জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৬৯৬ নং প্রস্তাবে ইরানকে ৩১ আগস্টের আগে ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ মুলতবী রাখার অনুরোধ করা হয়েছিল ।বলা হয়েছিল নইলে ইরান শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা হতে পারে । আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার মহাসচিব আল বারাদেই ৩১ আগস্ট এই সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলো ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে দাখিল করা একটি রিপোর্টে বলেছেন , ইরান নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী চূড়ান্ত সময়সীমার আগে ইউরোনিয়ামের সমৃদ্ধকরন বন্ধ করে নি । ফলে ইরানের পরমাণু সমস্যা বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরেকবার মনোযোগ আকর্ষণ করছে ।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্ররাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ইরানের ওপর শাস্তি আরোপের বিষয়ে আলোচনা করেছে । মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রসচিব বানর্স্ বলেছেন , যদি ইরান ৩১ আগস্টের আগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মেনে চলতে অস্বীকার করে এবং ইরান অব্যাহতভাবে ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ চালাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা প্রমাণ করতে পারে , তাহলে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে ইরানের ওপর শাস্তি প্রয়োগের ব্যবস্থা নেবে ।
মার্কিন 'নিউইর্য়ক টাইমস্' পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে , যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্ত্য দেশগুলো ইরানের ওপর শাস্তি আরোপ বিষয়ক একটি কার্যক্রম প্রণয়ন করছে এবং তা সম্ভবতঃ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে অর্পণ করবে । যাতে ইরানের ওপর আন্তর্জাতিক শাস্তি প্রয়োগ করা যায় । শাস্তিমূলক ব্যবস্থাদি কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যাবে । এক, ইরানের পরমাণু সরঞ্জাম ও উপকরণের আমদানি সীমিত রাখা হবে; দুই, পরমাণু প্রকল্পগুলোতে নিয়োজিত ইরানী কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সীমাবদ্ধ ও বিদেশে ইরানের সম্পদ ফ্রিজ করা হবে এবং তিন, ইরানের বেসামরিক ফ্লাইটের সংখ্যা ও ইরানের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের ঋণদানের পরিমাণ সীমিত রাখা হবে ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন যে , ইরান শাস্তির শিকার হতে চায় না । কিন্তু ইরান সম্ভবতঃ ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণের ব্যাপারে তার কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারছে না । তবে ইরানের পরমাণু সমস্যায় আপোস করার সম্ভাবনা এখনো বিদ্যমান ।
প্রথমতঃ যদিও ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি কঠোর , কিন্তু তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সম্ভাবনা এখনো রয়েছে । ইরানের পরমাণু সমস্যা বিষয়ক বৈঠকের প্রধান কর্মকর্তা লারিজানি আগস্ট মাসের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র , রাশিয়া , চীন , ব্রিটেন , ফ্রান্স ও জার্মানীর কাছে পাঠানো একটি লিখিত জবাবে বলেছেন , ইরান ছ'টি দেশের সঙ্গে একাগ্রচিত্তে বৈঠক করতে চায় । গ্রীস সফররত ইরানের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কমিটির একজন উচ্চ পদরস্থ কর্মকর্তা ৩১ আগস্ট বলেছেন , ইরান যে কোনো একটি স্থানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমস্যা নিয়ে বৈঠক করার প্রস্তুতি নিচ্ছে । তিনি বলেছেন , প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে সঙ্গে ইরান সহযোগিতা বাছাই করবে । একই দিন জাপান সফররত ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীও অনুরুপ মতামত প্রকাশ করেছেন ।
দ্বিতীয়তঃ বিশ্ব সম্প্রদায় পরমাণু বিষয়ে ইরানের আপস-মীমাংসা ত্বরান্বিত করার অপেক্ষায় রয়েছে । আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা নিষ্পত্তির সম্ভাবনা থাকায় ই ইউসহ বিশ্ব সম্প্রদায় তাদের প্রচেষ্টা আনায়াসে পরিত্যাগ করতে পারবে না ।
তৃতীয়তঃ ইরানের পরমাণু বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের আলোচনার অবকাশ ও সময় এখনো আছে । জাতিসংঘের ১৬৯৬ নং প্রস্তাবে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে , ইরান সাময়িকভাবে ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ বন্ধ অস্বীকার করলেও ইরানের ওপর জাতিসংঘের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এখনই অবিলম্বে নেয়া যাবে না । নিরাপত্তা পরিষদে আরো আলোচনা করতে হবে ।
উল্লেখযোগ্য যে , শাস্তি প্রয়োগ করতে হলে ইরান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর স্বার্থও ক্ষুন্ন হবে ।
|