"চীন-রাশিয়ার মৈত্রী সফর" নামে একটি সাংবাদিক প্রতিনিধি দল রাশিয়ার তাতারস্তান স্বশাসিত প্রজাতন্ত্রের রাজধানী কাজানে গিয়ে বিখ্যাত কাজান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাক্ষাত্কার দেয়ার সময়ে রাশিয়ার ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষা শিক্ষার আগ্রহ বুঝতে পেয়েছে।
কাজান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে রাশিয়ার বিখ্যাত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ বছরের ইতিহাস রয়েছে। রাশিয়ার ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন লেনিন । গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচুর চীনা ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করতো। বর্তমানে চীনের নয়টি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা সম্পর্ক রয়েছে। কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নাইলি জমোভ সফররত চীনা সাংবাদিকদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বলেছেন,
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের মধ্যে সুষ্ঠু সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ইতিহাসের যোগাযোগ ছাড়াও, বর্তমানে আমরা চীনের পন্ডিত ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভালো সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। কাজান বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের বহু উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এর মধ্যে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ। যেমন আমরা চীনের হুনান শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং পেইচিংয়ের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। ১৫ আগস্ট আমরা কুয়াংতোং বৈদেশিক আর্থ-বাণিজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও শিক্ষা , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছি।
মাদাম হানইয়োং চীনের সিআন থেকে এসেছেন। এর আগে তিনি শানসি শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতেন। ১৯৯১ সালে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা শিক্ষা কোর্স চালু হবার সময় থেকে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে তিনি চীনা ভাষা শিখাচ্ছেন। তিনি বলেছেন,
রাশিয়ায় কাজান বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে আগেই প্রাচ্যের ভাষা বিভাগ খুলেছিল। গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষ নাগাদ কাজান বিশ্ববিদ্যালয় চীনের হুনান শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ১৯৯১ সালে চীনা ভাষা বিভাগে ছাত্রদের ভর্তি করার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার আরো বেশি তরুণ-তরুণীরা চীনা ভাষা শিখতে আগ্রহী। চীন-রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ধাপে ধাপে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। রাশিয়ায় চীনা ভাষা বলতে পারে এমন লোকের চাহিদা ধাপে ধাপে বাড়ছে। তিনি আরো বলেছেন, বর্তমানে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিভাগের দুটি ক্লাস আছে এবং ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ২৭জন। চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে আরেকটি ক্লাস খোলা হবে। এই ক্লাসে পড়ার জন্যে পঞ্চাশেরও বেশি লোক দরখাস্ত করেছে। তবে শুধু ১৬জন ছাত্রকে ভর্তি করা হবে।
রুস্লান ইউসুবোভ হচ্ছেন কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিভাগের তৃতীয় শেণীর ছাত্র। তাঁর চীনা নাম ইউ হু। চলতি বছরের প্রথমার্ধে তিনি হুনান শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ মাস ধরে চীনা ভাষার শিক্ষা কোর্স করেছেন। ছোট বেলা থেকেই তাঁর চীনা ভাষা শেখার আগ্রহ ছিল। তিনি চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতিও পছন্দ করেন। তিনি বলেছেন, চীনের সংস্কৃতি জানা একটি আনন্দময় ব্যাপার। চীনা ভাষা শিক্ষার অভিজ্ঞতা বলার সময়ে তিনি চীনা ভাষায় আমাদের বলেছেন,
চীনা ভাষা শিক্ষার প্রথম দিকে আমি মনে করেছি, চীনা ভাষা খুবই কঠিন। প্রথমত, চীনা শব্দ সুখস্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ঠিক উচ্চারণ করতে হবে। তবে এক বছর পর দেখলাম কোন সমস্যা হবে না। ভাব বিনিময় ও যোগাযোগের আরো বেশি সুযোগ পেলে চীনা ভাষা শেখায় কোনো সমস্যা নেই। হুনান শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ মাসে শেখার প্রক্রিয়ায় আমি বেশি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। তবে আমি মনে করি, হুনানের আঞ্চলিক ভাষা খুবই কঠিন।
সাংবাদিক প্রতিনিধিদলটি কাজান পৌঁছানোর সময় স্থানীয় সরকার তাদের জন্যে একজন চীনা ভাষার দোভাষীর বন্দোবস্তু করেছে। তাঁর নাম ভিক্টোরিয়া কালিয়ামোভা । তাঁর চীনা নাম সিয়াও লিয়ান। তিনি খুবই সুন্দর চীনা ভাষা বলতে পারেন। তিনি ইউ হুর মত কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিভাগ থেকে স্নাতক হয়েছেন। তিনি আমাদের একটি জনপ্রিয় চীনা গান গেয়ে শুনিয়েছেন।
মাদাম হান ইয়োং বলেছেন, রাশিয়ায় কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিভাগের শিক্ষার মান সর্বোচ্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে চীনা শিক্ষক এসে চীনা ভাষা শিক্ষা দিচ্ছেন। চীনা ভাষা বিভাগে স্নাতক ডিগ্রীধারী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বেশির ভাগই চীনা ভাষা সংক্রান্ত চাকরি পেতে পারেন। তিনি মনে করেন, রাশিয়ায় চীনা ভাষা জানা লোকদের খুবই ভালো ভবিষ্যত সম্ভাবনা রয়েছে।
|