v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-07 16:31:26    
ছুটি কাটানোর জন্য  গ্রামে বাগানবাড়ি কেনা

cri
    পাশ্চাত্য দেশের মধ্যবিত্তদের ছুটি কাটানোর জন্য গ্রামে বাগানবাড়ি কেনার প্রথা আগে থেকেই ছিল। তবে দশ-পনেরো বছর আগেও চীনাদের জন্য এটা শুধু স্বপ্ন যা বাস্তবে রূপ দেয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। আজকাল চীনাদের আয় বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাগানবাড়ি কেনাটা ক্রমেই এক নতুন জীবনের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    শহর থেকে গ্রামে গিয়ে পল্লি জীবনের অভিজ্ঞতা (স্বাদ) উপভোগ করা, কিছু কৃষিকাজ করা , কৃষকের তাজা তরকারি খাওয়া এবং মহাপ্রকৃতির কাছে থাকা সত্যিই এক আনন্দের ব্যাপার। বিশেষ করে বড় বড় শহরে কর্মব্যস্ততা ও জীবনের ভারি চাপ মুক্ত হতে শহরবাসীরা পল্লী জীবনে ফিরে যেতে বিশেষভাবে আগ্রহী।

    চীনের দক্ষিণপূর্ব উপকূলীয় চেচিয়াং প্রদেশে এই বাগানবাড়ি কেনার নতুন রেওয়াজ চালু হচ্ছে। গত অক্টোবর মাসে প্রদেশটির রাজধানী হাংচৌ'র "চারঋতু পল্লি পরিবেশ প্রযুক্তি কোম্পানির" উদ্যোগে "চিআন জেলার ছুটি কাটানোর চা বাগান গ্রাম"নামে এক প্রকল্প প্রবর্তিত হয়। এটা প্রদেশটির প্রথম ক্লাব সিস্টেমভিত্তিক 'বাগান বাড়ির খামার'। খামারে ক্লাবের প্রত্যেক সদস্যের যার যার ছোট বাড়ি, চা বাগান অথবা সব্জিবাগান সহ গড়পড়তা ০.১৫ একর জমি-বিশিষ্ট বাগানবাড়ি আছে। ইজারার মেয়াদ ৩০ বছর।

    কোম্পানিটির জেনারেল ম্যানেজার শিয়ে ওয়েই বলেছেন, এই প্রকল্প চালু হবার প্রথম দিনেই সব বাগানবাড়ির বিক্রীর চুক্তি হয়ে গেছে। তিনি বলেছেন, "আমাদের তিন ধরনের বাগান বাড়ি আছে। তিন সদস্যের পরিবারের জন্য বাগান বাড়িতে একটি শয়নকক্ষ , একটি বৈঠকখানা , একটি টয়লেট এবং একটি বারান্দা আছে। দ্বিতীয় ধরনের বাগানবাড়ি বহু সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের উপযোগী । প্রত্যেক বাগানবাড়িতে দুই থেকে চারটি শয়নকক্ষ , এক থেকে দুটি বৈঠকখানা , এক থেকে দুইটি রান্নাঘর আছে।"

    জানা গেছে, ঘরগুলো প্রধানত কাঠের তৈরী, দাম ১১ হাজার থেকে ২০ হাজার মার্কিন ডলারের মতো। ক্লাবের সদস্যরা যার যার বাগানবাড়ির জমিতে চা বা শাকসব্জি চাষ করতে এবং ফসল সংরক্ষণ করতে পারেন।

    উপরোক্ত ধরনের বাগানবাড়ির গ্রাহকদের মধ্যে এক দম্পতি রয়েছেন । স্বামীর নাম ছেন মিং এবং স্ত্রীর নাম চাং লি। তাঁদের একজন ছিলেন শিক্ষক, অন্য জন ছিলেন এক পর্যটন কোম্পানির কর্মী। দু'জনই দু' হাজার সালের কাছাকাছি সময়ে অবসর নিয়েছেন। হাংচৌ শহরে তাদের থাকার জন্য একটি ফ্ল্যাটবাড়ি আছে । অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ উন্নত এই শহরে বসবাস করা খুব সুবিধাজনক। কিন্তু তবুও তাঁরা গ্রামে গিয়ে ফুল ও শাকসব্জি চাষ করে ভিন্নরকম পল্লী জীবনের স্বাদ উপভোগ করতে চান। তাই তাঁরা "চারঋতু পল্লি কোম্পানিটির" প্রকল্পের আওতাধীন সিয়াওইউয়ান গ্রাম পরিদর্শন করতে গেলেন। ছেন মিং বলেছেন, "আমরা সেখানে দু'বার গিয়েছি। প্রথম বার বৃষ্টি পড়ছিল, দ্বিতীয় বার সূর্যের আলোকে নীল আকাশ দেখা যাচ্ছিল। দু'বার দুরকম ভিন্ন দৃশ্য উপভোগ করেছি। আমরা এই জায়গা খুব পছন্দ করেছি। বিশেষ করে মুষল ধারায় বৃষ্টি পড়ার সময় এই সবুজ চা বাগান দেখতে মনের ভেতর এক আনন্দের শিহরণ জাগে , এ অনুভুতির কোনো সীমা নেই।"

    ছেন মিং দম্পতি দুই শয়নকক্ষ আর এক বৈঠকখানা-সম্পন্ন একটি কাঠের বাগানবাড়ি কিনেছেন । তারাঁ নিজেরা মাঝে মাঝে এই বাগানবাড়িতে থাকবেন , তা'ছাড়া এখানে তাঁদের বন্ধুদের আতিথেয়তাও দেবেন। এটা এক পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত বলে এখানে সতেজ হাওয়ায় দম নেয়া এবং নিজের চাষ করা তাজা শাক ও তরিতরকারি খাওয়া যায়। নিজেদের সুস্বাস্থ্যের জন্য তাঁরা বাকি জীবন প্রধানত এই বাগানবাড়িতেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।

    আরও অনেক অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধবৃদ্ধা এ-রকম বাগানবাড়ি কিনতে আগ্রহী। উপরোক্ত কোম্পানির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার চাং ইয়ংকুই বলেছেন, "এই বাগানবাড়িগুলোর বেশির ভাগ গ্রাহকই বৃদ্ধবৃদ্ধা। তাঁদের মধ্যে কিছু লোক এখনও অবসর নেন নি। তবে শীঘ্রই তাঁদের অবসর নেবার পালা হবে। যেমন, চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক লি আমাদের বলেছেন যে, অবসর নেবার পর এখানে এসে বাগানবাড়িতে মুরগী পালন করবেন । সেদিন শিক্ষক দম্পতির সঙ্গে নিয়ে আসা একটি ছোট বাচ্চা বাগানবাড়ির কথা শুনে আনন্দে ছুটোছুটি শুরু করে দেয়।"

    জানা গেছে, চেচিয়াং প্রদেশের অনেক জেলায় এ-রকম বাগানবাড়ি প্রকল্প চালু হয়েছে। বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান--থিয়েনমু পাহাড়ে 'পল্লী আপার্টমেণ্ট' প্রকল্প চালু হয়েছে। এখানে চা বাগানের মতো সুন্দর পরিবেশ না থাকলেও পল্লি-আপার্টমেণ্ট বাড়ির দাম খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। চার-পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার দামে ৫০ বর্গমিটার-বিশিষ্ট আপার্টমেণ্ট বাড়ি পাওয়া যায় । এর লিজ নেয়ার মেয়াদ ৩০ বছর। এই প্রকল্পের লিয়েনচোং কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ইউ শুয়েপিং জানিয়েছেন, এই প্রকল্প স্থানীয় গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের আবাসিক বাড়ির সার্বিক পুনর্গঠন বা সংস্কার করার ফলে এই প্রকল্পের আপার্টমেণ্ট বাড়ি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে । তিনি বলেছেন, "কৃষকদের সঙ্গে সহযোগিতা করে তাদের বাড়ির ভিটামাটি ব্যবহার করে কৃষকদের বাড়ির সংস্কার করা হয় এবং তিন তারকা( থ্রি স্টার) হোটেলের সম মানের রেস্তোরাঁ ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়।এটা 'বহুমুখী ছুটি কাটানোর গ্রাম'। এ-রকম প্রকল্পে রাষ্ট্রীয় ভূমি দখল করা হয় না, শুধু কৃষকদের ভিটামাটির ভিত্তিতে সংস্কার করা হয়।"

    চেচিয়াং প্রদেশের বিভিন্ন স্থানের পল্লি ভ্রমণের ব্যবসা খুব ভাল চলছে বলে এই প্রকল্প সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে। শহরের কোম্পানি এ-রকম পল্লী ভ্রমণ প্রকল্পে পুঁজিবিনিয়োগ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট গ্রামের দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।

    হাংচৌ'র একটি কোম্পানির কর্মী হু চিয়েন থিয়েনমু পাহাড়ের এরকম একটি আপার্টমেণ্ট কিনেছেন। তিনি মনে করেন, এখন তিনি পাহাড়ের এই আপার্টমেণ্ট বাড়িতে ছুটি কাটাতে চান। পরে দীর্ঘকাল বসবাস করবেন। বাড়ি খালী থাকার সময় কোম্পানির সাহায্যে এই বাড়ি ভাড়া দেয়ার ব্যবস্থাও আছে। এতে বাড়ির মালিকদের খুব সুবিধা হয়।