আট্রিয়ান জনসনের বাসায় চীনের সংস্কৃতির ছায়া দেয়া যায় । দেয়ালে চীনের ছবি আছে , পড়ার ঘরে অনেক চীনা বই । গত শতাব্দির ৮০ ও ৯০ দশকে তিনি দু'বার চীনে মোতায়েন ব্রিটেনের সাংস্কৃতিক কাউন্সিলার ছিলেন । তিনি চীনে ৯ বছর কাজ করেছেন । যদিও এখন তিনি অবসর নিয়েছেন , তবে তিনি এখনও চীন সংক্রান্ত কাজের জন্য ব্যস্ত থাকেন । তিনি বলেছেন , তিনি হলেন চীনের আন্তরিক বন্ধু ।
চীন হল আট্রিয়ান ব্রত স্থাপনের এক মহানস্থান । আট্রিয়ান একজন ব্রিটিশ । তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রী ধারী । তিনি ব্রিটেনের সংস্কৃতি কমিশনের কর্মকর্তাও ছিলেন । সারা জীবনে তিনি দেশের উন্নয়নে শিক্ষা ক্ষেত্রে সাহায্য কাজ করেছেন । যখন তিনি মালয়েশিয়ায় কাজ করতেন , তখন তিনি সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগের সময় আবিস্কার করেছেন যে , শ্রেষ্ঠ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই চীনা কংশদ্ভূত । তিনি ভাবেন , এই জাতি এত বুদ্ধিমান । সুতরাং , চীনকে উপলব্ধি করার জন্য তিনি চীনা ভাষা শিখতে শুরু করেন । ১৯৮২ সালে তিনি প্রথমবার চীনে এসেছেন এবং কাজ করতে শুরু করেছেন । তিনি বলেন , তখন হল তার কাজের সবচেয়ে নিষ্ঠাবান চার বছর । তিনি বলেন , চীনে আশার পর তিনি দেখেছেন যে , চীনাদের চিন্তাধারণা উন্মুক্ত , চীনারা খুব বুদ্ধিমান এবং উন্নয়নে খুব উত্সাহী । তিনি মনে করেন , চীনের সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক ইতিহাস আছে এবং চীনের অনেক মানব সম্পদ আছে । তিনি চীনের প্রতিটি ক্ষেত্রের উন্নয়নের ওপর মনোযোগ দেন , এই সব উন্নয়নের জন্য চীন সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি বেড়েছে ।
সংবাদদাতারা তাঁকে চীন সম্পর্কে কিছু স্মরণীয় কথা বলার অনুরোধ জানালে তিনি বলেন , চীন আমার চেতনার ওপর ইতিবাচক ছাপ ফেলেছে । তিনি বলেন , ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে কাজ করেছেন । বাংলাদেশের দরিদ্র্য অঞ্চলের শিক্ষা , সংস্কৃতি উন্নয়নের জন্য তিনি সর্বদাই প্রয়াস চালিয়েছেন । এর পর তিনি ঘানায় গিয়েছেন । সেখানকার শ্রেষ্ঠ যুবককে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন । তবে সেখানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল বলে তাঁর সব প্রয়াস বিকলে গেছে । তিনি বলেন , চীনের পরিস্থিতি আলাদা । চীন সংস্কার ও উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের স্থিতিশীল পরিস্থিতিও ভালোভাবে বজায় রেখেছে । চীন পশ্চিমা দেশের উন্নত চিন্তাধারা অনুসরণের পাশে পাশে নিজের দেশের বৈশিষ্ট্যও সুরক্ষা করেছে । তিনি বলেন , চীন দায়িত্ব পালনের জন্য একটি ভালো স্থান । চীনে তিনি সত্যি সত্যি বিজয়ের অনুভূতি পেয়েছেন ।
আট্রিয়ান চীন ও ব্রিটেনের শিক্ষা আদান-প্রদানের সেঁতু স্থাপন করেছেন । তিনি মনে করেন চীনের সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য মানব সম্পদ খুবই প্রয়োজনীয় । শিক্ষা আদান-প্রদানের বিশেষ ভূমিকা আছে । আরো সুবিধাজনক আদান-প্রদান করার জন্য তাঁর প্রস্তাবে ব্রিটেনের শিক্ষা ও সংস্কার বিভাগ দূতাবাস থেকে প্রথক করে পূর্ণঙ্গ বিভাগ করা হয়েছে । তিনি চীনের জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি ব্রিটেনের শিক্ষা ও সংস্কার বিভাগে কর্মকর্তা পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন , যাতে দু'পক্ষের সহযোগিতা আরো গভীর হতে পারে । এর ফলে ব্রিটেন ও চীনের শিক্ষাও সহযোগিতার ক্ষেত্রে দ্রুতভাবে উন্নত হয়েছে । তিনি আনন্দের সঙ্গে বলেন , এখন ব্রিটেন চীনে বিশ্বে তার বৃহত্তম শিক্ষা কার্যালয় স্থাপন করেছে ।
চীন নিযুক্ত ব্রিটেনের সংস্কৃতি কাউন্সিলার হিসেবে আট্রিয়ানের দ্বিতীয় কার্যমেয়াদে তিনি চীনে একটি চীন-ব্রিটেন পরিচালনা ইন্সটিটিউট স্থাপন করেছেন । যাতে চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের জন্য আরো বেশি মানব সম্পদকে প্রশিক্ষণ দেয়া যায় । যে লোক ক্লাসে আট্রিয়ানের ভাষণ শুনেছে , তারা সবাই তাঁকে প্রশংসা করে বলে যে , চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও প্রমুখ নেতাদের সরকারী কর্ম রিপোর্ট সম্পর্কে তিনি চীনা মানুষের চেয়েও বেশি জানেন ।
চীনের প্রতি আট্রিয়ানের ভালোবাসা খুব গভীর । চীন সম্পর্কে বললে তিনি সবসময় নিজের তৈরি তথ্যাবলি নিয়ে অন্যকে ব্যাখ্যা করেন যে , চীনের উন্নয়ন ও সংস্কার একটি জটিল প্রকল্প । তিনি বলেন , যত বেশি উপলব্ধি করা যায়, তত বেশি সমস্যা দেখা যায় । তবে আমার উপসংহার হল : চীনের বিরাট পরিবর্তন ও উন্নয়ন হচ্ছে । যদিও এর মধ্যে কিছু সমস্যাও আছে । তবে আমি বিশ্বাস করি চীন এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে পারবে এবং ক্রমেই আরো শক্তিশালী হবে ।
|