v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-07 12:37:29    
বেই ইয়াং ডিয়েন

cri
    জায়গাটির নাম বেই ইয়াং ডিয়েন। সেখানে আপনারা জলমাতৃক গ্রামের রীতিনীতি অনুভব করতে পারবেন।

    বেই ইয়াং ডিয়েন হোপেই প্রদেশের আনসিন জেলায় অবস্থিত। পেইচিং থেকে ১৬০ বর্গ কিলোমিটার দূরে। বেই ইয়াং ডিয়েনের মোট হ্রদের আয়তন ৩৬৬ বর্গ কিলোমিটার। এখানে ১৪০টিরও বেশী হ্রদ রয়েছে। হ্রদে কেবল নলখাগড়ার বন।এ সব নলখাগড়া হ্রদকে ২৭০০টিরও বেশী ছোট-ছোট অংশে বিভক্ত করেছে । এ সব মিলে বেই ইয়াং ডিয়েন একটি হ্রদেররহস্যময় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বেই ইয়াং ডিয়েন কিভাবে এ সব হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে সে সম্বন্ধে একটি রুপকথাও প্রচলিত হয়। গাইড রেন লি বলেছেন,

    একটি রুপকথায় বলা হয়েছে , পূর্ণিমা রাতে চাঁদের দেবী গোপলে ইন্দ্রজালিক ঔষুধ খেয়ে নিজের অজানতে আকাশে উড়ে গেলেন। তাঁর কাছে নেয়া মূল্যবান আয়না মাটিতে পড়ে গেল। অবশেষে আয়নাটি ভেঙ্গেছোট-বড় ১৪৩টি খন্ড হওয়ায় এখনকার হ্রদের১৪৩টি অংশের রুপ ধরেছে।

    বেই ইয়াং ডিয়েনের কথা বলতে গেলে প্রথমে বেই ইয়াং ডিয়েনের নলখাগড়ার কথা উল্লেখ করতে হবে। এসব নলখাগড়া বেই ইয়াং ডিয়েনের রত্ন। এখানকার স্থানীয় মানুষের মধ্যে একটি কথা খুব জনপ্রিয়। কথাটি হল, 'একটি নলখাগড়ার মূল্য একটি সোনা দন্ডের সমান"। প্রত্যেক বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এ সব নলখাগড়ার জন্ম হয়। সারা হ্রদে কেবল হলুদ রং। দেখতে কি সুন্দর!

    জানা গেছে, বেই ইয়াং ডিয়েনের নলখাগড়া তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। প্রথম শ্রেণীর নলখাগড়া দিয়ে পর্দা তৈরী করা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণীর নলখাগড়া দিয়ে শিল্পকলার চিত্রাঙ্গ তৈরী করা যায় এবং তৃতীয় শ্রেণীর নলখাগড়া দিয়ে কাগজ তৈরী করা যায় একং জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নলখাগড়ার কাঁচা শিকড় দিয়ে সুস্বাদুসুপ তৈরী করা যায় । পুরোন শিকড় দিয়ে এক ধরনের ঔষুধ তৈরী করা যায়। নলখাগড়ার কান্ডদিয়ে ঝাড়ুদার তৈরী করা যায় এবং তার ফুল দিয়ে পালিশ তৈরী করা যায়। ইয়াং সিও একজন স্থানীয় নাগরিক। তিনি একটি নলখাগড়া দিয়ে তৈরী হস্তলিপিজাত দ্রব্য দোকান চালু করেন। তিনি বলেছেন, নলখাগড়া দিয়ে শুধু যে হস্তলিপিজাত দ্রব্য তৈরী করা যায় তা নয় অনেক দৈন্যদিন ব্যবহৃত জিনিসও তৈরী করা যায়। যেমন সুর্যের আলো প্রতিরোধের জন্যে এক ধরনের টুপি তৈরী করা যায়। তা ছাড়া '

    নলখাগড়া দিয়ে জুতাও তৈরী করা যায়। এক জোড়া জুতার দাম মাত্র কয়েক রেন মিন পি। এই দোকানের মালিক ইয়াং সিও বলেছেন,

    এখানকার নলখাগড়ার জুতা উচু তাপ মাত্রায় তৈরী করা হয়। এই ধরনের জুতা পুরোপুরি হাতের তৈরী বলে পায়ে পরলে খুব আলামদায়ক। নলখাগড়া দিয়ে তৈরী জুতা বেই ইয়াং ডিয়েনের একটি স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হস্তলিপিজাত দ্রব্য।

    নলখাগড়া ছাড়া, বেই ইয়াং ডিয়েনের পদ্ম উদ্যান একটি দেখার মতো জায়গা। এই উদ্যানে কেবল পদ্ম চাষ করা হয়। প্রত্যেক বছরের গ্রীষ্মকালপদ্ম ফুটানোর সময়। তখন হ্রদের পানি পদ্মে আচ্ছন্ন হয়। উদ্যানের মাঝখানে একটি পাথর সাজানো পথ আছে। পযর্টকরা এই পথ দিয়ে চার দিকের পদ্ম ক্যামারার বুন্দি করতে পারেন। বিশেষভাবে এই পদ্ম দেখতে আসা পেইচিং মেয়ে চাও সি বলেছেন,

    এ সব পদ্ম খুব সুন্দর । আমি এর আগে কোন দিন এত বেশী পদ্ম দেখিনি। আমি অনেক ছুবি তুলেছি। পেইচিং ফিরে গিয়ে আমি এসব ছুবি আমার বন্ধুবান্ধবদের দেখাবো।

    পদ্ম উদ্যানের অজস্র পদ্মের মধ্যে এক ধরনের পদ্মের নাম হল বিনটিলিয়েন। জানা গেছে এই পদ্ম অত্যন্ত মুল্যাবান। এ ধরনের পদ্ম খুব কম দেখা যায়। চীনে এ ধরের পদ্ম সামী স্ত্রীর মধ্যকার ভালবাসার প্রতীক বলে মনে করা হয়। স্থানীয় পযর্টন কাজে নিয়োজিত কমর্চারী মিস রেন লি বলেছেন, এই পদ্মের উত্স সম্বন্ধে এখানে একটি মুগ্ধ ভালবাসার গল্প প্রচলিত হয়।তিনি বলেছেন,

    অতীতে এখানে সিয়েসেন নামে একজন পুরুষ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী দেখতে খুব সুন্দর । গ্রামের একজন দুবৃর্ত্ত তার অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রীকে ধষর্ণ করেন। তার স্ত্রী লজ্জা পেয়ে নদীতে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। কেঁপে গিয়ে এই পুরুষ এই দুবৃর্ত্তকে হত্যা করেন।তার পর তিনিও নদীতে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে যে জায়গায় তারা আত্মহত্যা করেন সেই জায়গায় একটি পদ্মের জন্ম হয়। একটি কান্ডে দুটো ফুল ফুটেছে।পরে লোকেরা এই পদ্মকে ডিলিয়েন ডাকেন।

    বেই ইয়াং ডিয়েনে প্রত্যেক পরিবারের নৌকা আছে। অতীতে স্থানীয় লোকেরা এ সব নৌকা দিয়ে মাছ ধরতেন। কিন্তু এখানকার অধিকাংশ পরিবার পযর্টন শিল্পে নিয়োজিত হয়। প্রত্যেক দিন তাদের নিজেদের মাছ ধারা নৌকায় পযর্টকদের আনা পাঠানো হয়। গাইড রেনলি বলেছেন,

    প্রত্যেক পরিবারে নৌকা আছে। এখনকার নৌকা স্থলের বাইসিকোর মতো। স্থানীয় লোক নৌকায় চরে যে কোন জায়গায় যেতে পারেন।

    এখানকার পরিবহণ ব্যাখ্যা করার পর , বেই ইয়াং ডিয়েনের খাবার নিয়ে আলোচনা যাক। এখানে পরিদর্শন করতে আসলে এখানকার মাছ আসাদন করতে হবে। এখানে নানা ধরনের মাছ পাওয়া যায়। যদি ইচ্ছা হয় তাহলে আপনি জেলের সঙ্গে মাছ ধরতে পারেন। এখানকার যে কোন একটি রেস্তোঁরায় পযর্টকরা মাছ আসাদন করতে পারেন। মাছ ছাড়া, এখানকার রেস্তোঁরাগুলোতে নানা ধরনের পিঠা পাওয়া যায়। সাধারণত মাছ পিঠার সঙ্গে মিশ্র হয়। এই বিশেষ খাওয়া শুধু বেই ইয়াং ডিয়েনে দেখতে পাওয়া যায়। খেতে সুস্বাদু লাগে।