v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-08 14:55:27    
লিন ফোং ও সাং কুইপিংয়ের প্রেমের কাহিনী

cri

    লিন ফোং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে থিয়েনচিন শহরের এক কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন । কাজের প্রয়োজনে ২০০৪ সালে কোম্পানি তাকে কুয়াংচৌ শহরে পাঠায় । তার প্রেমিকা সাং কুইপিং থিয়েনচিনে থাকেন । তারা দুজন গত পাঁচ বছর ধরে প্রেমালাপ করে প্রেমিক-প্রেমিকা সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। মাসে মাত্র একবার থিয়েনচিনে ফিরে আসতে পারেন বলে লিন ফোং আগের মতোই এবারও রেলগাড়ি থিয়েনচিন স্টেশনে পৌঁছুলে আনন্দের সঙ্গে উপহার নিয়ে প্রেমিকা সাং কুইপিংয়ের হলের দিকে ছুটে আসেন । কিন্তু সাং কুইপিং হলে ছিলেন না । টেলিফোনের যোগাযোগেও তাকে পাওয়া যায়নি । সাং কুইপিং কোথায়? হঠাত হলের এক টেবিলে রাখা একটি চিঠি তাকে আকর্ষণ করল । চিঠিটা সাং কুইপিংয়ের লেখা । চিঠিতে সাং কুইপিং লিখেছেন,তার জীবনে আর একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লোকের সযত্ন দরকার । তাই তিনি লিন ফোংয়ের সঙ্গে তাদের পাঁচ বছর স্থায়ী প্রেমের সম্পর্ক শেষ করতে চান । লিন ফোং বিস্মিত হলেন । সাং কুইপিংয়ের যে বন্ধু-বান্ধব তার খোঁজখবর জানার সম্ভাবনা আছে তিনি পাগলের মতো তাদের সবাইর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেন , কিন্তু কিছু খোঁজখবর পেলেন না ।

    লিন ফোং মনে করেন যে, সাং কুইপিং আর তার সম্পর্ক সুগভীর । পাঁচ বছর ধরে তারা পরস্পরকে ভাল বেসেছেন । তারা পরস্পরকে বিশ্বাস এবং ভালবাসেন । তাই কি হল ?তিনি সাং কুইপিংয়ের মুখে ব্যাখ্যা শুনতে চান । দ্বিতীয় দিন লিন ফোং কোম্পানির কাছে ছুটি নিয়ে সাং কুইপিংয়ের জন্মস্থান অন্তর্মোঙ্গলিয়ায় রওয়ানা হলেন । বিকেলে লিন ফোং যখন সাং কুইপিংয়ের বাড়িতে পৌঁছান তখন শুধু তার মা ছিলেন । লিন ফোংয়ের অস্থিরতা ও জিজ্ঞেসের সম্মুখে সাং কুইপিংয়ের মা মাথা নেড়ে উত্তর দেন , তিনিও জানেন না তার মেয়ে কোথায় । সাং কুইপিংয়ের বাসা ত্যাগের সময়ে কুইপিয়ের মার চোখ দুটো জলে ভরা দেখে লিন ফোং মনে করেন , নিশ্চয় তিনি জানেন কুইপিং কোথায় । অবশেষে সাং কুইপিংয়ের মা কিছু বলেননি ।

    সন্দেহ নিয়ে লিন ফোং সাং কুইপিংয়ের আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে ফোন করলেন । এই বন্ধুর কাছ থেকে লিন ফোং জানলেন,সাং কুইপিং সত্যিই অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন । এই অসুবিধার কারণে তিনি বাধ্য হয়ে তাদের সম্পর্ক শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । খবরটা শুনে লিন ফোং আবার সাং কুইপিংয়ের মাকে ফোন করলেন । কুইপিংয়ের মা লিন ফোংকে কুইপিংয়ের বর্তমান ঠিকানা জানালেন । সাং কুইপিং এখন হারবিন শহরের রক্ত রোগ গবেষণালয়ে আছেন ।

    অস্থির মনোভাব নিয়ে লিন ফোং তাড়াতাড়ি হারবিন শহরে যান । অনেক দিন খুঁজাখুজি করার পর অবশেষে তিনি অনেক দিন অদৃশ্য প্রেমিকাকে পেলেন । সাং কুইপিং ব্যাপারটা পুরোপুরি লিন ফোংকে জানালেন । লিউক্যামিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়া ছোটো ভাইকে দেখাশোনা করার জন্যে সাং কুইপিং লিন ফোংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিলেন । কারণ ভাইবোন দুজনের সম্পর্ক খুব ভাল । তাদের পরিবার অত্যন্ত গরিব ছিল । ছোটোবেলা থেকেই ভাইবোন দুজন খুব জ্ঞানী বাচ্চা ছিল ।২০০০ সালে বাবা মারা যান । এর পর ১৯ বছর বয়সী ভাই লেখাপড়া ছেড়ে পরিবারের সংসারের বোঝা নিজের কাঁধে নেয় । ভাই খুব পরিশ্রমী । বেশি উপার্জন করার জন্যে সে মজুরি হিসেবে সকাল ৫টা থেকে রাত ৭-৮টা পযন্ত অন্যান্যদের গম কাটতে সাহায্য করে । দুদিন গম কেটে ভাই ৭০ ইউয়ান পায় । বাসায় ফেরার সময়ে ভাইর দুই হাতে জলের ফোটা ভরপুর । এই সব স্মরণ করলে কুইপিংয়ের মন খারাপ হয় ।

    দেখতে দেখতে তাদের অবস্থা দিনদিন ভাল হচ্ছিল । হঠাত ভাই লিউক্যামিয়ায় আক্রান্ত হল । ফলে তাদের পরিবার আবার অসুবিধার মধ্যে পড়ে । বড় বোন হিসেবে সাং কুইপিং এক সিদ্ধান্ত নিলেন যে,নিজের সব কিছু দিয়ে ভাইকে বাঁচাবেন । নিজের প্রেমিকা লিন ফোংকে জড়িত না করার জন্যে তিনি বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।

    সাং কুইপিং ভাবতে পারেননি যে, তিনি খবরটা গোপন রাখার চেষ্টা করলেও অবশেষে লিন ফোং তাকে খুঁজে পেলেন । নিজেকে অত্যন্ত ভালবাসার লিন ফোংয়ের প্রতি সাং কুইপিংয়ের সিদ্ধান্ত যেন কিছুটা নিষ্ঠুর । কিন্তু ব্যাপারটা জানার পর লিন ফোং অত্যন্ত মুগ্ধ হন । দুজন মিলে ভাইকে দেখাশুনা করতে তিনি সাং কুইপিংকে রাজী করাতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন ।

    আন্তরিকতাপূর্ণ লিন ফোংকে সাং কুইপিং মৃদু স্বরে বললেন,তিনি চান না লিন ফোং এতে জড়িত হোক । কোনো উপায় না থাকলে তিনি ভাইর জন্যে নিজের মজ্জা ট্র্যান্সপ্লান্ট করবেন । যদি লিন ফোং এতেও জড়িত থাকেন তাহলে দুজনের অসুবিধা হবে । কিন্তু লিন ফোং বলেন , তিনি নিজের প্রিয়তমার সঙ্গে অসুবিধার সম্মুখীন হবেন, তিনি সাং কুইপিংয়ের সঙ্গে ভাইকে চিকিত্সা করবেন ।

    লিন ফোং বারবার সাং কুইপিংয়ের কাছে নিজের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং নিজের সিদ্ধান্ত জানান । অবশেষে লিন ফোংয়ের অকৃত্রিমতা সাং কুইপিংকে মুগ্ধ করেছে । দুজন এক সঙ্গে ভবিষ্যতের সম্মুখীন হতে দৃঢ়সংকল্প হয়েছেন । ভাইকে রাসায়নিক থেরাপি দেয়ার জন্যে তারা নিজের সব টাকাপয়সা ব্যবহার করেছেন এবং ৬০ হাজার ইউয়ান ঋণী হয়েছেন । কিন্তু অসুবিধার সামনে লিন ফোং ও সাং কুইপিং ভিতু হননি । তারা হাসিমুখে অসুবিধার মোকাবেলা করছেন । ভাইর জন্যে তারা অক্লান্তভাবে কাজ করছেন । বিশ্বাস করা যায়, দুজনের মিলিত প্রচেষ্টায় কুইপিংয়ের ভাই আরোগ্য হয়ে উঠবে এবং লিন ফোং ও কুইপিংর প্রেম আরও মধুর হবে ।