঙ্গে দেবেন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন । জানা গেছে , হামাস পক্ষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হানিয়াকে বহাল রাখার অনুরোধ জানিয়েছে । এতে আব্বাস সম্মত হয়েছেন ।
আধা বছরের মনোমালিন্য ও আলোচনার পর হামাস ও আল ফাতাহ কোয়ালিশন সরকার গঠন সম্পর্কে একমত হয়েছে । এ বছরের গোড়ার দিকে ফিলিস্তিনের আইন সভার নির্বাচনে হামাস দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন আল ফাতাহকে পরাজিত করে আইন সভার প্রথম বৃহত পার্টিতে পরিণত হয় এবং মার্চ মাসে এককভাবে সরকার গঠন করে । তবে হামাস সরকার গঠনের শুরুতেই বিরাট চাপে পড়ে । হামাস ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে চায় না , এই অজুহাতে পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনে তাদের সাহায্য বন্ধ করে দেয় । ফলে হামাস সরকার গুরুতর আর্থিক সংকটে পড়ে । ফিলিস্তিনের সরকারী কর্মচারীরা আধা বছরের মধ্যে কোনো বেতন পান নি । তাই হামাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল অহরহ সংঘটিত হচ্ছে । সরকারী কর্মচারীদের বিরাটার ধর্মঘট এখনো চলছে । আর্থিক সংকট গুরুতর সামাজিক সংকটও ডেকে এনেছে । গত কয়েক মাসে হামাস ও আল ফাতাহর সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েকবার সশস্ত্র সংঘর্ষ ঘটেছে । সংঘর্ষে শত শত লোক প্রাণ হারিয়েছে । জুন মাসে ফিলিস্তিনী জংগীদের দ্বারা একজন ইসরাইলী সৈনিক অপহরণের পর পরই ইসরাইলী বাহিনী গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে । এতে ফিলিস্তিনের আর্থিক ও সামাজিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে । এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জাতীয় কোয়ালিশন সরকার গঠন জরুরী হয়ে পড়ে । এই সংকট নিরসনের জন্যে হামাস ও আল ফাতাহ বহুবার যৌথভাবে সরকার গঠনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে ।
ফিলিস্তিনের বিভিন্ন পক্ষ আশা করে যে , আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার নতুন কোয়ালিশন সরকারকে স্বীকৃতি দেবে এবং ফিলিস্তিনে তাদের সাহায্য আবার শুরু করবে যাতে তার আর্থিক সংকট প্রশমিত হয় । অথচ তাদের এই আশা বাস্তবায়িত হবে কি না , তা নতুন সরকার , বিশেষ করে হামাসের অভিমতের ওপর নির্ভর করছে । পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনে কোয়ালিশন সরকার গঠনকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি জোর দিয়ে বলেছে , নতুন সরকারকে আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পেশকৃত তিনটি শর্ত মেনে নিতে হবে । তিনটি শর্ত হচ্ছে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া, বলপ্রয়োগ ত্যাগ করা এবং ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো স্বীকার করা । হামাসের মুখপাত্র সামা আবু জুহরি গত সোমবার বলেছেন , হামাস কোয়ালিশন সরকার গঠনের ব্যাপারে রাজী হলেও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে না এবং সশস্ত্র উপায়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করবে ।
বর্তমানে হামাস ও আল ফাতাহ কেবল নীতিগতভাবে কোয়ালিশন সরকার গঠনের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে । সরকার গঠনের খুঁটিনাটি বিষয় এখনো স্থির হয় নি । বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মত ফিলিস্তিনের প্রধান সাহায্যদাতা দেশ ফিলিস্তিনে কোয়ালিশন সরকার গঠনকে সতর্কমূলক স্বাগত জানিয়েছে । তবে তারা বলেছে , সরকার গঠনের খুঁটিনাটি বিষয় অনুসারে তারা সিদ্ধান্ত নেবে , ফিলিস্তিনের কাছে তাদের সাহায্য আবার শুরু করবে কি না । সুতরাং বিশ্লেষকদের মতে সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় হামাস ও আল ফাতাহের আরো নমনীয় কৌশল নেয়া এবং তার নীতির সুষ্ঠু বিন্যাসের দরকার হবে যাতে ফিলিস্তিন অবিলম্বে বিদ্যমান সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত হতে পারে ।
|