v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-05 16:51:51    
হিউএন সাঙ আর চীন-ভারত সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান

cri
    "পশ্চিম যাত্রা" উপন্যাসের বিষয় হলো, চীনের থাং রাজবংশের একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, তার নাম হিউএন সাঙ, তিনি বৌদ্ধ শাস্ত্র সংগ্রহের জন্যে পশ্চিম দিকে , মানে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার যাওয়ার পথের কিছু ঘটনা। পথে তিনি অনেক বিপদজনক অবস্থায় পড়েন, অনেক দানব তাকে মেরে ফেলতে চায়, কিন্তু তার তিন জন শিষ্যের সাহায্যে অবশেষে তিনি ভারতে পৌঁছে বৌদ্ধশাস্ত্র পেয়েছেন। নিশ্চয় এই কাহিনীতে লেখকের নিজের কল্পনা আছে। কিন্তু ইতিহাসে হিউএন সাঙ অলীক নন এবং প্রাচীন কালে চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানে তিনি অপূর্ব অবদান রেখেছেন।

    চীনের বিখ্যাত পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দী ভাষা ও সংস্কৃত ভাষা বিভাগ আছে। সম্প্রতি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় আর চীনস্থ ভারতীয় দূতাবাস যৌথভাবে ভারত সংস্কৃতি উত্সব উদযাপন করেছে। উত্সবে বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠান ছিলো। এর মধ্যে সংস্কৃত ভাষা ও চীন-ভারত সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান বিষয়ের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ওয়াং বাং ওয়েই "পশ্চিম যাত্রা: থাং হিউএন সাঙ এবং ভারত" নামক একটি ভাষণ দিয়েছেন। তিনি কেন এই বিষয় বেছে নিয়েছেন? সে প্রসঙ্গে অধ্যাপক ওয়াং বলেছেন:

    "চীন ও ভারতের আদানপ্রদানের ইতিহাসে হিউএন সাঙ একজন খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। প্রায় সকল চীনা মানুষ তার নাম শুনেছে। আর সম্প্রতি আমি এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি।"

    তাহলে ইতিহাসে আসল হিউএন সাঙ এবং তার গল্প কি রকম?

    হিউএন সাঙের জন্ম খ্রিষ্টীয় ৬০০ সালে। তিনি চীনের থাং রাজবংশের মানুষ। তার নাম ছিলো ছেন ওয়েই। সন্ন্যাসী হওয়ার পরে নাম পরিবর্তন করে হিউএন সাঙ হয়েছে। তিনি বর্তমান হোনান প্রদেশের লুও ইয়াং শহরের অধিবাসী। বৌদ্ধ শাস্ত্র গবেষণা করার সময়ে কিছু বিষয় নিয়ে তার মনে প্রশ্ন জাগে। তাই তিনি ভারতে গিয়ে মূল বৌদ্ধ শাস্ত্র সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু চীন থেকে ভারতে যাওয়ার পথে কত অজানা বিপদ ও কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো, তা বর্ণনাতীত। কিন্তু তার দৃঢ় মনোবল ও প্রচেষ্টার পর অবশেষে তিনি ভারতে পৌঁছেন। ভারতে তিনি বৌদ্ধ শাস্ত্র সংগ্রহের জন্য অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেন এবং অনেক বিখ্যাত সন্ন্যাসীর সঙ্গে আলোচনা করেন। হিউএন সাঙ তাঁর অগাধ পান্ডিত্যের জন্যে ভারতে অনেকের সম্মান পেয়েছেন। অধ্যাপক ওয়াং বলেছেন:

    "দু'হাজার বছরেরও বেশি দীর্ঘ চীন-ভারত আদানপ্রদানের ইতিহাসে হিউএন সাঙ একজন খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি নিজেই ভারতে যান এবং দু'দেশের আদানপ্রদানে যে অপূর্ব অবদান রাখেন তা অতুলনীয়। তাছাড়া হিউএন সাঙয়ের সাংস্কৃতিক মর্ম এবং তার দৃঢ় মনোবলও খুবই উল্লেখযোগ্য। চীনের বিখ্যাত লেখক লু শুইন তাকে "চীনাদের মেরুদন্ড" বলে বর্ণনা করেন। সত্য অন্বেষণের জন্য নিজের জীবনোত্সর্গ করতে প্রস্তুত এমন ভাবমানস আজো খুবই বিরল।"

    হিউএন সাঙ শুধু বৌদ্ধ শাস্ত্র চীনে নিয়ে আসেননি, তিনি শাস্ত্রগুলো চীনা ভাষায় অনুবাদও করেছেন। এবং পথে যা যা দেখেছেন বা শুনেছেন, তার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তিনি "থাং রাজবংশের পশ্চিমা দেশগুলোর রেকর্ড" নামক বই লিখেছেন। এই বইয়ে মধ্য-এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার তখনকার শতাধিক দেশের বৈশিষ্ট্যময় আঞ্চলিক রীতিনীতি, উত্পাদন, আবহাওয়া, ভূবিজ্ঞান, ইতিহাস, ভাষা ও ধর্মের নানা তথ্য সংগৃহীত আছে। তা আজকে প্রাচীণ মধ্য-এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূবিজ্ঞান ও ইতিহাস গবেষণায় একটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ বই। অধ্যাপক ওয়াং মনে করেন যে:

    "চীনের সংস্কৃতিতেও হিউএন সাঙয়ের অবদান খুবই বিরাট। তিনি ভারতের অনেক বৌদ্ধ শাস্ত্র চীনা ভাষায় অনুবাদ করেন এবং ভারতের সংস্কৃতি চীনে নিয়ে আসেন। এসব চীনের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।"

    ইতিহাসের দিক থেকে দেখতে গেলে চীন ও ভারতের আদানপ্রদান প্রক্রিয়ার তিনটি ভালো পর্ব রয়েছে। প্রথমপর্ব হলো প্রাচীণকালে, বৌদ্ধ ধর্ম ক্ষেত্রে দু'দেশের আদানপ্রদান খুব ঘনিষ্ঠ। হিউএন সাঙ এই পর্বের অন্যতম পুরোধা। দ্বিতীয়পর্ব হলো বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে, দু'দেশের জনগণ স্বদেশের স্বাধিনতা অর্জনে পরস্পরকে সমর্থন করতেন। তৃতীয়পর্ব হলো দু'দেশ স্বাধিনতা পাওয়ার পর মিলিতভাবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ৫টি নীতি অনুসরণ করেছে।

    চীন ও ভারতের লোকসংখ্যা পৃথিবীর মোট লোকসংখ্যার ৪০শতাংশ। এবং এখন পৃথিবীতে এই দু'দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হার সবচেয়ে দ্রুত। ভারতের সফটওয়্যার শিল্প বিশ্ববিখ্যাত, এবং চীনের উত্পাদন শিল্প বিশ্বের প্রথম সারিতে দাঁড়িয়েছে। সিংগাপুরের মন্ত্রীসভার সিনিয়ার মন্ত্রী লি কুয়ান ইয়েও বলেছিলেন " চীন ও ভারত বিশ্বকে অবাক করবে।" নতুন শতাব্দীতে প্রাচ্যের এই দুটি বড় দেশ কিভাবে যৌথভাবে বিশ্বকে অবাক করবে, এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ওয়াং বলেছেন:

    "দু'দেশ শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকে তাকতে থাকলে চলবে না, বরং পারস্পরিক শিক্ষা ও সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতা দু'পক্ষের জন্য অনুকূল। দু'দেশ যদি সত্যিই উন্নত হয়, তাহলে বিশ্বের অর্ধেক অংশের অবস্থার পরিবর্তন হবে।"

    অধ্যাপক ওয়াংয়ের মতে, সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের ভিত্তি হলো অর্থনীতি। সাংস্কৃতিক সমঝোতা বাড়লে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ত্বরান্বিত হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশের আদানপ্রদান স্পষ্টভাবে জোরদার হয়েছে। চীনে আসা ভারতীয়দের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ভারতে যাওয়া চীনা মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। সমঝোতা বাড়লে মতভেদ কমবে। আমাদের আন্তরিক আশাআকাংখা, চীন তার ভারত উভয় দেশ প্রাচীন কাল থেকে বজায় রাখা বন্ধুত্বপূর্ণ আদানপ্রদান আরো উন্নত করবে। দু'দেশ হাতে হাত মিলিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে চলবে এবং উজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টি করবে।।